হাওর বার্তা ডেস্কঃ এ বছর হাওরাঞ্চলে আগাম বন্যায় কেবল ফসল নয়, মাছেরও বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। অনেক মাছ মারা গেছে, একই সঙ্গে ভেসে গেছে চাষের ছোট-বড় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। তবে ক্ষতি কাটিয়ে এখন হাকালুকি হাওর এলাকার জেলে ও মাছ ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফুটতে শুরু করেছে। কারণ, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ধরা পড়ছে আগের তুলনায় বেশি মাছ। স্থানীয় মৎস কর্মকর্তারাও বলছেন, এ বছর হাওরে মাছের উৎপাদন হবে বেশি।
স্থানীয় জেলেরা বলছেন, এবার হাকালুকি হাওরে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে নানা প্রজাতির মাছ। এর মধ্যে বিলুপ্তপ্রায় রানী মাছও ধরা পড়ছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। চমৎকার দেখতে এই মাছ ‘বউ মাছ’ নামেও পরিচিত। প্রতিকেজি দুই হাজার টাকা বা তার চেয়েও বেশি দামে বিক্রি হয় এই মাছ। রানী মাছের চাহিদা এতই বেশি যে, এই মাছের জন্য জেলে বা মাছ ব্যবসায়ীদের অগ্রিম অর্ডার দিয়ে রাখতে হয়।
এলাকার মৎসজীবী ও মৎস্য কর্মকর্তারা বলছেন, হাকালুকি হাওর মূলত মিঠা পানির মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র। এখানকার সুস্বাদু মাছের তালিকার অন্যতম শীর্ষে রয়েছে রানী মাছ। তবে মাছটি বিলুপ্তপ্রায় হয়ে পড়েছিল। ২০১২ সালে হাকালুকি হাওরে মৎস্য অভয়াশ্রম নির্মাণ করার পর থেকে এই মাছ আবার বংশবিস্তার শুরু করেছে। এ বছরে এসে এই মাছ ধরা পড়েছে গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
কেবল রানী মাছ নয়, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর থেকেই মাছ ধরা পড়ছে বেশি। বন্যার সময় হাওরে বিপুল পরিমাণ মাছ মারা যাওয়ায় মৎসজীবীরা বিপাকে পড়েছিলেন। তবে আগস্টের শেষ থেকে সেপ্টেম্বর মাসজুড়ে আবারও জেলেদের জালে ধরা পড়তে শুরু করেছে মাছ। তাতে স্বস্তি ফিরে এসেছে তাদের মধ্যে। দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় বেশি সময় পানিতে থাকতে পেরেছে বলেই এ বছর মাছের উৎপাদন বেশি হবে বলে জানিয়েছেন মৎস কর্মকর্তারা।
হাকালুকি পারের মৎস্যজীবী হিজরত আলী, কিরেন্দ্র দাস, জাকির হোসেন জানান, রানী মাছ তো এক সময় পাওয়াই যেত না। মাঝে-মধ্যে দুয়েকটা ধরা পড়ত জালে। তবে গত কয়েক বছরে আবার এই মাছের দেখা মিলতে শুরু করেছে। এই পরিমাণ এই বছরেই সবচেয়ে বেশি।
হিজরত আলী ও কিরেন্দ্র দাস বলেন, এক কেজি রানী মাছ ধরতে তিন থেকে চার দিন সময় লাগে। তাই এই মাছ কিনতে হলে তাদের আগে থেকে জানাতে হয়। প্রতিকেজি দুই হাজার টাকার নিচে এই মাছ বিক্রি হয় না।
কুলাউড়া উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. সুলতান মাহমুদ বলেন, ‘রানী মাছ বিলুপ্ত প্রজাতির তালিকায় ছিল। হাকালুকি হাওরে কয়েকটি অভয়াশ্রম বাস্তবায়নের ফলে এ মাছ আবার জেলেদের জালে ধরা পড়ছে। হাওরে মৎস্য অভয়াশ্রমের সংখ্যা বাড়ালে মাছের উৎপাদন আরও বাড়বে। তাছাড়া হাওর এলাকার মানুষের মাছের চাহিদা মিটিয়ে গোটা দেশে সরবরাহ করে বিদেশেও রফতানি সম্ভব হবে।’
এ বছরের মাছের উৎপাদন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ধারণা করা হচ্ছে, হাওরে এ বছর মাছের উৎপাদন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বাড়বে। গত সাত বছরের রেকর্ডও হতে পারে এবারের মাছ উৎপাদনে। ধান হারিয়ে কৃষকরা দিশেহারা হয়েছিল, তাদের মধ্যে এখন খানিকটা স্বস্তি ফিরে এসেছে। এবারের দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় মাছ ফিডিং, ব্রিডিং ও নার্সিংয়ের উপযুক্ত পরিবেশ পেয়েছে এবং বড় হওয়ার জন্য বেশি সময় পেয়েছে। এ কারণেই এবারে হাওরে মাছের উৎপাদন অনেক বেশি হবে।’