হাওর বার্তা ডেস্কঃ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিয়েই ফিরিয়ে নিতে হবে। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক প্রধান ফিলিপো গ্র্যান্ডি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে মিয়ানমারের প্রতি এমন আহ্বান জানিয়েছেন।
রাখাইনে সেনাবাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতনের কারণে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে রোহিঙ্গারা। গ্র্যান্ডি বলেন, এই মানুষগুলো রাষ্ট্রহীন অবস্থায় থাকতে পারে না। কারণ রাষ্ট্রহীনতার কারণে তারা বৈষম্য এবং অপব্যবহারের শিকার হবে। অতীতেও এমন ঘটনা ঘটেছে।
গত আগস্টের পর ৬ লাখের বেশি রোহিঙ্গা রাখাইন ছেড়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। রাখাইনে সেনাবাহিনীর অত্যাচার নির্যাতনকে জাতিগত নিধন বলে উল্লেখ করেছে জাতিসংঘ। এমন পরিস্থিতিকে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুতর শরণার্থী সংকট বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও পুলিশের বেশ কিছু তল্লাশি চৌকিতে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাখাইনে অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী। অভিযানের নামে সেখানে তাণ্ডব চালায় সেনারা। রাখাইনের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা, তাদের বাড়ি-ঘর আগুন দিয়ে পোড়ানো হয় এবং নারীদের ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়।
নিরাপত্তা পরিষদে গ্র্যান্ডি বলেনম এসব লোকদের ফিরে যাওয়া এবং তাদের সেখানে থাকাটা স্থায়ী করতে তাদের অবশ্যই নাগরিকত্ব দিতে হবে। নাগরিকত্ব না পেলে তাদের ফিরে যাওয়া স্থায়ী হবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
কয়েক দশক ধরেই মিয়ানমারে বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছেন রোহিঙ্গারা। সেখানে তাদের কোনো নাগরিকত্ব নেই। রোহিঙ্গাদের অবৈধ বাঙালী বলে সম্বোধন করে মিয়ানমারের লোকজন।
এদিকে, রোহিঙ্গা নিপীড়নের ঘটনায় বিশ্বজুড়ে নিন্দা-সমালোচনার মুখে বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো সংঘাতপূর্ণ এলাকা পরিদর্শনে গেছেন শান্তিতে নোবেল জয়ী নেত্রী অং সান সু চি। রাখাইনে সফর করলেও মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে সুর মিলিয়ে সু চি দাবি করেছেন, ওই এলাকাগুলোতে মানুষ সংঘাতে লিপ্ত হয়নি।
গ্র্যান্ডি বলেন, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়া ছাড়াও দেশটির সবচেয়ে দরিদ্র এলাকা রাখাইনের উন্নয়নেও মিয়ানমারকে রাজি হতে হবে।
এই সহিংসতা বন্ধ করতে হবে এবং সেখানে মানবিক সাহায্য সংস্থাগুলোকে প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে। কারণ সহিংসতার কারণে ওই এলাকার বহু মানুষ মানবিক সংকটের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
এদিকে, নতুন করে রাখাইনে খাবার সরবরাহ শুরু করতে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির সঙ্গে আলোচনা করেছে মিয়ানমার। গ্র্যান্ডি বলেছেন, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে মিয়ানমার।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন ঘোষণা করেছেন, সামনের সপ্তাহে মিয়ানমারে সফর করবেন তিনি। রোহিঙ্গা সংকটকে কেন্দ্র করে কোনো মার্কিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার এটাই প্রথম সফর।