হাওর বার্তা ডেস্কঃ আবার শুরু হয়েছে রোহিঙ্গা-ঢল। ভোরে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে কমপক্ষে ১০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কক্সবাজারে এসে পৌঁছেছেন। বুচিডংয়ের রাখাইন পল্লি থেকে আসা এসব রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, আরো ৯০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় আছেন। এদিকে মিয়ানামারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং জোর দিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলিমরা মিয়ানমারের স্থানীয় বাসিন্দা নয়। তারা বাঙালি এবং বাংলাদেশ থেকে সেখানে গিয়েছে বলে তিনি দাবি করেছেন। অন্যদিকে মিয়ানমারের ‘ডি ফ্যাক্টো’ নেতা অং সান সু চি দেশটির জাতীয় সমন্বয় কমিটির সভায় সহিংসতা কবলিত রাখাইন রাজ্যে দ্রুত পুনর্বাসন কর্মসূচি গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন বলে গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে। গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে সামরিক অভিযান শুরুর পর বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় সাড়ে ৫ লাখ রোহিঙ্গা। মাঝখানে কয়েকদিন রোহিঙ্গাদের ঢল কিছটা কমে আসলেও চলতি সপ্তাহে তা আবার বেড়েছে।
জানা গেছে, গতকাল ভোরে মিয়ানমারের কুইয়ানচি বং, বাইলাখালী, সোজা পাড়া থেকে সীমান্ত দিয়ে আসা ১০ হাজার রোহিঙ্গা এখন বালুখালী ও কুতুপালং ক্যাম্পের আশ-পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবস্থান করছেন। স্থানীয় কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবীকে তাদের শুকনো খাবার বিতরণ করতে দেখা গেছে। গর্জনদিয়া সীমান্ত দিয়ে নাফ নদী পার হয়ে বালুখালীতে আশ্রয় নিয়েছেন নবী হোসেন মাস্টার।
বুচিডংয়ের মরিচ্ছং গ্রামের প্রভাবশালী এই ব্যক্তি জানান, বুচিডংয়ের রাখাইন পল্লির জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে লাগানো হয়েছে লাল রংয়ের সাইন বোর্ড। যেখানে লেখা হয়েছে এটি (মগ) বৌদ্ধদের আদি বাসস্থান। এখানে বাঙালির বসবাসের কোন অধিকার নেই। মাইকিং করে বলা হচ্ছে বৃহস্পতিবারের মধ্যে রাখাইন রাজ্য ত্যাগ না করলে তাদের করুণ পরিণতি হবে।
আইওএম’র প্রোগ্রাম অফিসার সৈকত বিশ্বাস বলেন, মিয়ানমারে নতুন করে সেনা অভিযানে তটস্থ হয়ে জীবন বাঁচাতে রোহিঙ্গারা পালিয়ে আসছে। রোহিঙ্গা নেতা ডাক্তার জাফর আলম জানান, ভোর রাতে প্রায় ১০ হাজার রোহিঙ্গা নাফ নদী পার হয়ে বালুখালী ও কুতুপালং ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। তারা বলছে আরো ৯০ হাজার রোহিঙ্গা এদেশে আসার জন্য পথে রয়েছে।
রোহিঙ্গারা বাঙালি, দাবি মিয়ানমার সেনাপ্রধানের:মিয়ানমারের সেনাবাহিনী প্রধান মিন অং হ্লাইং বলেছেন, রোহিঙ্গা মুসলিমরা মিয়ানমারের স্থানীয় বাসিন্দা নন। তাদের বাঙালি দাবি করে তিনি বলেন, ‘এই বাঙালিদের মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ নিয়ে আসেনি, উপনিবেশবাদীরা নিয়ে এসেছিল। তারা এখানকার স্থানীয় নয়, আর রেকর্ডে প্রমাণ আছে উপনিবেশিক আমলে তাদের রোহিঙ্গা বলা হত না, বাঙালি বলা হত।’ গত বুধবার মিয়ানমারের বৃহত্তম শহর ইয়াংগুনে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত স্কট মারসিয়লের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। মিন অং এর ফেসবুক পেজে বৃহস্পতিবার সকালে পোস্ট করা এক স্ট্যাটাস সূত্রে এ বৈঠকের খবর জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবে ইইউ: রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অতিমাত্রায় বল প্রয়োগের কারণে মিয়ানমারের শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে এই পদক্ষেপ নিচ্ছে ইইউ। জোটের পক্ষ থেকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, রাখাইন পরিস্থিতির উন্নতি না হলে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি জোরালোভাবে বিবেচনা করা হবে। এ সংক্রান্ত খসড়া চুক্তিটি ইইউ’র রাষ্ট্রদূতরা অনুমোদন করেছেন এবং আগামী সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে তা স্বাক্ষরিত হবে। উল্লেখ্য, মিয়ানমারের কাছে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম রফতানিতে আগে থেকেই ইইউ’র নিষেধাজ্ঞা ছিলো।
রাখাইনে পুনর্বাসন কর্মসূচি চান সু চি: মিয়ানমারের ‘ডি ফ্যাক্টো’ নেতা অং সান সু চি দেশটির সহিংসতা কবলিত রাখাইন রাজ্যে অবিলম্বে পুনর্বাসন কর্মসূচি গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন বলা হয়েছে। বুধবার নেপিডোতে দেশটির জাতীয় সমন্বয় কমিটির সভায় সু চি রাখাইনের বিভিন্ন এলাকায় মানবিক ত্রাণ পৌঁছানো, পুনর্বাসন ও উন্নয়নে কার্যকর ও দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান। তবে তিনি সেখানে সংঘটিত ‘জাতিগত নিধন’ এর শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বিষয়ে কোনও কথা বলেননি।