হাওর বার্তা ডেস্কঃ নির্বাচনে একটি রাজনৈতিক দল হলফনামার বিধান বাতিল চেয়ে যে প্রস্তাব করেছে এটাকে জাতির জন্য হতাশাজনক ও অনভিপ্রেত বলে মন্তব্য করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। বলেছেন, এ দাবি ভোটারদের বাকস্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠানিকীকরণের অন্তরায় এবং দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার জন্য অশনিসংকেত।
রবিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর রুনি মিলনায়তনে ‘প্রার্থী কর্তৃক প্রদত্ত হলফনামা বিধান বাতিলের প্রস্তাবের প্রতিবাদে’ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সুজন সম্পাদক এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গন ও নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে পরিচ্ছন্ন ও কলুষমুক্ত করতে হলে হলফনামার বিধান আরও কীভাবে কার্যকর করা যায় সে ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে উদ্যোগী হতে হবে। প্রার্থীদের সম্পর্কে ভোটারদের তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য।’
সুজন সম্পাদক বলেন, ‘কমিশন তাদের রোডম্যাপ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের সাথে সংলাপও প্রায় শেষ করেছে। সংলাপে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশও এসেছে। কিন্তু আশঙ্কার বিষয় হলো, গত ৮ অক্টোবর নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সংলাপে একটি রাজনৈতিক দল ‘হলফনামা’র মত গুরুত্বপূর্ণ বিধান বাতিলের প্রস্তাব করেছে। আমরা মনে করি, এ দাবি হতাশাজনক ও অনভিপ্রেত। নির্বাচনে প্রার্থীদের হলফনামা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত, অর্থাৎ সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে এ বিধান আইনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এটি বাতিল করার ক্ষমতা কারোরই নেই, এমনকি নির্বাচন কমিশনেরও নেই। কারণ এই প্রস্তাব ভোটারের বাক্ স্বাধীনতা তথা মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী।’
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘প্রার্থীদের সম্পর্কে ভোটারদের তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার আমাদের দেশে খুব সহজেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়নি। এর পেছনে একটি সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। আদালতের রায়ের মাধ্যমে নির্বাচনে হলফনামা দাখিল করার যে বিধানটি আমরা পেলাম একটি রাজনৈতিক দল অতীতের মতো আবার হলফনামা প্রদানের বিধানকে ভণ্ডুল করার চক্রান্তে লিপ্ত বলে মনে হচ্ছে।’
বদিউল আলম বলেন, ‘যে হলফনামা বর্তমানে ব্যবহার করা হয় তা অসম্পূর্ণ এবং ভোটারদেরকে সত্যিকারর্থেই তথ্য দিয়ে ক্ষমতায়িত করতে হলে এতে আরও কিছু বিষয় যোগ করা আবশ্যক। তাই হলফনামার বিধানটি সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে যদি নির্বাচন কমিশন হলফনামার ছকে পরিবর্তন এবং এগুলোর সঠিকতা যাচাইয়ের উদ্যোগ নেয়। আমরা মনে করি, হলফনামা যাচাই-বাচাই করার ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের রয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে বিচারপতি কাজী এবাদুল হক বলেন, ‘আবু ছাফা নাটক এবং দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর বাংলাদেশে নির্বাচনে প্রার্থী কর্তৃক হলফনামার বিধানটি কার্যকর হয়েছে। আজ এটিকে বাতিল করার জন্য একটি রাজনৈতিক দল দাবি তুলেছে। অথচ আমাদের নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য এবং প্রার্থীদের সম্পর্কে ভোটারদের বিস্তারিত অবগত হওয়ার জন্য হলফনামার বিধানটি অপরিহার্য।’