বাংলাদেশ জাতিসংঘের সহস্রাব্দ লক্ষ্য উন্নয়নে (এমডিজি) সফল হয়েছে। এখন সুশাসন নিশ্চিতের পরিবেশ দেখতে চায় যুক্তরাজ্য।
দেশটির আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী রোটারিয়ান ডেসমন্ড সন মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানান। এটি ঢাকায় অবস্থিত যুক্তরাজ্য দূতাবাসে অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশে নিযুক্ত দেশটির হাইকমিশনার রবাট ডব্লিউ গিবসন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের সহস্রাব্দ লক্ষ্য উন্নয়নে (এমডিজি) বাংলাদেশ যেভাবে সফলতা দেখিয়েছে, সমানের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসজিডি) অর্জনেও বাংলাদেশ সফল হবে— এমন আশা করি। বিশেষ করে, এসজিডির সুশাসন নিশ্চিতের যে ধাপ রয়েছে, আইনের আওতায় বাংলাদেশ তা পূরণ করবে বলে বিশ্বাস করি।
বাংলাদেশ সফরে এসে বেশ কয়েকটি তৈরি পোশাক কারখানা পরিদর্শন করেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘রানা প্লাজার মতো অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা যাতে আর না ঘটে আমাদের সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তৈরি পোশাক খাতের কর্মপরিবেশ উন্নয়নে বাংলাদেশ অনেক উন্নয়ন ঘটিয়েছে। কিন্তু এই খাতের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পেতে হলে এই খাতের আরও উন্নয়ন ঘটাতে হবে। পোশাক খাতের সাপ্লাই-টেইন নিয়ন্ত্রণে নিতে হলে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।’
ডেসমন্ড সন বলেন, ‘বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত খুবই সম্ভাবনাময়। এটি বিদেশী বিনিয়োগ করার মতো চমৎকার খাত। কিন্তু এ জন্য বিনিয়োগের পরিবেশ মসৃণ রাখতে হবে। জবাবদিহিতামূলক সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে শান্তি, সহনশীলতা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা। এ জন্য উন্নত দেশগুলো জাতিসংঘের নীতির আওতায় সব ধরনের সহায়তা করে আসছে। অন্যদিকে, শান্তি, সহনশীলতা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে উন্নয়নশীল দেশগুলোরও দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সততার সঙ্গে কাজ করতে হবে, সুশাসন এবং জবাবদিহিতার চর্চা নিশ্চিত করতে হবে।’
সম্প্রতি আইসিটি এ্যাক্টের ৫৭ ধারায় বাংলাদেশে গণমাধ্যমকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। যা স্বাধীন গণমাধ্যমের ওপর হস্তক্ষেপ। এই বিষয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা প্রতিমন্ত্রী রোটারিয়ান ডেসমন্ড সনের মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যে কোনো দেশে স্বাধীন গণমাধ্যম জরুরি। তবে বাংলাদেশে আইসিটি এ্যাক্টের ৫৭ ধারা নিয়ে কী হচ্ছে তা বলতে পারব না। এই বিষয়ে আমি বলারও কেউ নই। বাংলাদেশ এমডিজি থেকে এসডিজিতে যাচ্ছে। এ দেশে প্রতিক্রিয়াশীল সুশীল সমাজ রয়েছে। এই বিষয়ে তারা বলবেন।’
বাংলাদেশে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটছে— এমন তথ্য জানিয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা ডেসমন্ড সনের মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি মাত্র তিন দিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছি। যা এতই সংক্ষিপ্ত যে রোবটের মতো। এত স্বল্প সময়ের অভিজ্ঞতায় এই বিষয়ে মন্তব্য করা যায় না। এ ছাড়া আমি একজন বিদেশী রাজনীতিবিদ, আমি এই বিষয়ে মন্তব্য করার অধিকার রাখি না। এই বিষয়ে এই দেশের রাজনীতিবিদ এবং জনগণকেই কথা বলতে হবে। তবে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সহ্য করার মতো না। এই হত্যাকাণ্ড কোনো দেশেই সুশাসন নিশ্চিত করে না। গণতান্ত্রিক সরকার কাঠামোর সঙ্গে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড যায় না।’
প্রতিমন্ত্রী রোটারিয়ান ডেসমন্ড সন গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে সৃষ্ট বন্যায় সাধারণ মানুষকে সহায়তা করতে যুক্তরাজ্য তিন মিলিয়ন পাউন্ডের সমপরিমাণ অর্থ ত্রাণ সহায়তা হিসেবে দিচ্ছে।
যুক্তরাজ্যের প্রতিমন্ত্রী তিন দিনের সফরে রবিবার ঢাকা আসেন। তিনি এ সময় বাংলাদেশের উন্নয়নে যুক্তরাজ্যের চলমান বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প সরেজমিন পরিদর্শন করেন। এ ছাড়া ডেসমন্ড সন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান স্যার ফজলে হাসান আবেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে তার ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে।