ঢাকা ০১:৫৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আওয়ামী লীগের দুই ভাইকে ছাড় দেবে না বিএনপি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৫৯:৩৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ অক্টোবর ২০১৭
  • ২৩৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশের অন্যতম বৃহত্তম উপজেলা মনিরামপুরের ১৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে যশোর-৫ আসন গঠিত। দলীয় কোন্দলে জর্জরিত আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ৯ জন ও বিএনপির পাঁচজন প্রার্থী মাঠে তৎপর রয়েছেন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এবং জামায়াতের নেতারাও জোটের শরিক হিসেবে প্রার্থী হতে চান। আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মধ্যে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট পিযুষ কান্তি ভট্টাচার্য্য ও বর্তমান এমপি স্বপন ভট্টাচার্য্য হচ্ছেন দুই সহোদর।

তারা দু’জনই মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে নানা কায়দায় এলাকায় নিজেদের প্রার্থিতা জানান দিচ্ছেন। বসে নেই আওয়ামী লীগের টিকিটে নির্বাচন করতে আগ্রহী বাকিরাও। গত নির্বাচনে মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ভোটে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের স্বপন ভট্টাচার্য্য বিজয়ী হন। এবার মনোনয়ন নিয়ে কোন্দল প্রকাশ্যে রূপ নেয়ার শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে হামলা-মামলায় জর্জরিত বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক কাটেনি এখনও। তবে নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় নেতাকর্মীদের ভোটের মাঠে তৎপর দেখা যাচ্ছে। আন্দোলন সংগ্রামে সামনে থাকা বিএনপি এবার আসনটি জোটের শরিকদের ছাড় দিতে নারাজ। এরই মধ্যে বিএনপির অন্তত পাঁচজন প্রার্থী আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের প্রতীক নিয়ে লড়তে চান। তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত তারা দৌড়ঝাঁপ করছেন। বিএনপি অনড় অবস্থানের পরও জোটের শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও জামায়াতে ইসলামী আসন ছাড়তে নারাজ। ফলে জোটের হিসাব-নিকাশে নির্ধারিত হবে বিএনপির ভাগ্য।

বিগত ১০টি সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চারবার ও দলের বিদ্রোহী প্রার্থী একবার এবং বাকি পাঁচবার বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৭৩ সালে প্রথম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পিযুষ কান্তি ভট্টাচার্য্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে বিএনপির আফসার আহমেদ সিদ্দিকী, ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাস নির্বাচিত হন।

১৯৯১ সালে পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের খান টিপু সুলতান নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির আফসার আহমেদ সিদ্দিকী ও ’৯৬ এর ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের খান টিপু সুলতান নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে অষ্টম সংসদ নির্বাচনে জোটের শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মুফতি ওয়াক্কাস এমপি হন। ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের খান টিপু সুলতান ও ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী স্বপন ভট্টাচার্য্য নির্বাচিত হন।

গত সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগে মনোনয়ন দ্বন্দ্বে দলীয় বিভেদ প্রকাশ্য রূপ নেয়। আওয়ামী লীগের প্রার্থী টিপু সুলতানকে চ্যালেঞ্জ করে প্রার্থী হন স্বপন ভট্টাচার্য্য। নির্বাচিতও হন তিনি। একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বর্তমান এমপির ভাই অ্যাডভোকেট পিযুষ কান্তি ভট্টাচার্য্য মনোনয়নের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন তলে তলে। ১৯৭৩ সালে প্রথম সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছিলেন। তবে তাকে ছাড় দিতে নারাজ ছোট ভাই বর্তমান এমপি স্বপন ভট্টাচার্য্য। গত সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছেন।

এবার নৌকা নিয়ে লড়তে চান তিনি। তবে এই দুই সহোদরের বাইরে আওয়ামী লীগের আরও অন্তত সাতজন প্রার্থী রয়েছেন। তারা হলেন- জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন, জেলা আওয়ামী লীগের, ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা শিল্পপতি কামরুল হাসান বারী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পৌর মেয়র কাজী মাহমুদুল হাসান, জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য উপজেলা চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন লাভলু, অবসরপ্রাপ্ত কাস্টমস কর্মকর্তা মুক্তিযোদ্ধা ইউনুস আকবর, সাবেক এমপি খান টিপু সুলতানের সহধর্মিণী ডা. জেসমিন আরা বেগম। এ ছাড়াও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) কোষাধ্যক্ষ ও বাসসের বিশেষ প্রতিনিধি মধুসূদন মণ্ডলও প্রার্থী হতে চান।

