ঢাকা ০১:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রোহিঙ্গা নির্যাতন মিয়ানমার সেনাবাহিনী নির্দোষ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:০০:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর ২০১৭
  • ২৫১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের প্রেক্ষাপটে একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। ওই প্রতিবেদনে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।

কোনো রোহিঙ্গাকে হত্যা, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া, নারীদের ধর্ষণ বা লুটপাটের বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

জাতিসংঘ ইতোমধ্যে মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের ঘটনাকে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞের অন্যতম উদাহরণ’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।

বিবিসির সংবাদদাতাও ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেছেন কিভাবে জ্বালাওপোড়াও চলেছে।

তবে এগুলোর সঙ্গে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রতিবেদনের কোনো মিল নেই।

মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে মিয়ানমার সেনাবাহিনী নিজেদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ দূর করার চেষ্টা করছে।

রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী এমন অভিযোগের পর থেকে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা জাতিসংঘের তদন্ত কমিশনকে মিয়ানমারে প্রবেশ করে সঠিক তথ্য যাচাইয়ের দাবি জানিয়ে আসছিল।

কিন্তু রাখাইন রাজ্যে গণমাধ্যমের প্রবেশের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কড়া ব্যবস্থা রয়েছে।

কিছুদিন আগে সরকার তাদের নিয়ন্ত্রনে সাংবাদিকদের একটি দলকে রাখাইন সফরে নিয়েছিল এবং সে সফরে গিয়ে বিবিসির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের প্রতিনিধি জোনাথন হেড দেখেছেন রোহিঙ্গাদের কয়েকটি গ্রাম আগুনে পুড়ছে। রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে পুলিশের সঙ্গে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের পুরুষদেরও দেখতে পেয়েছেন তিনি।

চলতি বছরের ২৫ শে অগাস্টে রাখাইনে যে সহিংস পরিস্থিতি শুরু হয়, সেই পরিস্থিতি থেকে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে লাখ লাখ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ।

রাখাইনের কয়েকটি পুলিশ পোস্টে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর সন্ত্রাসীদের অতর্কিত হামলার পর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে তাদের অভিযান শুরু করে।

রাখাইন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা অভিযোগ করেন যে, স্থানীয় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজনের সহায়তায় মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী তাদের ওপর আক্রমণ করছে এবং সাধারণ মানুষ হত্যা করছে।

তবে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ফেসবুকে এক বিবৃতিতে জানায় , তারা হাজারখানেক গ্রামবাসীর সাক্ষাতকার নিয়েছে যারা এমন অভিযোগের কথা প্রত্যাখ্যান করেছেন। ওই পোস্টে সেনাবাহিনী জানিয়েছিল, গ্রামবাসী স্বীকার করেছে যে নিরাপত্তা বাহিনী-
– কোনো ‘নিরীহ গ্রামবাসীর ওপর গুলি চালায়নি’
– নারীদের ওপর ‘যৌন অত্যাচার বা ধর্ষণ করেনি’
– গ্রামের সাধারণ ‘বাসিন্দাদের গ্রেফতার, মারধর বা হত্যা করেনি’
– সাধারণ মানুষের বাড়ি থেকে স্বর্ণ বা রূপাসহ কোনো মূল্যবান সামগ্রী বা গবাদিপশু লুটপাট করেনি
– মসজিদে আগুন ধরিয়ে দেয়নি
– সাধারণ মানুষের বাড়ি পুড়িয়ে দেয়নি

ফেসবুক বিবৃতিতে সেনাবাহিনী আরো বলেছে, তাদের ভাষায় ‘বাঙ্গালি সন্ত্রাসীরা’ এসব ধ্বংসযজ্ঞের জন্য দায়ী এবং এসব সন্ত্রাসীদের ভয়ে লাখো মানুষ রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে।

সেনাবাহিনীর এ প্রতিবেদনের বিষয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এক মুখপাত্র বিবিসিকে বলেছেন, ‘এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে এটা পরিষ্কার যে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জবাবদিহি নিশ্চিত করার কোনো ইচ্ছা নেই’।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

রোহিঙ্গা নির্যাতন মিয়ানমার সেনাবাহিনী নির্দোষ

আপডেট টাইম : ০৪:০০:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের প্রেক্ষাপটে একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। ওই প্রতিবেদনে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।

কোনো রোহিঙ্গাকে হত্যা, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া, নারীদের ধর্ষণ বা লুটপাটের বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

জাতিসংঘ ইতোমধ্যে মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের ঘটনাকে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞের অন্যতম উদাহরণ’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।

বিবিসির সংবাদদাতাও ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেছেন কিভাবে জ্বালাওপোড়াও চলেছে।

তবে এগুলোর সঙ্গে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রতিবেদনের কোনো মিল নেই।

মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে মিয়ানমার সেনাবাহিনী নিজেদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ দূর করার চেষ্টা করছে।

রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী এমন অভিযোগের পর থেকে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা জাতিসংঘের তদন্ত কমিশনকে মিয়ানমারে প্রবেশ করে সঠিক তথ্য যাচাইয়ের দাবি জানিয়ে আসছিল।

কিন্তু রাখাইন রাজ্যে গণমাধ্যমের প্রবেশের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কড়া ব্যবস্থা রয়েছে।

কিছুদিন আগে সরকার তাদের নিয়ন্ত্রনে সাংবাদিকদের একটি দলকে রাখাইন সফরে নিয়েছিল এবং সে সফরে গিয়ে বিবিসির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের প্রতিনিধি জোনাথন হেড দেখেছেন রোহিঙ্গাদের কয়েকটি গ্রাম আগুনে পুড়ছে। রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে পুলিশের সঙ্গে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের পুরুষদেরও দেখতে পেয়েছেন তিনি।

চলতি বছরের ২৫ শে অগাস্টে রাখাইনে যে সহিংস পরিস্থিতি শুরু হয়, সেই পরিস্থিতি থেকে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে লাখ লাখ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ।

রাখাইনের কয়েকটি পুলিশ পোস্টে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর সন্ত্রাসীদের অতর্কিত হামলার পর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে তাদের অভিযান শুরু করে।

রাখাইন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা অভিযোগ করেন যে, স্থানীয় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজনের সহায়তায় মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী তাদের ওপর আক্রমণ করছে এবং সাধারণ মানুষ হত্যা করছে।

তবে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ফেসবুকে এক বিবৃতিতে জানায় , তারা হাজারখানেক গ্রামবাসীর সাক্ষাতকার নিয়েছে যারা এমন অভিযোগের কথা প্রত্যাখ্যান করেছেন। ওই পোস্টে সেনাবাহিনী জানিয়েছিল, গ্রামবাসী স্বীকার করেছে যে নিরাপত্তা বাহিনী-
– কোনো ‘নিরীহ গ্রামবাসীর ওপর গুলি চালায়নি’
– নারীদের ওপর ‘যৌন অত্যাচার বা ধর্ষণ করেনি’
– গ্রামের সাধারণ ‘বাসিন্দাদের গ্রেফতার, মারধর বা হত্যা করেনি’
– সাধারণ মানুষের বাড়ি থেকে স্বর্ণ বা রূপাসহ কোনো মূল্যবান সামগ্রী বা গবাদিপশু লুটপাট করেনি
– মসজিদে আগুন ধরিয়ে দেয়নি
– সাধারণ মানুষের বাড়ি পুড়িয়ে দেয়নি

ফেসবুক বিবৃতিতে সেনাবাহিনী আরো বলেছে, তাদের ভাষায় ‘বাঙ্গালি সন্ত্রাসীরা’ এসব ধ্বংসযজ্ঞের জন্য দায়ী এবং এসব সন্ত্রাসীদের ভয়ে লাখো মানুষ রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে।

সেনাবাহিনীর এ প্রতিবেদনের বিষয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এক মুখপাত্র বিবিসিকে বলেছেন, ‘এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে এটা পরিষ্কার যে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জবাবদিহি নিশ্চিত করার কোনো ইচ্ছা নেই’।