হাওর বার্তা ডেস্কঃ অনূর্ধ্ব-১৬ সাফে নেপালের কাছে হেরে বাংলাদেশের ফাইনালে ওঠা হয়নি। অনূর্ধ্ব-১৮ পর্যায়ে সেই নেপালই বড় ধাক্কা দিয়েছে কাল বাংলাদেশের শিরোপা স্বপ্নে।
যে ম্যাচ জিতে শিরোপা ট্রফির আরো কাছাকাছি চলে যাওয়ার কথা জাফর, রহমতদের। কাল সেই ম্যাচে নেপালের কাছে কিনা তারা হেরেই গেল। পুরো ম্যাচ প্রাধান্য নিয়ে খেলেও, বেশি গোলের সুযোগ তৈরি করেও লাভ হলো না। ভাগ্যের পরশ নিয়ে নেপালিরাই জিতে গেছে ২-১ গোলে।
তাতে শেষ ম্যাচে ভুটানকে হারালে এখনো অবশ্য খাতা-কলমে শিরোপা জেতার সম্ভাবনাটা খোলা আছে বাংলাদেশের। তখন মুখোমুখি ফলের হিসেব হবে। অন্য ম্যাচে ভারত নেপালকে হারালে শিরোপা উঠবে বাংলাদেশের হাতেই। তবে নেপাল জিতে গেলে কালকের এই হারের জন্যই আক্ষেপে পুড়তে হবে লাল-সবুজদের। এদিন বরং জয় নিয়ে শেষ ম্যাচে ভূটানীদের বিপক্ষে ১ পয়েন্ট তুলে নেওয়ার সমীকরণটাই ছিল সহজ।
সেই লক্ষ্যেই ঝাঁপিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু প্রথমার্ধেই গোলের তিন তিনটি সম্ভাবনা নষ্ট হয়। ওদিকে নেপাল প্রথম যে সুযোগটি পেয়েছিল তা কাজে লাগিয়েই এগিয়ে যায়। চতুর্থ সুযোগ পেয়ে সমতা ফেরায় বাংলাদেশ। এদিন সৈকত মাহমুদের বদলে দলে ঢুকেছিলেন আল আমিন। তিনিই সমতা ফেরানো গোলটি করেছেন হেডে। রহমত মিয়ার ফ্রিকিক ক্রসবারে লেগে ফিরে এলে ছোট বক্সের ওপর লাফিয়ে জোরালো হেডে সেই বল জালে পাঠিয়েছেন এই ফরোয়ার্ড। ম্যাচের তখন ৩০ মিনিট। এর মিনিট দশেক আগে অভিষেক রিজাল নেপালকে এগিয়ে দিয়েছিলেন রাজিন সুবাহর ক্রস পোস্টে ঠেলে।
এই ম্যাচে ডিফেন্সের পরীক্ষা হবে আগেই জানিয়ে রেখেছিলেন কোচ মাহবুব হোসেন রক্সি। প্রথম পরীক্ষাতেই তাঁর সেই ব্যাক লাইন আত্মসমর্পণ করেছে। রাজিনের ক্রসের সময় দ্বিতীয় পোস্টে অনেকটা আনমার্কড দাঁড়িয়ে ছিলেন অভিষেক। দেখে-শুনে বল দূরের পোস্টে ঠেলেছেন নেপালি ফরোয়ার্ড। তবে ইতিবাচক বিষয় ছিল ঐ গোলেও একেবারেই ছন্দ হারায়নি বাংলাদেশ। সেই আত্মবিশ্বাসেই আসে সমতা ফেরানো গোলটি। আল আমিনের সেটি দ্বিতীয় গোলও হতে পারত। ১২ মিনিটের সময় রহমতের একটা লং থ্রো-ইনে বক্সের ভেতর বল পেয়ে পোস্টে ঠেলেছিলেন, কিন্তু নেপালি গোলরক্ষক পা বাড়িয়ে সেই গোল বাঁচিয়ে দিয়েছেন। তার আগে ৩০ গজ দূর থেকে রহমতেরও নেওয়া ফ্রিকিকটাতেও গোল হতে পারতো, সেটা বাঁচিয়েছেন তিনি অনেকটা কপালগুণে। একটু এগিয়ে এসে বলে ফিস্ট করলেও তা ক্রসবার পেরিয়ে যায়নি, পোস্টের সামনে ড্রপ পড়ে অদ্ভুতভাবে তা আপনাতেই বেরিয়ে যায়। প্রতিপক্ষের অর্ধে দাপিয়ে খেলেও বাংলাদেশের তাই গোলের জন্য অপেক্ষা বাড়তে থাকে। তখনই স্রোতের বিপরীতে গোলটা হজম। সেটা ফিরিয়ে দিয়ে অবশ্য চাংমিথাং স্টেডিয়ামে দ্বিতীয়ার্ধের খেলা জমিয়েও দিয়েছিল বাংলাদেশের তরুণরা।
কিন্তু বিরতির পর সেই লড়াই শুরুর মিনিট কয়েকের মধ্যেই বড় আঘাত হয়ে আমে রাইটব্যাক বিশ্বনাথের লাল কার্ড। প্রতিপক্ষ এক খেলোয়াড়ের মুখে কনুই চালিয়ে মাঠ থেকে বেরিয়ে যেতে হয় তাঁকে। ১০ জনের দলের বিপক্ষে এরপর স্বাভাবিকভাবেই চড়াও হয় নেপাল। একটা লং বলে বাংলাদেশের গোলরক্ষককে একা পেয়েও অবশ্য গোল করতে পারেননি রাজিন। অন্য প্রান্তে দুর্ভাগা বাংলাদেশ। মোহাম্মদ স্বাধীনের সঙ্গে ওয়ান টু খেলে গোলমুখ খুলে ফেলেছিলেন বিপলু আহমেদ। কিন্তু তাঁর প্লেসিং শট সরাসরি গিয়ে আঘাত করে সাইড পোস্টে। ৮০ মিনিটে নেপালের যে গোলটিতে হেরেছে বাংলাদেশ, সেটিতেও তাদের ভাগ্যের পরশ, আর বাংলাদেশের জন্য হতাশা। মাঝরেখার একটু ভেতরে ফ্রিকিক পায় নেপাল। সেখান থেকে রোমান লিম্বুর শট উড়ে উড়ে শেষ মুহূর্তে নিচু হয়ে ক্রসবার ঘেঁষে জালে জড়াবে কে ভাবতে পেরেছিল। বাংলাদেশের গোলরক্ষক কিছুটা এগিয়ে ছিলেন, কিন্তু তিনিও কি ভাবতে পেরেছিলেন সেখান থেকে সরাসরি গোলে চেষ্টা করবেন রোমান! নিয়তিতে যে হার লেখা, সেটা ঠেকায় কে। অনূর্ধ্ব-১৮ সাফের শেষ দিনে কাল শুধু বাংলাদেশ নয় চার দলের সামনেই শিরোপার সুযোগ। বাংলাদেশ-ভুটান আর ভারত-নেপাল ম্যাচে যারা জিতবে তাদেরই পয়েন্ট হবে সমান ৯, এরপর মুখোমুখি লড়াইয়ের হিসেবে হবে শিরোপার নিষ্পত্তি।