নির্বাচন নিয়ে কথা হয় অ্যাডভোকেট পিযুষ কান্তি ভট্টাচার্য্যরে সঙ্গে। তিনি হাওর বার্তাকে বলেন, দেশের সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য করে যে সম্মান দেখিয়েছেন তাতে তিনি চিরকৃতজ্ঞ। তিনি বলেন, ‘নেত্রী মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করতে প্রস্তুত আছি।’ বর্তমান এমপি স্বপন ভট্টাচার্য্য বলেন, ‘গত সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছি। এ জন্য দীর্ঘদিন দলের বাইরে ছিলাম। সম্প্রতি দলীয় এমপির স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। এজন্য আগামী নির্বাচনে দলীয় টিকিটের ব্যাপারে আশাবাদী।’

জানতে চাইলে আবদুল মজিদ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে দলীয় কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছি। দলের দুর্দিনেও এলাকার নেতাকর্মীদের পাশে থেকেছি। দলীয় হাইকমান্ড এসব বিবেচনা করে মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করতে প্রস্তুত আছি।’ আগামী নির্বাচনী ভাবনা নিয়ে জানতে চাইলে কাজী মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘২০০৬ সালের ২২ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে নৌকার টিকিট পেয়েছিলাম। কিন্তু সেনাসমর্থিত সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে মনোয়নবঞ্চিত হই। আগামী সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পাব বলে আশাবাদী।’

এদিকে, হামলা-মামলায় জর্জরিত বিএনপি নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় এবার দলীয় প্রার্থীর মনোনয়ন নিশ্চিত করতে চায়। দলের অন্তত পাঁচজন প্রার্থী মনোনয়নের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন। তবে জোটের শরিক হিসেবে জামায়াতে ইসলামী ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ভাগ বসাতে চায় এ আসনে। যেকোনো মূল্যে তারা নির্বাচন করতে চায়। তবে বিএনপির হাইকমান্ড কী সিদ্ধান্ত নেয় তা জানতে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হচ্ছে। এ আসনে প্রার্থী হিসেবে মাঠে তৎপর রয়েছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি শহীদ ইকবাল হোসেন, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মোহাম্মদ মুছা, ছাত্রদলের সাবেক জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতা ইফতেখার সেলিম অগ্নি।

জিয়া পরিষদের বর্তমান সহকারী মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার মো. শরীফুজ্জামান খান শরীফের নাম শোনা যাচ্ছে জোরেশোরে। এ ছাড়াও জোটের শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাস, জামায়াতের নেতা অ্যাডভোকেট গাজী এনামুল হক প্রার্থী হতে চান। নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় তারা বিএনপিকে ছাড় দিতে নারাজ। তিনবারের এমপি মুফতি ওয়াক্কাস জোটের শক্ত প্রার্থী। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে বিএনপি ও জোটের প্রার্থী ঠিক করা নিয়ে জল অনেকদূর পর্যন্ত গড়াবে।

জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট শহীদ মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, ‘এখনও দল আগামী সংসদ নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়নি। দুর্দিনে দলের হাল ধরে সব বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে দলীয় কর্মসূচি পালন করে চলছি। এ ছাড়া দুবার দলীয় টিকিটে নির্বাচনও করেছি। তাই কেন্দ্র আগামী নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিলে দলীয় টিকিট পেতে আমি আশাবাদী।’

সাবেক ছাত্রনেতা বর্তমান তরুণ বিএনপি নেতা ইফতেখার সেলিম অগ্নি বলেন, ‘দীর্ঘ দিন ছাত্ররাজনীতির নেতৃত্ব দিয়েছি। দলীয় হাইকমান্ডের সঙ্গে সুসম্পর্কও রয়েছে। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।’ কথা হয় মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাসের সঙ্গে। ততাক হাওর বার্তাকে বলেন, ‘জোটের হাইকমান্ডের সভায় সিদ্ধান্ত হবে কারা এ আসনে মনোনয়ন পাবেন। এর আগেও মনোনয়ন পেয়েছি। এবারও আশাবাদী।’

গাজী এনামুল হক বলেন, ‘এই আসনে জামায়াতের শক্ত অবস্থান রয়েছে। এ জন্য আমরা জোটের শরিকদের ছাড় দিতে চাই না। হাইকমান্ড ভুল সিদ্ধান্ত নিলেও নেতাকর্মীরা মেনে নেবে না। জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করব।’ অপর দিকে, জাতীয় পার্টির জেলা সভাপতি শরিফুল ইসলাম সরু চৌধুরী, উপজেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল লতিফ ও কেন্দ্রীয় ছাত্রসমাজের সদস্য জাকির হোসেন বাবুর নাম সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

আওয়ামী লীগের দুই ভাইকে ছাড় দেবে না বিএনপি

আপডেট টাইম : ১১:৫৯:৩৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ অক্টোবর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশের অন্যতম বৃহত্তম উপজেলা মনিরামপুরের ১৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে যশোর-৫ আসন গঠিত। দলীয় কোন্দলে জর্জরিত আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ৯ জন ও বিএনপির পাঁচজন প্রার্থী মাঠে তৎপর রয়েছেন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এবং জামায়াতের নেতারাও জোটের শরিক হিসেবে প্রার্থী হতে চান। আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মধ্যে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট পিযুষ কান্তি ভট্টাচার্য্য ও বর্তমান এমপি স্বপন ভট্টাচার্য্য হচ্ছেন দুই সহোদর।

তারা দু’জনই মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে নানা কায়দায় এলাকায় নিজেদের প্রার্থিতা জানান দিচ্ছেন। বসে নেই আওয়ামী লীগের টিকিটে নির্বাচন করতে আগ্রহী বাকিরাও। গত নির্বাচনে মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ভোটে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের স্বপন ভট্টাচার্য্য বিজয়ী হন। এবার মনোনয়ন নিয়ে কোন্দল প্রকাশ্যে রূপ নেয়ার শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে হামলা-মামলায় জর্জরিত বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক কাটেনি এখনও। তবে নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় নেতাকর্মীদের ভোটের মাঠে তৎপর দেখা যাচ্ছে। আন্দোলন সংগ্রামে সামনে থাকা বিএনপি এবার আসনটি জোটের শরিকদের ছাড় দিতে নারাজ। এরই মধ্যে বিএনপির অন্তত পাঁচজন প্রার্থী আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের প্রতীক নিয়ে লড়তে চান। তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত তারা দৌড়ঝাঁপ করছেন। বিএনপি অনড় অবস্থানের পরও জোটের শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও জামায়াতে ইসলামী আসন ছাড়তে নারাজ। ফলে জোটের হিসাব-নিকাশে নির্ধারিত হবে বিএনপির ভাগ্য।

বিগত ১০টি সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চারবার ও দলের বিদ্রোহী প্রার্থী একবার এবং বাকি পাঁচবার বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৭৩ সালে প্রথম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পিযুষ কান্তি ভট্টাচার্য্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে বিএনপির আফসার আহমেদ সিদ্দিকী, ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাস নির্বাচিত হন।

১৯৯১ সালে পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের খান টিপু সুলতান নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির আফসার আহমেদ সিদ্দিকী ও ’৯৬ এর ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের খান টিপু সুলতান নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে অষ্টম সংসদ নির্বাচনে জোটের শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মুফতি ওয়াক্কাস এমপি হন। ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের খান টিপু সুলতান ও ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী স্বপন ভট্টাচার্য্য নির্বাচিত হন।

গত সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগে মনোনয়ন দ্বন্দ্বে দলীয় বিভেদ প্রকাশ্য রূপ নেয়। আওয়ামী লীগের প্রার্থী টিপু সুলতানকে চ্যালেঞ্জ করে প্রার্থী হন স্বপন ভট্টাচার্য্য। নির্বাচিতও হন তিনি। একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বর্তমান এমপির ভাই অ্যাডভোকেট পিযুষ কান্তি ভট্টাচার্য্য মনোনয়নের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন তলে তলে। ১৯৭৩ সালে প্রথম সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছিলেন। তবে তাকে ছাড় দিতে নারাজ ছোট ভাই বর্তমান এমপি স্বপন ভট্টাচার্য্য। গত সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছেন।

এবার নৌকা নিয়ে লড়তে চান তিনি। তবে এই দুই সহোদরের বাইরে আওয়ামী লীগের আরও অন্তত সাতজন প্রার্থী রয়েছেন। তারা হলেন- জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন, জেলা আওয়ামী লীগের, ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা শিল্পপতি কামরুল হাসান বারী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পৌর মেয়র কাজী মাহমুদুল হাসান, জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য উপজেলা চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন লাভলু, অবসরপ্রাপ্ত কাস্টমস কর্মকর্তা মুক্তিযোদ্ধা ইউনুস আকবর, সাবেক এমপি খান টিপু সুলতানের সহধর্মিণী ডা. জেসমিন আরা বেগম। এ ছাড়াও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) কোষাধ্যক্ষ ও বাসসের বিশেষ প্রতিনিধি মধুসূদন মণ্ডলও প্রার্থী হতে চান।

