রোহিঙ্গাদের ফেরাতে সমঝোতা হয়নি

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাখাইন রাজ্যে স্থিতিশীলতা ফেরাতে সহযোগিতায় সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। তবে, শরণার্থীদের ফেরতে কোনো  সমঝোতায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে। ইরাবতির এক রিপোর্টে এ কথা বলা হয়েছে। মঙ্গলবার মিয়ানমার সফররত বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লে. জেনারেল কিয়াও সোয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকের পর মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব উ কিয়াও জেয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশ চায় যত দ্রুত সম্ভব শরণার্থীদের ফেরত পাঠাতে। কিন্তু আমরা ধাপে ধাপে এগোবো এবং শরণার্থী ফেরত নেয়ার বিষয়ে যৌথ একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করবো।’
ইরাবতীর প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ২৫শে আগস্ট রাখাইনের মংডু শহরের পুলিশ চেকপোস্টগুলোতে বিদ্রোহীরা হামলা চালালে মিয়ানমার সেনাবাহিনী নির্মূল অভিযান শুরু করে।

এর পর থেকে নিজেদের রোহিঙ্গা মুসলিম পরিচয় দেয়া (সেলফ-আইডেন্টিফাইং রোহিঙ্গা মুসলিমস) আনুমানিক ৬ লাখ মিয়ানমার ছেড়ে পালিয়েছে।
গতকাল দেশটির প্রশাসনিক রাজধানী ন্যাপিড’তে দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠক করেন। এতে দু’পক্ষ বাংলাদেশে শরণার্থীদের ঢল প্রতিহত করতে এবং রাখাইনের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে আনার বিষয়ে সম্মত হন।
মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব উ তিন্ত মিন্ত বলেন, ‘তাদের ফেরত নেয়ার জন্য অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ এবং নতুন করে বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা এখনো আমাদের করা বাকি। এ কাজগুলো রাষ্ট্রের নেতারা স্বয়ং করছেন। কাজেই তা কখন শেষ হবে সেটা অনুমান করা কঠিন।’
স্টেট কাউন্সিলরের কার্যালয়ের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী উ কিয়াও তিন্ত সোয়ে  অক্টোবরে ঢাকায় বাংলাদেশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠকের সময় শরণার্থী ফেরত প্রসঙ্গে ১৯৯৩ সালে দু’দেশের মধ্যে হওয়া সমঝোতা নিয়ে আলোচনা করেন। মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের মুখপাত্র উ জ হতে গত সপ্তাহে বলেছেন, এতে বাংলাদেশ একটি প্রস্তাব দেয়। মিয়ানমারের মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে ওই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আর তাদের সিদ্ধান্ত স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচির কাছে দাখিল করা হয়েছে।
হতে বলেন, তিনি আশা করেছিলেন বাংলাদেশি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের প্রাক্কালে ওই প্রস্তাব নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা হবে। তবে, মঙ্গলবারের বৈঠকে দুই দেশ শুধু দুটো চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এতে নিরাপত্তা ও সীমান্ত সহযোগিতার বিষয়গুলো রয়েছে। কিন্তু শরণার্থীদের ফেরতের প্রসঙ্গ নেই।
বৈঠকে মূলত গুরুত্ব পেয়েছে, লিয়াজোঁ অফিস চালু করা, সন্ত্রাস ও মাদক পাচার প্রতিহত করতে সহযোগিতা, তথ্য আদান প্রদান এবং নিয়মিত বৈঠক আয়োজন ও সীমান্তে আইনের শাসন নিশ্চিত করা। বৈঠকে উপস্থিত সূত্রগুলো এমনটাই বলছে।
পুলিশের ক্রস-বর্ডার ক্রাইম ডিপার্টমেন্টের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অং হতে মিন্ত বলেন, ‘আমরা শরণার্থীদের নিয়ে কোনো পরিকল্পনার বিষয়ে আলোচনা করি নি। আমরা শরণার্থীদের ফেরত পাঠানো প্রসঙ্গে আলোচনা করেছি- তাদের যাচাই করা এবং যারা মিয়ানমারে স্থায়ী আবাস গড়েছে এবং সহিংসতার পর বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে তাদের গ্রহণ করা।’
মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের ভাস্যমতে, বাংলাদেশে পালানো মানুষের সংখ্যা নিয়ে রাখাইন রাজ্য সরকারের জরিপ আর জাতিসংঘের পরিসংখ্যানের মধ্যে বিরাট পার্থক্য রয়েছে।
মঙ্গলবারের বৈঠকে মিয়ানমার বাংলাদেশের কাছে সন্দেহভাজনদের একটি তালিকাও হস্তান্তর করেছে। বলা হচ্ছে, তারা হামলায় জড়িত ছিল এবং বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি তদন্ত করে সন্দেহভাজনদের মিয়ানমারে পাঠানোর অনুরোধ করে মিয়ানমার।
উ তিন মিন্ত বলেন, ‘বাংলাদেশি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তার দেশ কখনই কোনো বেআইনি সংগঠন, বিদ্রোহী ও সন্ত্রাসীদের দেশের মাটিতে স্থান দেয় নি, ভবিষ্যতেও দেবে না।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর