রোহিঙ্গারা এ অঞ্চলে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মিয়ানমারের নির‌্যাতনের মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের দ্রুত ফিরিয়ে দিতে না পারলে শুধু বাংলাদেশের নিরাপত্তার হুমকি নয়, এ ভারত-চীনসহ এ অঞ্চলে বিস্ফোরণের সৃষ্টি করতে পারে।

বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর যে গণহত্যা ও নির্যাতন চলছে তা তদন্তে বাংলাদেশে একটি নাগরিক কমিশন গঠন উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। এই কমিশনের চেয়ারম্যান করা হয়েছে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামছুল হুদাকে। আর সদস্য সচিব করা হয়েছে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিককে।

রোহিঙ্গাদের মাঝে লাখ লাখ টাকা বিলি করছে কিছু মৌলবাদী গোষ্ঠী- এমন অভিযোগ করে শামছুল হুদা বলেন, এসব বিষয় নিয়ন্ত্রণ না হলে তা বুমেরাং হবে, জঙ্গিবাদের বিস্তার লাভ করবে।

রোহিঙ্গারা এখন নিরাপত্তার জন্য চরম হুমকি বলে উল্লেখ করেন শামছুল হুদা। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ভেতর থেকে উগ্র জঙ্গিবাদ সৃষ্টি হবে না, এমন ভাবা যাবে না। এরা জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটাবে না, এটা বলা যাবে না। এরা মিয়ানমার থেকে নির‌্যাতনের শিকার হয়ে মার খেয়ে এসেছে, তারা বিস্ফোরণ ঘটাবে না তা বলা যাবে না।’

সংবাদ সম্মেলনে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, বার্মায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর চলমান গণহত্যা বিশ্ববিবেককে প্রকম্পিত করলেও এখন পর‌্যন্ত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ কাঙ্ক্ষিত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নির‌্যাতনের কারণে তাদের ভেতরে বিচ্ছিন্নতাবাদ, বিদ্রোহ ও জঙ্গি মৌলবাদ মাথা চাড়া দিচ্ছে। এটা শুধু বাংলাদেশ বা দক্ষিণ এশিয়ায় নয়, পুরো বিশ্বের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে।

অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, রাখাইনের রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সম্পর্ক নেই, বার্মা থেকেও মানুষ আরাকানে এসেছে। এদের আলাদা জাতিসত্তা আছে, তাদের আঞ্চলিক ভাষাও আছে, সেটা চাটগাঁয়ের মতো। এ কারণে তাদের বাংলাদেশি ভাবার কোনো কারণ নেই। এই সংকট নিরসনে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল আবদুর রশিদ বলেন, মানবতার পক্ষে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। মিয়ানমারে যে গণহত্যা হয়েছে, তার বিচার করতে না পারলে মানবতা বিপন্ন হবে। এই গণহত্যাকারীদের বিচার করতে বিশ্ববিবেককে পাশে পেতে চাই।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক সাবেক আইজিপি নূরুল আনোয়ার বলেন, শত বছর ধরে এই রোহিঙ্গারা রাখাইনে বসবাস করছে। তাদের বিতাড়ন করে মিয়ানমার মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, তাদের বিচার করতে হবে। ওই অঞ্চলে একটা নিরাপত্তা জোন করে রোহিঙ্গাদের তাদের এলাকায় পাঠানোর ওপর জোর দিতে হবে।

রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি সবচেয়ে বেশি উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার‌্য ডা. কামরুল হাসান খান বলেন, রোহিঙ্গারা তাদের দেশে কখনো এমবিবিএস ডাক্তার দেখেনি। তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। মিয়ানমার এইডস ঝুঁকিপূর্ণ দেশ, এ পর‌্যন্ত পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ১৯ জন এইডস রোগে আক্রান্ত শনাক্ত করা হয়েছে।

কামরুল হাসান বলেন, রোহিঙ্গারা দীর্ঘদিন থাকলে এ দেশে জঙ্গি সৃষ্টি হতে পারে। তাই তাদের দ্রুত দেশে ফিরে নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আলী শিকদার বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমার এগিয়ে আসবে না, তাদের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ দিতে হবে। রোহিঙ্গাদের দ্রুত ফিরিয়ে দিতে না পারলে তাদের মধ্য থেকে অপশক্তির জন্ম হবে। এই অঞ্চলের নিরাপত্তা অস্থিতিশীল হবে। মিয়ানমার যে গণহত্যা চালিয়েছে তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরলে তারা রোহিঙ্গাদের ফিরে নিতে বাধ্য হবে বলেও জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য দেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক অজয় রায়। তিনি বলেন, সব মিলিয়ে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ১২ লাখের ওপর। এই বিপুল পরিমাণ জনগোষ্ঠীকে কত দিন প্রতিপালন করবে সরকার। তাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে দিতে হবে। আন্তর্জাতিক চাপ ছাড়া বার্মাকে নমনীয় করা যাবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর