হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাজধানীতে অল্প বৃষ্টিতেই পানি জমে যাওয়া বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের সমস্যা। পানি নিষ্কাশনের সঙ্গে নানাভাবে জড়িত ৬টি সংস্থা একে অপরের ওপর দায়ও চাপাচ্ছে দীর্ঘদিন।
তবে সম্প্রতি জলাবদ্ধতা নিরসনে আইনের সংস্কার করা হচ্ছে। ফলে যেকোনো একটি সংস্থার মালিকানায় বা অধীনে চলে যাবে রাজধানীর সব ড্রেন।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, ঢাকা ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ড, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ পানি নিষ্কাশনের সঙ্গে জড়িত। ঢাকায় প্রায় ২৪০০ কিলোমিটার ড্রেন রয়েছে। এরমধ্যে দুই সিটি করপোরেশনের দুই হাজারের মতো এবং ওয়াসার ৪০০ কিলোমিটারের মতো।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) আইন ২০০০ (২০০০ সালের ২৬ নম্বর আইন)-এর ৬(ক) ধারায় নদী ও নদী অববাহিকা নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি নিষ্কাশন, সেচ ও খরা প্রতিরোধের লক্ষ্যে জলাধার, ব্যারাজ, বাঁধ, রেগুলেটর বা অন্য যেকোনো অবকাঠামো নির্মাণের দায়িত্ব পাউবোর। এছাড়া সেনানিবাস এলাকায় ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এবং বিভিন্ন স্থানে রাজউকও ড্রেনের কাজের সঙ্গে জড়িত।
মাত্র ৩০-৪০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেই রাজধানীতে পানি জমে যায়। এর অন্যতম কারণ পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকা। আর জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হলেই সিটি করপোরেশন ও ওয়াসা একে অপরের ওপর দায় চাপায়। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানগুলোর একাধিক সমন্বয় সভায় এ নিয়ে বেশ কথা কাটাকাটিও হয়।
পরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে ৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে দেয়। কমিটি একটি প্রতিবেদন দেবে। যেখানে বেশকিছু সুপারিশ থাকবে। সুপারিশ পর্যালোচনার ভিত্তিতে আইনের সংস্কার হবে এবং ড্রেনের দায়িত্ব এক সংস্থার ওপর দেবে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাসরিন আখতারকে আহ্বায়ক করে ৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি হয়েছে। এ কমিটিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী খান মোহাম্মদ বিল্লাল, উত্তরের মেজবাউল ইসলাম, ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাসকিন এ খান ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহবুব হোসেন (নগর উন্নয়ন) রয়েছেন। এছাড়াও চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জের সংশ্লিষ্টরা আছেন।
সূত্র মতে, ড্রেনের দায়িত্ব পাবে সিটি করপোরেশন। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও পেতে পারে। তবে সে সম্ভাবনা কম। কিন্তু যেই পাক বাকি সংস্থাগুলোরও আইনিভাবে অধিকার থাকে। তাই বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে অর্থাৎ এক সংস্থার অধীনে দিতে আইনি বাধাগুলো কীভাবে কাটা যাবে কমিটি সে বিষয়েই প্রতিবেদন দেবে।
পানি নিষ্কাশনের বিষয়ে সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, বৃষ্টির পানি ড্রেন আউট করার দায়িত্ব ওয়াসার। আমাদের নয়। তবুও আমরা ওয়াসাকে সহায়তা করছি।
ঢাকা ওয়াসার এক কর্মকর্তা বলেন, ২০১৫ সালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দেয়া হয়েছিল। যেখানে ওয়াসা ড্রেনের দায়িত্ব ছাড়ার কথা বলেছে। এ বিষয়ে মন্ত্রীও একমত। তবে কীভাবে এ দায়িত্ব হস্তান্তর হবে সে বিষয় এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
ডিএসসিসি’র প্রধান প্রকৌশলী ফরাজী শাহাবুদ্দিন আহমেদ হাওর বার্তাকে বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে ওয়াসা নাকি সিটি করপোরেশন কাজ করবে কিংবা কে কতটুকু করবে, সে বিষয়টি নির্ধারণে আইন সংশোধন করা হবে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে আইন সংশোধনের একটি প্রস্তাব নেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে একটি কমিটি রয়েছে। তাদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক যেকোনো এক সংস্থা কাজ করবে।
এই কমিটির এক সদস্য বলেন, আগামী বর্ষায় যেন জলাবদ্ধতার সমস্যা না হয় সে কারণে দ্রুতই কাজ শুরু করতে হবে। একটি সুপারিশমালা তৈরি হয়েছে। তবে তা খসড়া। এখনো বেশ আলোচনা বাকি।
এ বিষয়টি কবে চূড়ান্ত হবে এমন এক প্রশ্নের জবাবে কমিটির ওই সদস্য বলেন, যেহেতু আগামী মৌসুমে জলাবদ্ধতা কম হওয়ার প্রতিশ্রুতি জনপ্রতিনিধিরা করেছেন, সেহেতু আগামী বছরের শুরু থেকেই কাজ করতে হবে। আর কাজ শুরু করতে হলে, যেকোনো একজনের ওপর দায়িত্ব দিতে হবে। তাই কে দয়িত্ব পাবে সে বিষয়টি ডিসেম্বরের মধ্যেই চূড়ান্ত হতে পারে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, কমিটিকে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু বিষয়টি জটিল হওয়ায় কমিটি নির্দিষ্ট সময়ে এটি দিতে পারেনি। তবে প্রতিবেদন বা সুপারিশমালা প্রস্তুত করা হয়েছে বলেও জানায় সূত্র।