হাওর বার্তা ডেস্কঃ নির্বাচন কমিশনের চলমান সংলাপে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (বাংলাদেশ ন্যাপ) আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা ও নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে।
সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে এসব দাবি তুলে ধরেন ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি।
এর আগে বেলা ১১টার সময় ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়ার নেতৃত্বে ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নেয়। নির্বাচন ভবনের সম্মেলনকক্ষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে এই সংলাপ শুরু হয়।
তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে চলমান সংসদ বিলুপ্ত করা, নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা, নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনসহ নির্বাচন কমিশনকে ২১ দফা প্রস্তাব দিয়েছে ন্যাপ।
দলটি কমিশনকে জানিয়েছে, কোনো দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। আর একটি সংসদ বহাল থাকা অবস্থায় আরেকটি সংসদ নির্বাচন হলে সকল প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করা কঠিন। অন্যদিকে শাসকগোষ্ঠী আইনশৃংখলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিতর্কিত করার ফলে সেনাবাহিনীই হচ্ছে সর্বশেষ জনগণের আস্থার জায়গা।
বাংলাদেশ ন্যাপের ২১ দফা প্রস্তাবগুলো হলো- নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করা, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পূর্বেই জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করা, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর পরই বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন করা এবং তাদের নির্বাচন পরবর্তী ১৫ দিন পর্যন্ত মাঠে রাখা, অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা, নির্বাচনে অবৈধ অর্থ, কালো টাকা ও পেশীশক্তি ব্যবহার বন্ধ, নিরপেক্ষ স্থানে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা, ভোটার ও প্রার্থীর এজেন্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ভোটকেন্দ্রে ভোট গণনা শেষে প্রার্থীদের এজেন্টদের স্বাক্ষরসহ ভোট কেন্দ্রের ভোটের ফলাফল ঘোষণা করা। এ ছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অন্তত এক বছর আগে থেকেই সকল দলের সমান নিশ্চিত করতে হবে, ‘না’ ভোটের বিধান সংযুক্ত করা, প্রবাসীদের ভোটাধিকার দিতে হবে, ইভিএম ব্যবহারের বিষয়টি বাদ দেওয়া।
প্রাক্তন মন্ত্রী-এমপিদের সুবিধা ও নিরাপত্তা বাতিল করা এবং সকল প্রার্থীকেই সেই নিরাপত্তা দিতে হবে, যে সকল জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা বিতর্কিত, তাদের নির্বাচনী কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা, গণমাধ্যম কর্মীদের সকল কেন্দ্রে উন্মুক্ত প্রবেশাধিকার দিতে হবে, স্বাধীন, স্বতন্ত্র ও ক্ষমতাবান সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, জনবল ও বাজেটের দিক থেকেও নির্বাচন কমিশনের জন্য সরাসরি প্রয়োজনীয় বরাদ্দ প্রাপ্তি নিশ্চিত করা, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দল ও জোট সমূহের সারা দেশে প্রাপ্ত ভোটের ভিত্তিতে আনুপাতিক হারে প্রতিনিধি নির্বাচনের বিধান চালু করা, ভোটারের সংখ্যা অনুযায়ী নির্বাচনী এলাকা পুনঃনির্ধারণের কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
৭ কোটি জনসংখ্যার রাষ্ট্রে ৩০০ সংসদীয় আসন দিয়ে যাত্রা শুরু হলেও এখন জনসংখ্যা প্রায় ১৮ কোটি। এই বিষয়টি সামনে রেখে আসন সংখ্যা বৃদ্ধি ও জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে সংসদীয় আসন নির্ধারণ করা এবং রাজধানী ও শহরকেন্দ্রীক জনসংখ্যা অনিয়ন্ত্রিত বিধায় এসব এলাকায় আসন সংখ্যা একবারের নির্ধারণ করে দেওয়া, আরপিওর এসব অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক ধারাসমূহ বাতিল করা, নির্বাচনে ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতার ব্যবহার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো, নির্বাচনে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকেরা যাতে নির্বিঘ্নে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে পারেন তা নিশ্চিত করা, জাতীয় নির্বাচনে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বিধান চালু করা এবং গত নির্বাচন সমূহের অভিজ্ঞতার আলোকে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রার্থী ও দলসমূহের নির্বাচনী আচরণবিধি ঢেলে সাজানো দরকার।
এদিকে আজ বিকেল ৩টায় প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের (পিডিপি) সঙ্গে সংলাপে বসবে ইসি।