নির্বাচন নিয়ে কথা হয় অ্যাডভোকেট পিযুষ কান্তি ভট্টাচার্য্যরে সঙ্গে। তিনি হাওর বার্তাকে বলেন, দেশের সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য করে যে সম্মান দেখিয়েছেন তাতে তিনি চিরকৃতজ্ঞ। তিনি বলেন, ‘নেত্রী মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করতে প্রস্তুত আছি।’ বর্তমান এমপি স্বপন ভট্টাচার্য্য বলেন, ‘গত সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছি। এ জন্য দীর্ঘদিন দলের বাইরে ছিলাম। সম্প্রতি দলীয় এমপির স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। এজন্য আগামী নির্বাচনে দলীয় টিকিটের ব্যাপারে আশাবাদী।’

জানতে চাইলে আবদুল মজিদ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে দলীয় কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছি। দলের দুর্দিনেও এলাকার নেতাকর্মীদের পাশে থেকেছি। দলীয় হাইকমান্ড এসব বিবেচনা করে মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করতে প্রস্তুত আছি।’ আগামী নির্বাচনী ভাবনা নিয়ে জানতে চাইলে কাজী মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘২০০৬ সালের ২২ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে নৌকার টিকিট পেয়েছিলাম। কিন্তু সেনাসমর্থিত সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে মনোয়নবঞ্চিত হই। আগামী সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পাব বলে আশাবাদী।’

এদিকে, হামলা-মামলায় জর্জরিত বিএনপি নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় এবার দলীয় প্রার্থীর মনোনয়ন নিশ্চিত করতে চায়। দলের অন্তত পাঁচজন প্রার্থী মনোনয়নের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন। তবে জোটের শরিক হিসেবে জামায়াতে ইসলামী ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ভাগ বসাতে চায় এ আসনে। যেকোনো মূল্যে তারা নির্বাচন করতে চায়। তবে বিএনপির হাইকমান্ড কী সিদ্ধান্ত নেয় তা জানতে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হচ্ছে। এ আসনে প্রার্থী হিসেবে মাঠে তৎপর রয়েছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি শহীদ ইকবাল হোসেন, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মোহাম্মদ মুছা, ছাত্রদলের সাবেক জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতা ইফতেখার সেলিম অগ্নি।

জিয়া পরিষদের বর্তমান সহকারী মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার মো. শরীফুজ্জামান খান শরীফের নাম শোনা যাচ্ছে জোরেশোরে। এ ছাড়াও জোটের শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাস, জামায়াতের নেতা অ্যাডভোকেট গাজী এনামুল হক প্রার্থী হতে চান। নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় তারা বিএনপিকে ছাড় দিতে নারাজ। তিনবারের এমপি মুফতি ওয়াক্কাস জোটের শক্ত প্রার্থী। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে বিএনপি ও জোটের প্রার্থী ঠিক করা নিয়ে জল অনেকদূর পর্যন্ত গড়াবে।

জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট শহীদ মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, ‘এখনও দল আগামী সংসদ নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়নি। দুর্দিনে দলের হাল ধরে সব বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে দলীয় কর্মসূচি পালন করে চলছি। এ ছাড়া দুবার দলীয় টিকিটে নির্বাচনও করেছি। তাই কেন্দ্র আগামী নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিলে দলীয় টিকিট পেতে আমি আশাবাদী।’

সাবেক ছাত্রনেতা বর্তমান তরুণ বিএনপি নেতা ইফতেখার সেলিম অগ্নি বলেন, ‘দীর্ঘ দিন ছাত্ররাজনীতির নেতৃত্ব দিয়েছি। দলীয় হাইকমান্ডের সঙ্গে সুসম্পর্কও রয়েছে। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।’ কথা হয় মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাসের সঙ্গে। ততাক হাওর বার্তাকে বলেন, ‘জোটের হাইকমান্ডের সভায় সিদ্ধান্ত হবে কারা এ আসনে মনোনয়ন পাবেন। এর আগেও মনোনয়ন পেয়েছি। এবারও আশাবাদী।’

গাজী এনামুল হক বলেন, ‘এই আসনে জামায়াতের শক্ত অবস্থান রয়েছে। এ জন্য আমরা জোটের শরিকদের ছাড় দিতে চাই না। হাইকমান্ড ভুল সিদ্ধান্ত নিলেও নেতাকর্মীরা মেনে নেবে না। জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করব।’ অপর দিকে, জাতীয় পার্টির জেলা সভাপতি শরিফুল ইসলাম সরু চৌধুরী, উপজেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল লতিফ ও কেন্দ্রীয় ছাত্রসমাজের সদস্য জাকির হোসেন বাবুর নাম সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছে।