বিএনপির প্রার্থীদের তৈরি হতে নির্দেশ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি ছয় সিটি করপোরেশনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। ইতিমধ্যেই দল থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সক্রিয় হয়ে উঠতে। হাইকমান্ডের নির্দেশ পেয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীরা গণসংযোগ, মতবিনিময়, প্রচার ও হাইকমান্ডে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করছেন।
আগামী ২৮ ডিসেম্বর রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন দিয়ে ভোটযুদ্ধ শুরু হতে পারে। আগামী মাসেই এর নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে মার্চ কিংবা এপ্রিলে রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন হবে। এ জন্য বিএনপি প্রকাশ্যে কিছু না বললেও ভেতরে ভেতরে আসন্ন ছয় সিটি নির্বাচন চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখছে। কারণ এগুলোর জয়-পরাজয়ের ওপরেও অনেকটা নির্ভর করছে তাদের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কৌশল। এ নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিএনপি বর্তমান সরকারের ওপর দেশের মানুষের আস্থাহীনতাকে প্রচারণায় নিয়ে আসতে চাইছে। দলটি মনে করছে, নির্বাচন নিরপেক্ষ হলে ফল তাদের ঘরে আসবে।
এদিকে তিন মাস পর গত ২২ অক্টোবর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ছয় সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এ বৈঠকে চেয়ারপারসন জানিয়েছেন, আগামীতে সব নির্বাচনেই অংশ নেবে বিএনপি। এ লক্ষ্য নিয়ে ছয় সিটি নির্বাচনেও জোরালোভাবে মাঠে নামতে বলেছেন তিনি। তবে দলটির বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, বরিশাল ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের মনোনীত প্রার্থী পরিবর্তন হতে পারে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তিন নেতা জানান, সিটি নির্বাচনে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে পারলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে নেতাকর্মীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়বে। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে বিএনপি ২০ দফা দাবি উত্থাপন করেছে। নির্বাচন কমিশনের তেমন কিছু করার না থাকলেও কমিশন কী পদক্ষেপ নেয়, তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছে বিএনপি। দলটি এ-ও মনে করছে, ইসির জন্য ছয় সিটি করপোরেশনের নির্বাচন ‘অগ্নিপরীক্ষা’। ইসির ভূমিকার ওপর নির্ভর করছে বিএনপির ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্ত।
এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হাওর বার্তাকে জানান, বিএনপি কখনও স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জন করেনি। বর্তমান নির্বাচন কমিশন যদি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে পারে, তাহলে অবশ্যই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী বিপুল ভোট পেয়ে বিজয়ী হবেন। কারণ মানুষ এই সরকারের পরিবর্তন চায়। বিভিন্ন কারণে জনগণ তাদের ভোটের অধিকার প্রয়োগ করার একটি সুযোগ চায়। আর সুযোগ পেলেই তারা ধানের শীষের প্রার্থীকেই ভোট দেবেন।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দেশের ছয় সিটি করপোরেশন এলাকায়ও নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। দলের মনোনয়ন পেতে একদিকে হাইকমান্ডের সঙ্গে চলছে যোগাযোগ ও লবিং, অন্যদিকে চলছে গণসংযোগ। ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল জামায়াতে ইসলামী দলীয়ভাবে নির্বাচন করতে না পারলেও তাদের সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠ ছাড়ছেন না। জামায়াতের এই প্রার্থীদের কারণে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। জামায়াতে ইসলামী থেকে যেন প্রার্থী মনোনয়ন না দেওয়া হয় সে ব্যাপারে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা চলছে। বিএনপিতে যেন বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকেন, এ জন্যও দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু হাওর বার্তাকে বলেন, বিএনপি কোনো নির্বাচন বর্জন করতে চায় না। সরকারই বিভিন্ন কৌশলে নির্বাচন বর্জনের মাঠ তৈরি করেছে। তিনি বলেন, আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা কী হবে তা স্পষ্ট হবে। বর্তমান ইসির অধীনে সিটি করপোরেশন নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু ও অবাধ হতে পারে, এটা এখন তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
সাংগঠনিক অবস্থা ভালো নয় রংপুরে :রংপুরে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা ভালো নয়। তার পরও ফাঁকা মাঠে গোল করতে দেবে না বিএনপি। বিগত নির্বাচনে মহানগর বিএনপির সহসভাপতি কাওসার জামান বাবলা ২০ দলীয় জোটের মেয়র প্রার্থী ছিলেন। এবারও মনোনয়ন পেতে পারেন তিনি। এবারের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে রংপুর মহানগর সভাপতি মোজাফফর হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মিজু, যুবদল সভাপতি নাজমুল আলম নাজু এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের জেলা সভাপতি আবদুস সালাম মনোনয়নের প্রত্যাশায় নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন।
খুলনায় মনিকে গ্রিন সিগন্যাল :খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনির আবারও মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কেন্দ্রের গ্রিন সিগন্যালও তিনি পেয়ে গেছেন। তবে জেলা বিএনপি সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনাও মনোনয়ন চাইবেন। তিনিও জোর লবিং তদ্বির চালিয়ে যাচ্ছেন।
সিলেট : সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আবারও বিএনপির মনোনয়ন পেতে পারেন বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। মনোনয়ন নিশ্চিত জেনে তিনিও নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছেন। মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন ও সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, মহানগর বিএনপির সহসভাপতি ও প্যানেল মেয়র রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক ও তিনবারের কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীমও এখানে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।
দুটি বলয় রাজশাহীতে :রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মহানগর সভাপতি ও বর্তমান মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলই এখন পর্যন্ত ঘোষিত প্রার্থী। বিএনপি হাইকমান্ডও বুলবুলকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। তবে মহানগর যুবদলের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ সুইটও ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। রাজশাহী নগরসহ কেন্দ্রীয় বিএনপির একটি অংশ তাকে সমর্থ দেবে বলে আভাস পাওয়া গেছে। রাজশাহী বিএনপিতে মিজানুর রহমান মিনু ও মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের নেতৃত্বে দুটি বলয় রয়েছে। মিজানুর রহমান মিনুর আশীর্বাদ পেতে পারেন সুইট।
বরিশালে প্রস্তুতি নিচ্ছেন অনেকইে : বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি-দলীয় বর্তমান মেয়র আহসান হাবিব কামাল সম্ভাব্য প্রার্থীদের অন্যতম। এ ছাড়া দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন, বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি ওবায়দুল হক চান, মহানগর সাংগঠনিক সম্পাদক আলতাব মাহমুদ শিকদার, মহানগর বিএনপির সহ-ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক আফরোজা খানম নাসরিন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক ও বর্তমান প্যানেল মেয়র-১ কেএম শহিদুল্লাহও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দল মনোনয়ন দিলে এখানে সাবেক মেয়র ও দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার এবং যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালও নির্বাচন করতে পারেন।
গাজীপুরে মনোনয়ন না-ও পেতে পারেন বর্তমান মেয়র : গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক এমপি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হাসান উদ্দিন সরকার। বর্তমান মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নানও আবার নির্বাচনে আগ্রহী। তবে বর্তমান মেয়রের মনোনয়ন না পাওয়ার আশঙ্কাই বেশি বলে জানা গেছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর