ফেসবুকে স্ট্যাটাসের জেরে রংপুরে পুলিশ-গ্রামবাসীর সংঘর্ষে নিহত ২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগকে কেন্দ্র করে রংপুরে পুলিশ ও গ্রামবাসীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনায় দুইজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৩০ জন।শুক্রবার সদর উপজেলার পাগলাপীর শলেয়াশাহ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

এ সময় বিক্ষোভকারীরা হামলা চালিয়ে ঠাকুরপাড়ার হিন্দু সম্প্রদায়ের ৮টি বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শতাধিক রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও ৩০ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে। পুলিশ ওই এলাকা ঘিরে রেখেছে।

পুলিশ ও গ্রামবাসী সূত্র জানায়, পাগলাপীর শলেয়াশাহ এলাকার খগেন চন্দ্র রায়ের ছেলে টিটুল চন্দ্র রায় (৪০) গত ৫ নভেম্বর ফেসবুকে ওই ‘আপত্তিকর স্ট্যাটাসটি’ দেয়।

পুলিশ বিষয়টি নজরে নিয়ে গত ৬ নভেম্বর একটি মামলা গ্রহণ করে নারায়নগঞ্জের ফতুল্লায় টিটুল চন্দ্র রায়কে গ্রেফতারের জন্য অভিযান চালায়। কিন্তু টিটুল বিষয়টি আগাম বুঝতে পেরে পালিয়ে যায়।

বিষয়টি নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা চলতে থাকে। তবে তিন দিন ধরে পুলিশের পক্ষ থেকে এ নিয়ে উসকানি না দেয়ার জন্য প্রচারনা চালানো হয়।

শুক্রবার জুম্মার নামাজ শেষে এলাকার বিভিন্ন মসজিদের মুসল্লিরা সমবেত  হন। ঠাকুরপাড়া মহল্লার পার্শ্ববর্তী আটটি গ্রামের প্রায় ১০ হাজারের অধিক মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দেন।

এক পর্যায়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে ঠাকুরপাড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় খগেন চন্দ্র রায়, খিরোদ চন্দ্র রায়, সুধির চন্দ্র রায়, অমূল্য রায়, বিধান রায়, বিপুল রায়, কৌশল্লা, সুধিন মহন্তের বাড়িতে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

পরে বিক্ষোভকারীরা রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়ক প্রায় এক কিলোমিটারজুড়ে দখল করে অবস্থান নেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে তারা পুলিশের ওপর দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়।

পুলিশ এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অর্ধশতাধিক টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও ৩০ রাউন্ড রাবার বুলেট ছোঁড়ে। ওই সংঘর্ষের সময় হাবিবুর রহমান (২৬) ও সিএনজি চালক হামিদুল ইসলাম (৩০) গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। পুলিশসহ ৩০ জন আহত হয়েছেন।

আহতদের মধ্যে জাহাঙ্গীর হোসেন (২৫), মাহবুল ইসলাম (৩০), রিপন ইসলাম (২৫), আমিনুল ইসলাম (৩৫), শাহজাহান মিয়াসহ (৪৫) ছয়জনের নাম জানা গেছে। বাকিরা পুলিশের গ্রেফতার এড়াতে গোপনে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে রংপুর পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবিএম জাকির হোসেন বলেন, তারা এ ঘটনা নিয়ে কয়েকদিন ধরে এলাকার লোকজনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তারা এ নিয়ে দায়েরকৃত মামলার আসামিকে গ্রেফতারের জন্য চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এমনকি আসামিকে গ্রেফতারের জন্য নারায়নগঞ্জের ফতুল্লায় পুলিশ অভিযান চালিয়েও অভিযুক্ত টিটুল চন্দ্র রায়কে পাওয়া যায়নি।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবিএম জাকির হোসেন বলেন, ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশের সাতজন সদস্য আহত হয়েছেন। তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে পুরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর