হাওর বার্তা ডেস্কঃ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরব হয়ে উঠছে কিশোরগঞ্জ-৫ আসন তথা নিকলী-বাজিতপুর উপজেলা। এই দুই উপজেলায় বইতে শুরু করেছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হাওয়া। মনোনয়ন ও প্রার্থীদের নিয়ে চলছে নানামুখী আলোচনা। এ এলাকার ভোটারগণ বলছেন, স্বাধীতার পর থেকে অদ্যাবধি একবার নিকলীর মরহুম আমির উদ্দিন এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া বাকি সবকটি নির্বাচনে বাজিতপুর থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিকলী উপজেলাবাসীর দাবি, নিকলীতে বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনয়ন দেয়া হোক। এ আসনটি এখনো মন্ত্রিত্বের স্বাদ গ্রহণ করেনি, যার দরুণ কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হয়নি বলে এ আসনের ভোটাররা মনে করেন। এ ছাড়া মাঠে নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে ভোটারদের মাঝে সংশয় ও নানামুখী প্রশ্নের সমালোচনা রয়েছে। রোহিঙ্গা ইসুতে নির্বাচনী ইমেজ কিছুটা ভাটা পড়লেও তা আবার ধীরে ধীরে জমে উঠছে। বড় দুই দল বিএনপি-আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা তাদের নিজেদের প্রার্থীর পক্ষে এলাকায় প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়াও নীরবে কর্মী এবং সাধারণ মানুষের সাথে যোগাযোগ করে চলেছে বিএনপির শরীক দল মুসলিম লীগ, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ জাতীয় দল ও জামায়াতে ইসলামী। এ আসনটি মূলত বিএনপির ছিল। স্বাধীনতার পর এ আসনে পাঁচবার বিএনপি, দুইবার আওয়ামী লীগ, একবার মুসলিম লীগ ও একবার জাসদ প্রার্থী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ইতোমধ্যে দুই উপজেলার হাটে-মাঠে, রাস্তার মোড়ে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিসপাড়া, নৌ-ঘাট, যানবাহন ও চা-স্টলে চলছে নির্বাচনী আলোচনা। কে কোন দলের প্রার্থী, কে পেতে পারেন দলীয় প্রতীক এ নিয়ে প্রতিনিয়ত ব্যাপক আলোচনা চলেছে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, এবার আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুই দলেই রয়েছে একাধিক তরুণ উচ্চশিক্ষিত প্রার্থী। দলীয় মনোনয়নের জন্য প্রার্থীরা কেন্দ্রে দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। দুই দলেই রয়েছে গ্রপিং-লবিং।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে দুটি অংশে বিভক্ত দলটি। বড় একটি গ্রপের নেতৃত্বে আছেন আওয়ামী লীগের দলীয় সংসদ সদস্য আলহাজ মো. আফজাল হোসেন, যিনি এলাকায় অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করে নেতাকর্মীদের আস্থা অর্জন করেছেন। অপর অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অজয় কর খোকন।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, তাদের মধ্যেও রয়েছে নেতৃত্ব নিয়ে নানা মতবিরোধ। তা ছাড়া দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকায় দলের নেতাকর্মীরা অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। অন্যদিকে দলটির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধের বোঝা মাথায় নিয়ে হাঁটতে হচ্ছে। একপক্ষের নেতা উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট বদরুল মোমেন মিঠু। অপর অংশের নেতৃত্বে আছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক কারানির্যাতিত বর্ষিয়ান ছাত্রনেতা শফিকুল আলম রাজন, যিনি সপ্রতি বারবার বিভিন্ন পত্রিকার শিরোনাম হয়েছেন। নিকলী-বাজিতপুর আসনে সাবেক ছাত্রনেতাদের মনোনয়নের তালিকায় আছেন রাজন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির বেশ ক’জন নেতা জানান, রাজন এলাকায় দীর্ঘদিন নীরবে কাজ করে যাচ্ছেন। যে কোনো দুর্যোগে মানুষের পাশে থাকেন, বন্যা দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ, শীতকালে শীতবস্ত্র, দুই ঈদে গরিব ও হত-দরিদ্রদের মাঝে নতুন কাপড় ও নগদ অর্থ বিতরণ করে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছেন। এ ছাড়া অন্যান্যের মধ্যে প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ বিএনপির শরিক দল বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সভাপতি এইচ এম কামরুজ্জামান খান খসরু, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি সালেহুজ্জামান খান (রনু), বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শেখ মজিবুর রহমান (ইকবাল), সাবেক জিএস ও জেলা বিএনপির সদস্য কারানির্যাতিত সৈনিক বদরুল আলম (শিপু), বাংলাদেশ জাতীয় দলের সভাপতি সৈয়দ এহসানুল হক, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন কাসেমী, জেলা কৃষক লীগের সহ-সভাপতি ফারুক আহম্মেদ, জামায়াতে ইসলামীর অধ্যক্ষ রমজান আলী প্রমুখ।
প্রার্থীদের বিষয়ে এ আসনের সাধারণ মানুষ হাওর বার্তাকে জানান, এ যাবত যারা কিশোরগঞ্জ-৫ আসন (নিকলী-বাজিতপুর) থেকে এমপি হয়েছেন, তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকায় সংসদে দাঁড়িয়ে এলাকার উন্নয়নের দাবি উপস্থাপনে ব্যর্থ হয়েছেন।
তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কাজে আমাদের নিকলীবাসীর প্রাণের দাবি, বঞ্চিত হাওর এলাকার মানুষের উন্নয়নের লক্ষ্যে একজন শিক্ষিত আদর্শ রাজনীতিবিদের হাতে দলীয় প্রতীক তুলে দেবেন। যাতে হাওর এলাকার উন্নয়নমূলক কাজে ভ‚মিকা রাখতে পারেন।
মো. হেলাল উদ্দিন