মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ১৯৭১-এর স্বাধীনতার যুদ্ধে ভারত সহযোগিতা করলেও এটাকে ‘পাক-ভারত যুদ্ধ’ বলা যাবে না। কেউ বললে তা হবে চরম মিথ্যাচার।
শুক্রবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে বাংলাদেশের ইতিহাস নিয়ে ফেইসবুক পেইজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মোজাম্মেল হক বলেন, ‘একাত্তরে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের যে যুদ্ধ হয়েছে এতে ভারত আমাদের সার্বিক সহযোগিতা করেছে- তা অস্বীকার করার কিছু্ নেই। কিন্তু তাই বলে এ যুদ্ধকে পাক-ভারত যুদ্ধ বলা যাবে না।’
এ সময় ১৯৩৭ সালের অবিভক্ত বাংলার নির্বাচন থেকে শুরু করে ধাপে ধাপে ৪৭ এর দেশভাগ, ৫২-র ভাষা আন্দোলন, ৫৪-র নির্বাচন ও ৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বাংলা ও ইংরেজিতে তুলে ধরতে যুক্তরাজ্য প্রবাসী প্রকৌশলী সৈয়দ মনোয়ার রেশাদের উদ্যেগে একটি ফেইসবুক পেইজ উদ্বোধন করা হয়।
অনুষ্ঠানে, বিশ্বের অনেক জার্নাল ও বিভিন্ন মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে ‘ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে- এমন বক্তব্য উত্থাপিত হলে মন্ত্রী বলেন, ‘এটা চরম মিথ্যাচার। বিষয়টি আমি আগে জানতাম না। আমি নোট নিচ্ছি, তা খতিয়ে দেখবো।’
আ ক ম মোজাম্মেল হক আরো বলেন, ‘স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখা থেকে শুরু করে, তার বাস্তবায়ন একজন ব্যক্তিই করতে পেরেছেন, তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।’
বঙ্গবন্ধু ২৩ বছরে পর্যায়ক্রমে স্বাধীনতার জন্য জাতিকে প্রস্তুত করেছেন- উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘১৯৪৭ সালে পাক-ভারত আলাদা হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই তৎকালীন জাতীয় নেতারা বুঝতে পারেন যে, ব্রিটিশ শোষণের পর পাঞ্জাবী শোষণের মুখোমুখি হয়েছে জাতি। এ জন্য ১৯৫২ সালে বঙ্গবন্ধু কারাগারে বসে কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। এরপর পর্যায়ক্রমে ৫৪-র নির্বাচন, ৬৬ সালের ছয় দফা কর্মসূচি দিয়ে জাতিকে স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত করেন তিনি। এরপর একাত্তরে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি জাতি বিজয় অর্জন করে- যা ইতিহাসে বিরল।’
মন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এই সফল নেতাকে যারা হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছে তারা এখনও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। ডালিম তো শুধু হুকুম পালন করেছে। কিন্তু তাকে হত্যার জন্য যারা নির্দেশ দিয়েছিল তারা রয়ে গেছে আড়ালে। সেই দিন ভোররাত পর্যন্ত ঢাকায় কোন দূতাবাসের লাইট জ্বলেছে, তা সবাই জানে। কারা সপ্তম নৌ-বহর পাঠিয়েছিল তা-ও সবাই জানে।’
তিনি এও বলেন, স্বাধীনতার ৪০ বছর পর হুকুম পালনকারীদের বিচার হলেও হুকুমদাতাদের বিচার এখনো হয়নি। ইতিহাস চরম নির্মম। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। সঠিক ইতিহাস একদিন প্রকাশ পাবেই।’
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. জুলফিকার আলী লেলিন, প্যানাশিয়া গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী আনিসুল মুকিত প্রমুখ।