হাওর বার্তা ডেস্কঃ সদর ও সোনাডাঙ্গা উপজেলা নিয়ে খুলনা-২ আসন। ১৯৯০ সালের পর তিনটি নির্বাচনে আসনটি বরাবরই বিএনপির দখলে ছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে মাত্র এক হাজার ৬৭০ ভোটের ব্যবধানে পরাজয় মেনে নিতে হয়েছিল। পরবর্তী ২০১৪ সালের নির্বাচনে নিজেদের প্রত্যাশিত জয় পায় দলটি। ইতোমধ্যেই আওয়ামী লীগ নিজেদের অনেকটা গুছিয়ে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে চাইছে তারা। অপরদিকে, হারানো সাম্রাজ্য ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিএনপি। এখন এ আসনে দুই দলের লড়াই হবে সেয়ানে সেয়ানে।
জানা গেছে, ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর কাছে মাত্র এক হাজার ৬৭০ ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য আলহাজ মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। গত নয় বছরে খুলনা-২ আসনে নিজেদের অবস্থান অনেকখানি মজবুত করতে সক্ষম হয়েছে আওয়ামী লীগ। ২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই এমপি নির্বাচিত হন মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। দলীয় রাজনীতিতে তার রয়েছে শক্ত অবস্থান। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি সাধারণ মানুষ থেকে প্রশাসনের উচ্চপর্যায় পর্যন্ত খোলামেলাভাবে মিশেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ধর্মীয় ওয়াজ মাহফিল, বিয়ে-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পাড়া-মহল্লায় রয়েছে তার অবাধ পদচারণা। রাজপথে যেমন সরব ছিলেন, তেমনি প্রশাসনেও তার আছে ভালো যোগাযোগ। তৃণমূলেও তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।
বড় দুদলের জয়-পরাজয়ের হিসাব : স্বাধীনতাত্তোর ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে এ আসন থেকে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগ নেতা এম এ বারী। এরপর ১৯৯১ সালে বিজয়ী হন বিএনপির প্রার্থী সাবেক স্পিকার অ্যাডভোকেট রাজ্জাক আলী। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনেও পুনরায় নির্বাচিত হন তিনি। ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে নির্বাচন করে বিজয়ী হন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ওই নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত অ্যাডভোকেট মঞ্জুরুল ইমাম। পরে উপনির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আলী আজগর লবী। এদিকে, ৪০ বছর ধরে নিজেদের দখলে থাকা আসনটি হাতছাড়া করার পর তা পুনরুদ্ধারে কোমর বেধে নেমেছে একসময়ের বিজয়ী দল বিএনপি। ১৯৯১ সালে সর্বশেষ জামায়াতে ইসলামী আলাদাভাবে এ আসন থেকে নির্বাচন করেছিল। এরপর থেকে বরাবরই বিএনপির প্রার্থীকেই দলীয় সমর্থন দিয়ে আসছে।
মনোনয়ন নিয়ে জনমনে আলোচনায় আছেন খুলনা সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম এবং নগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আলী আজগর লবী। এর দুজনেই বিশেষত আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে অ্যাডভোকেট সাইফুল নগরীর প্রত্যেকটি ওয়ার্ড, থানা এবং ইউনিটগুলোতে চষে বেড়াচ্ছেন। নগরীর বিভিন্ন সমস্যা, দুর্ভোগ ও সম্ভাবনা নিয়ে নিয়মিত হাজির হচ্ছেন গণমাধ্যমে। রাজপথের দাবি আদায়ের আন্দোলনেও সরব হচ্ছেন। সর্বশেষ কেসিসির ট্যাক্স বাড়ানোর সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে রাজপথের আন্দোলনে সক্রিয় থেকেছেন তিনি।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, খুলনায় বিএনপির রাজনীতিতে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর রয়েছে একক আধিপত্য। রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দৃঢ়তার কারণে মহানগর বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা) নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। সিনিয়র সিটিজেন ও তৃণমূলে তার জনপ্রিয়তা রয়েছে। মূলত তৃণমূলের রাজনীতি থেকেই তার উত্থান। বর্তমানে খুলনায় বিএনপি রাজনীতিতে তিনি অন্যতম প্রভাবশালী নেতা।
খুলনায় চায়ের আড্ডায় এখনকার একমাত্র বিষয় হলো একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নানা জায়গায় চলছে নির্বাচনের নানা ব্যাখ্যা। কোন নেতা মনোনায়ন পাবেন তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। অপরদিকে, বিএনপি-জামায়াতের একসময়কার আন্দোলন মুখ থুবড়ে পড়ায় আওয়ামী লীগও হয়ে পড়েছে ঘরমুখী। অভিযোগ রয়েছে, দলটির নেতাকর্মীরা রাজনীতির চেয়ে নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও ঠিকাদারি নিয়ে বেশি ব্যস্ত। অপরদিকে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, মামলার জাল ও সন্দেহ-অবিশ্বাসে তৃণমূলে বিএনপিও দিশাহীন হয়ে পড়েছে।
বর্তমান সংসদ সদস্য মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, আগামী নির্বাচনে ঝুঁকি নিতে রাজি নয় খুলনা আওয়ামী লীগ। তাই সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে আগেভাগেই নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে তাদের দল। তিনি বলেন, তৃণমূলের কমিটি সুসংহত করার পাশাপাশি মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের দেওয়া হয়েছে নির্বাচন প্রস্তুতির দিকনির্দেশনা। অন্যদিকে, নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে এখনো সুস্পষ্ট না থাকায় কৌশলের পথেই হাঁটছে খুলনা বিএনপি। খুলনায় বিএনপির অন্যতম শীর্ষ নেতা সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতি বিএনপির রয়েছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে মানুষ আবারও বিএনপিকে নির্বাচিত করবে।
অনেকে মনে করছেন, খুলনা-২ আসনটি সদর আসন হওয়ায় উল্লেখযোগ্য ভোটাররা এখানকার উন্নয়ন ও সামাজিক-রাজনৈতিক দিক বিবেচনা করে ভোট দিয়ে থাকেন। আগামী নির্বাচনে আধুনিক রেলস্টেশন, খুলনা-মংলা রেললাইন, পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ, আইটি ভিলেজ, অর্থনৈতিক জোন, স্বাস্থ্যসেবা ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রাধান্য পাবে বলে তাদের অভিমত।
প্রতিদিনের সংবাদ