স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়ে চুপ মিয়ানমার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের আলোচনা করতে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে মিয়ানমার সফরসূচি চূড়ান্ত করেনি। আন্তর্জাতিক চাপে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানিয়ে চুপ রয়েছে দেশটি। যদিও এ সফরের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এদিকে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশে ঢল আরো বাড়ছে। বুধবারও সীমান্ত এলাকায় প্রায় ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় বসে থাকতে দেখা গেছে।

রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ২৩ অক্টোবর মিয়ানমার সফর করার কথা জানিয়ে ছিলেন। তার নেতৃত্বে সেদেশে পাঠানোর জন্য ৯ সদস্যের এক প্রতিনিধিদল ঠিক হয়ে আছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর গুরুত্বপূর্ণ এ সফর আর মাত্র চার দিন বাকি থাকলেও মিয়ানমার সফরের সময়সূচি চূড়ান্ত করে এ পর্যন্ত কিছুই জানায়নি।

সূত্র জানায়, রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার বিষয়ে আন্তর্জাতিক ব্যাপক চাপে মিয়ানমার আলোচনার জন্য বাংলাদেশকে লোক দেখানো একটি প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে। সুচির দফতরের মন্ত্রী কিয়া তিন্ত সোয়ে ঢাকায় এসে ২ অক্টোবর বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য একটি ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং’ কমিটি করে আলোচনার প্রস্তাব দেন। এজন্য সেদেশের মন্ত্রী কিয়া তিন্ত সোয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে আনুষ্ঠানিক সফরের আমন্ত্রণ (আমন্ত্রণপত্র) জানান। ওই আমন্ত্রণপত্রে ২০ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবরের মধ্যে সফরে যাওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর তিন দিনের (২৩-২৫ অক্টোবর) সফর ঠিক করে মিয়ানমারকে জানানো হয়েছে। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়। রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনার খসড়া, পারস্পরিক কিছু আলোচ্য বিষয় ও প্রতিনিধিদের তালিকাও পাঠানো হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাওর বার্তাকে বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মিয়ানমার সফরের সার্বিক প্রস্তুতি বাংলাদেশ নিয়ে রেখেছে। কিন্তু সফরের সময় ঘনিয়ে এলেও এ পর্যন্ত সফরসূচি ঠিক করে তাদের কিছুই জানায়নি। ওই (মিয়ানমার) তরফ থেকে সফরের বিষয়ে কোনো সাড়া নেই। তারা যেন চুপ করে আছে। তাছাড়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেলেও সেটিও রক্ষা করছে না দেশটি। উল্টো বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঢল বাড়ছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে গা বাঁচানোর কৌশল নিয়েছে দেশটি- এমনটাই ধারণা ওই কর্মকর্তার।

বাংলাদেশ সরকারের পাঠানো ৯ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এই প্রতিনিধি দলে রয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব, পুলিশ প্রধান, বিজিবি প্রধান, কোস্টগার্ড প্রধান, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের প্রধান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক) ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডিজি ইস্ট।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নতুন করে দমন অভিযান শুরুর পর ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৬ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। সীমান্ত পেরিয়ে প্রতিদিনই রোহিঙ্গারা আসছে, এখনো রাখাইনে দমন-পীড়ন চলার খবর মিলছে তাদের কাছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর