হাওর বার্তা ডেস্কঃ জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ এবং অগ্নিসংযোগের অপরাধগুলো পদ্ধতিগত এবং পরিকল্পিত। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা তাদের সাক্ষ্যে এই সাদৃশ্যপূর্ণ নৃশংসতার বিস্তারিত বর্ণনা করেছে। জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিমের বিশেষজ্ঞরা গতকাল শুক্রবার তাদের প্রথম বাংলাদেশ সফর শেষে এক বিবৃতিতে এ কথা বলেছেন।
ইন্দোনেশিয়ার সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মারজুকি দারুসমানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের এই ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম বলেছে, ২৫ আগস্ট থেকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চালানো অভিযানে নিহতের সংখ্যা এখনো অজানা। তবে ধারণা করা যায়, এই সংখ্যা অনেক বেশি হবে। বিবৃতিতে দারুসমান বলেন, উত্তর রাখাইনের বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা অনেক মানুষের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তারা অনেক অপরাধ ও ঘটনার কথা আমাদের জানিয়েছে। তাদের বক্তব্যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি ধারাবাহিক ও পদ্ধতিগত ধরনের বিষয়টিই স্পষ্ট হয়েছে। যে কারণে লাখ লাখ মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে।
এই টিমের তদন্তকারী বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশে ছয় দিন অবস্থান করেন। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গার মধ্য থেকে তারা বেশ কিছু লোকের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। এর আগে জাতিসংঘের মানবাধিকার কর্মকর্তাদের একটি অগ্রবর্তী টিম সমন্বিতভাবে রোহিঙ্গাদের বক্তব্য সংগ্রহ করে। দারুসমান বলেন, এই সফরের শেষে আমরা খুবই মনঃক্ষুন্ন হয়েছি।
টিমের আরেক সদস্য ও জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বর্ষীয়ান তদন্তকারী রাধিকা চুমারাস্বামী জানান, রোহিঙ্গাদের সাক্ষ্যগ্রহণের পর তিনি ধাক্কা খেয়েছেন। বিভিন্ন ঘটনার বর্ণনা শুনে তিনি চরমভাবে ক্ষুব্ধ। তিনি বলেন, আমি সংকটময় মুহূর্তে যৌন সহিংসতার অনেক ঘটনার কথা শুনেছি। কিন্তু আমার অভিজ্ঞতায় রাখাইনের মতো বীভৎস যৌন সহিংসতার কথা আগে কখনোই শুনিনি। আমরা ভিকটিম নারীদের ওপর নিপীড়নের অনেক ঘটনা শুনেছি। এসব প্রমাণিত হলে অপরাধীদের অবশ্যই বিনা বিচারে যেতে দেওয়া হবে না।
গত মার্চে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল এই ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম’ গঠন করে। বিবৃতিতে টিমের বিশেষজ্ঞরা রাখাইন রাজ্যের অপরাধ তদন্তে প্রবেশাধিকার এবং মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে আলোচনার সুযোগ দিতে আবারো আহবান জানিয়েছেন।
টিমের অপর সদস্য অস্ট্রেলিয়ার মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টোফার সিদোতি বলেন, রোহিঙ্গাদের ইচ্ছা অনুযায়ী রাখাইনে ফেরার সুযোগ দেওয়া উচিত। তবে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার বিষয়টিও আগে নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে রাখাইন রাজ্যে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষকের পরিদর্শন গুরুত্বপূর্ণ।
সাক্ষ্যে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণের পর তা ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে তুলে ধরা হবে। আগামী বছরের মার্চের মধ্যে একটি অন্তবর্তী প্রতিবেদন মানবাধিকার কাউন্সিলে পেশ করার কথা রয়েছে এবং আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে চূড়ান্ত প্রতিবেদন পেশ করা হবে।