দেরিতে হোক আর দ্রুতই হোক কিছু ঘটনা ছাড়া প্রত্যেকেই চায় বিয়ের কাজটা সঠিক সময়েই সেরে ফেলতে। যখন আপনি দেখেন যে, আপনার কনিষ্ঠরাও বিয়ে করে ফেলছে। এ ক্ষেত্রে বয়স একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। বিশেষ করে অভিভাবকদের কাছে তাদের মেয়ের বয়সের বিষয়টি যথেষ্ট উদ্বিগ্নের কারণ হয়ে দেখা দেয়। মেয়েরা সব সময় ছেলের বয়স নিয়ে প্রশ্ন তুলে। বিয়ের পর কনেরা ছেলের সঠিক বয়স জানতে চায়।
তবে সময় পাল্টাচ্ছে। মানুষের প্রচলিত ধ্যান-ধারণায় আসছে পরিবর্তন। অনেকেই আছেন যারা দিব্যি কাটিয়ে দিচ্ছেন অবিবাহিত জীবন। এ নিয়ে তারা খুশিও। যদিও মেয়েদের ক্ষেত্রে কিছু বিপত্তি ঘটে। বিশেষ করে যখন কোনো মেয়ে বিশ অতিক্রম করে। নিজের অনীহা থাকলেও বাবা-মা চায় পাত্রস্থ করতে। পিছিয়ে থাকে না বন্ধুরাও। সুখের ফিরিস্তি তুলে ধরে তারা বিবাহিত জীবনের।
তবে একবার স্বাধীন জীবনের স্বাদ পাওয়া মেয়েদের কাছে এটি হয়ে ওঠে যথেষ্ট বিরক্তির কারণ। এ সময়ে তারা আসলে নিজের ক্যারিয়ার নিয়েই ভাবতে থাকে বেশি। কেউ কেউ আছেন ঠিক বিয়ের বিরোধী নন। হয়তো ঠিক পছন্দের মানুষটি এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে এ নিয়ে তড়িঘড়ির কিছু নেই। সময়মতো নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে। যদি নিতান্তই না পাওয়া যায় তবে ক্ষতি নেই, এ জন্য একাকী জীবনের প্রস্তুতিও তাদের থাকে।
তবে এ ক্ষেত্রে সমাজের রয়েছে একটি নিজস্ব পছন্দ-অপছন্দ। সমাজের অধিকাংশই এমন মানুষকে সুখী মনে করে যে বিবাহিত। সঠিক সময়ে বিয়ে না করলে তার দিকে থাকে বক্রদৃষ্টিও। ব্যত্যয় ঘটলে জন্ম দেয় নানা প্রশ্নের। কেননা একটি ছেলে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় যাই হোক- অবিবাহিত থাকলে বিশেষ সংকট তৈরি করে না।
কিন্তু একটি কুমারী নারীর নিজের বেলায় বেশ কিছু সংকট তৈরি করে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকে নানা অযাচিত উপদেশের জন্য কিছু মানুষকে প্রশ্রয় দিতে হয়। সম্ভবত এ ধারণার ডালপালা ছড়ায় তখনই, যখন তার বয়সের ধাপ অসহ্যভাবে উপরে উঠতে থাকে।
তবে নিজের সমস্যাও সত্যিকারভাবে কারও কারও ক্ষেত্রে প্রকট হয়। বিশেষ করে যে নারীরা সন্তানের জন্য ব্যাকুল থাকেন। চিকিৎসকরা বলেন, বয়স পঁয়ত্রিশ পেরোলে যে নারীরা সন্তান নিতে আগ্রহী হন তাদের জন্মদান সংক্রান্ত অস্বাভাবিকতার মুখোমুখি হতে হয়। শরীর বা মনের এই অস্বাভাবিকতার প্রভাব পড়ে তাদের সন্তানদের ওপর। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে সহজ ডেলিভারির সম্ভাবনা হ্রাস পায়।
কারও কারও ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কিছুও ঘটে যায়। বিয়ের স্বাভাবিক বয়স অতিক্রম করার পরও কেউ কেউ পেয়ে যান তাদের পছন্দের পাত্রটিকে। যদিও কিছুটা দেরিতে এবং তারা জন্মদান সংক্রান্ত জটিলতা অতিক্রমের ক্ষেত্রেও সফল হয়ে যান। এ রকম একজন নারী তার নিজের কথা বলছিলেন।
এক চিকিৎসক বলেন, পঁয়ত্রিশ বছর বয়সের পরে বিয়ে করেন তিনি। এখন তার তিন বছরের একটি মেয়ে। তিনি বলেন, দেরিতে বিয়ে করার এটি ছিল একমাত্র অপূর্ণতা যে আমি দেরিতে মাতৃত্বের স্বাদ পেয়েছি। তবে সিদ্ধান্তটি ছিল একেবারেই সচেতনভাবেই। কেউ যদি এ সংক্রান্ত কোন চ্যালেঞ্জ নিতে চান তবে তাকে পুরোপুরি প্রস্তুত হতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ থেকে দূরে থাকতে হবে।
তিনি বলেন, দীর্ঘ নয় বছরের পড়াশুনার কাজে ব্যস্ত থাকাকালে তার বাবা-মা বুঝতে পারেন তার মানসিক অবস্থা। এ সময় বিয়ে সংক্রান্ত কথাবার্তা থেকে বিরত থাকতেন তারা। যখন তিনি পড়াশুনা শেষ করে ফিরে আসেন তখনই তার বাবা-মা এ বিষয়ে কথা বলেন।
তিনি বলেন, তবে সব কিছু্রই একটি নিজস্ব সময় আছে। তবে আমার ক্ষেত্রে আমি যখন একা ছিলাম কিংবা হোস্টেলে বন্ধুদের সঙ্গে, আমি সমাজ জীবনের এ বিষয়টি সবার সঙ্গে শেয়ার করতাম। আজ আমি বাড়িতে থাকি। মেয়েকে পুরোপুরি সময় দিই। আমার মনেই হয়না আমি কোন কিছু মিস করেছি।
পরিবারের সদস্যরা এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গী কতটুকু পোষণ করেন কিংবা কীভাবে পোষণ করেন- তার মানদণ্ড বিচার করা কঠিন। তবে একটি কথা ঠিক যে, সমাজে বিদ্যমান বাস্তবতায় এমন নারী-পুরুষের সংখ্যা যথেষ্ট। প্রতিনিয়ত নানা প্রতিকূলতার বিপক্ষে সংগ্রাম করছেন তারা। সুতরাং সময় হয়েছে তাদের বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের।