হাওর বার্তা ডেস্কঃ আগামী ৩০ নভেম্বর আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের চীনে যাওয়ার কথা রয়েছে। চীনের প্রেসিডেন্ট এবং দেশটির কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক শি জিনপিং পুনরায় চীনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে চীনের মনোভাব বুঝতে এ সফরকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো। এ কারণে এ সফরের বিষয়ে দলগুলো অনেকটা গোপনীয়তা বজায় রাখছে।
আওয়ামী লীগ তাদের তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল ঠিক করেছে। প্রতিনিধি দলে রয়েছেন- আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান অ্যাম্বাসাডর মোহাম্মদ জমির ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। এ দলে যুক্ত হতে পারেন কেন্দ্রীয় সদস্য নুরুল মজিদ হুমায়ূন।
আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের সূত্রগুলো জানায়, ঐতিহাসিকভাবে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক সুখকর ছিল না। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের সময়ও চীন বাংলাদেশের পাশে ছিল না। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের সঙ্গে এশিয়ার অন্যতম পরাশক্তি চীনের সম্পর্ক জোরদার হয়েছে। বিশেষ করে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দলটির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম চীনের কমিউনিস্ট পার্টি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে তাৎপর্যপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করেন। তারই ধারাবাহিকতায় চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং গত বছর বাংলাদেশ সফরে এসে প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তি করে যান, যা এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য বিদেশ থেকে পাওয়া সর্বোচ্চ ঋণ।
দলটির নেতারা আরো জানান, আওয়ামী লীগের সঙ্গে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সম্পর্ক এখনো শক্তিশালী। তবে সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীনের ভূমিকা কিছুটা নীরব বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, একমাত্র চীনের হস্তক্ষেপেই রোহিঙ্গা সমস্যার ফলপ্রসূ সমাধান হতে পারে। এজন্য চীনের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্কোন্নয়নের বিকল্প নেই। তাই আগামী ৩০ নভেম্বর বেইজিংয়ের অনুষ্ঠানটিকে খুবই গুরুত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। সেখানে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ দেশের বেশ কয়েকটি বাম সংগঠনের নেতাদেরও উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের সদস্য দলের প্রভাবশালী সাংগঠনিক সম্পাদক হাওর বার্তাকে বলেন, শি জিনপিংয়ের আমন্ত্রণে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি হিসেবে আমাদের দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের বেইজিং পাঠাচ্ছেন। দলের প্রতিনিধি হিসেবে আমরা শি জিনপিংয়ের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করব। দলের পক্ষ থেকে পুনর্নির্বাচিত হওয়ায় জিনপিংকে অভিনন্দন জানাব। রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনার সম্ভাবনা আছে কী না ? এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা শি জিনপিংয়ের অতিথি হিসেবে বেইজিং যাচ্ছি। আমাদের পারস্পরিক আলোচনার সময় রোহিঙ্গাদের বিষয়টি স্থান পেলে অবশ্যই আমরা বন্ধুপ্রতিম দেশ হিসেবে চীনকে এই সংকট মোকাবিলায় পাশে চাইব।
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ বলেন, চীনের প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণে আওয়ামী লীগের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল আগামী ৩০ নভেম্বর বেইজিংয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাবেন। প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশ ও চীন তথা আওয়ামী লীগ ও কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যকার সম্পর্ক আরো মজবুত করবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপির একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলও চীন সফরে যাচ্ছে একই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। দলটির নেতৃত্বে থাকবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বাকি প্রতিনিধি দল চূড়ান্ত করতে দলটি বেশ গোপনীয়তা বজায় রাখছে।
এদিকে এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির প্রতিনিধি দলেরও যাওয়ার কথা রয়েছে। তবে সেটি দলের কোনো সূত্র নিশ্চিত করতে পারেনি।