হাওর বার্তা ডেস্কঃ মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনী ও মগ সন্ত্রাসীদের নিপীড়নে খুন হয়েছেন অসংখ্য রোহিঙ্গা দম্পতি। সেই পাশবিকতার পর নিহতদের বেঁচে যাওয়া সন্তানেরা প্রতিবেশী কিংবা স্বজনদের সঙ্গে পালিয়ে আশ্রয় নেয় বাংলাদেশে। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে এ ধরনের প্রায় ১১ হাজার এতিম শিশুকে শনাক্ত করা হয়েছে। পিতা-মাতাহীন এসব শিশুর বেড়ে উঠা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে একটি বিশেষ সুরক্ষা অঞ্চল করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সেই বিশেষ অঞ্চলে বিশেষ যত্নে দেখভাল করা হবে এসব শিশুকে। বৃহস্পতিবার রাতে কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত এক সরকারি সমন্বয় সভা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এদিকে অব্যাহত আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনে চলমান সহিংসতার অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে বলে বিদেশি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।
কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই সমন্বয় সভায় এতিম রোহিঙ্গা শিশুদের ব্যাপারে বিশদ আলোচনা হয়। এ সময় রোহিঙ্গা বিষয়ক সমন্বয় কমিটির সদস্য সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক কবির বিন আনোয়ার বলেন, ‘আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মাঝে এতিম শিশুদের বিশেষ সুরক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে সমাজসেবা অধিদফতর। কিন্তু এরপরও রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া থেমে নেই। দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘রোহিঙ্গারা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়তে শুরু করেছিল। তবে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করায় রোহিঙ্গাদের ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়া থেমে গেছে।’ জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম, পুলিশ সুপার ড. একেএম ইকবাল হোসেন, সিভিল সার্জন ডা. আব্দুস সালামসহ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা এবং দেশি-বিদেশি সাহায্য ও উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় জানানো হয়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইতোমধ্যে সাত হাজার স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন স্থাপন করা হয়েছে। সার্বিক অগ্রগতি কার্যক্রমও সন্তোষজনক। এতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অপর মহাপরিচালক তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।
এর আগে বিকালে কবির বিন আনোয়ার কুতুপালং ক্যাম্প এলাকায় এতিম শিশুদের বিশেষ জোনের জন্য নির্ধারিত স্থান, কলেরা রোগের প্রতিষেধক খাওয়ানোর ক্যাম্প এবং সেনাবাহিনীর ত্রাণ কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। এ সময় জেলা প্রশাসকসহ জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
রাখাইনে সহিংসতার তদন্ত শুরু
রাখাইনে রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে অব্যাহত সহিংসতার অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। গত ২৫ আগস্ট থেকে পরিচালিত ওই অভিযানে সেনা সদস্যরা কোথাও নিয়ম ভেঙেছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। লেফটেন্যান্ট জেনারেল আয় উইনকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে বলে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
মিয়ানমারের সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের ফেসবুক পেজে শুক্রবার ওই তদন্তের তথ্য প্রকাশ করা হয়। সেখানে তিনি বলেছেন, বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারের সংবিধান অনুযায়ী সেনাবাহিনীর ওই অভিযান ছিল বৈধ।
রাখাইনে ৩০টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনা ক্যাম্পে হামলার পর সেনাবাহিনী ওই অভিযান শুরু করে। অভিযান শুরুর পর গত দেড় মাসে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসে। এসব রোহিঙ্গা প্রথম থেকেই গ্রামে গ্রামে অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি হত্যা ও লুটপাটের অভিযোগ করছে। তবে ওই হামলার জন্য রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের সংগঠন ‘আরসা’কে দায়ী করে আসছে মিয়ানমার সরকার।
‘নিরাপত্তা পরিষদ বৈঠকের নামে প্রহসনে লিপ্ত’
চট্টগ্রাম অফিস জানায়, আহলে সুন্নাত ওয়াল জমাআত সমন্বয় কমিটির উদ্যোগে শুক্রবার কক্সবাজারের উখিয়া থ্যাংকখালী তানজিমারখোলা-৬ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চতুর্থ দফা ত্রাণ বিতরণ করা হয়। এ সময় সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক আল্লামা এমএ মতিন বলেন, ‘নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলমানদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পুরোপুরিভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদ রোহিঙ্গা ইস্যুতে বারবার বৈঠকের নামে প্রহসনে লিপ্ত রয়েছে। তাদের এ প্রহসন বন্ধ করে রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার পদক্ষেপ নিতে হবে।’ এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা সরোয়ার আকবর, মাওলানা সালাউদ্দীন মো. তারেক, অধ্যক্ষ সালাউদ্দীন খালেদ প্রমুখ।