ঢাকা ১১:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যে স্কুলে ভর্তির আগে সাঁতার জানতে হয়

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:২১:২৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭
  • ২৯২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ শুষ্ক মৌসুমে কখনও গলা কখনও বুক পানি পেরিয়ে নিয়মিত আসতে হয় বিদ্যালয়ে। প্রতিদিন ভিজা কাপড়ে বিদ্যালয় আসতে গিয়ে ছাত্রছাত্রীরা অনেকে পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। বর্ষা মৌসুমে নদীর ওপারের প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে পাহাড়ি এলাকার সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা শিক্ষায় আরো পিছিয়ে পড়ে। বিদ্যালয়ে কমে যায় উপস্থিতি। একান্ত আলাপকালে এমনই জানালেন বান্দরবানের লামা উপজেলার দুর্গম এম. হোসেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিয়াবুল হক।
তিনি আরো বলেন, এই বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আগে শিশুদের সাঁতার জানতে হয়। যেখানে ছোট ছোট শিশুরা প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খাল পার হয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা করে। গত ২৭শে আগস্ট বৃহস্পতিবার পারাপারের সময় পানি বেশি থাকায় দুজন শিক্ষার্থী খালে ভেসে যায়। পরে সহপাঠীদের চিৎকারে স্থানীয়রা উদ্ধার তাদের করে। এই চিত্র প্রতিদিনের। বিদ্যালয়টির তিন পাশে ঘিরে রেখেছে এই পোপা খালটি। সমস্যা উত্তোরণে খালটির ওপর একটি ব্রিজ অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। ব্রিজটি হলে ছাত্রছাত্রীদের পাশাপাশি ওপারের কয়েক হাজার মানুষের যাতায়াতের সুবিধা হবে। বর্তমানে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় দুই শতাধিক। সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কয়েক বছর আগে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হয়েছে। স্কুলটি উপজেলার সদর থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার পূর্বে লামা সদর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের দুর্গম পোপা মৌজায় অবস্থিত। সম্প্রতি শিক্ষা অধিদপ্তরের পিডিবি-৩ প্রকল্পের আওতায় ৫ রুম বিশিষ্ট শ্রেণিকক্ষের দোতলা একটি আধুনিক ভবন হয়েছে। বিদ্যালয়টি লামা সদর ও রূপসীপাড়া ইউনিয়নের সীমানায় হওয়ায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী নদীর ওপার থেকে আসে। নদীর ওপারের অংহ্লাডুরী মার্মাপাড়া, ছিচাখইন মার্মাপাড়া, কলার ঝিরির মুখ, লক্ষণঝিরি, তাউপাড়া, নয়াপাড়া ও এম. হোসেনপাড়া থেকে নদী পেরিয়ে শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রবিউল আলম ও জমাইতি ত্রিপুরা জানায়, আমাদের খুব কষ্ট হয় খাল পেরিয়ে স্কুলে আসতে। ছোটরা নদীতে ঠাঁই পায় না। বড়রা কোলে করে তাদের পার করে। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি রবিউল আলম বলেন, পাহাড় থেকে নেমে আসা পানির কারণে পোপা খালটি প্রায় সময় ভরপুর থাকে। পাহাড়ি খাল হওয়ায় খালটিতে স্রোত অনেক বেশি। তাছাড়া বর্ষা মৌসুমে খালটিতে স্রোত আরো বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। যার ফলে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমে যায়। অংহ্লাডুরী মার্মাপাড়ার বাসিন্দা ও অভিভাবক মংএথোয়াই মার্মা বলেন, খালের ওপারের মানুষের পারাপারের কোনো মাধ্যম নেই। শেষ অবলম্বন হচ্ছে সাঁতার। সাঁতার না জানলে এপার থেকে ওপারে যাওয়া আসা বন্ধ হয়ে যায়। স্কুলের শিক্ষার্থীরা গায়ের জামা খুলে সাঁতার দিয়ে খালটি পার হয়ে তারপর স্কুলের ইউনির্ফম পরে বিদ্যালয়ে আসে। তাই এই এলাকার মানুষের দুঃখ লাঘবের জন্য এবং শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি থেকে রেহাই দেয়ার লক্ষ্যে মানবিক কারণে পোপা খালের ওপর ব্রিজ নির্মাণ করা অতীব প্রয়োজন। লামা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিন্টু কুমার সেন জানান, শিক্ষার্থীরা যাতে নির্ভয়ে বিদ্যালয়ে আসতে পারে এবং মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পোপা খালের ওপর জনস্বার্থে একটি ব্রিজ নির্মাণের বরাদ্দ দেয়ার জন্য পার্বত্য প্রতিমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার যতীন্দ্র মোহন মণ্ডল বলেন, বিষয়টি অনেকবার উপজেলা শিক্ষা মিটিংয়ে বলেছি। ব্রিজটির জন্য সব সময় বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কম থাকে। লামা উপজেলা চেয়ারম্যান থোয়াইনু অং চৌধুরী বলেন, বিষয়টি আসলে দুঃখজনক। পাহাড়ি এলাকা হিসেবে এমনিতে লামা উপজেলা শিক্ষায় পিছিয়ে আছে। তারপর এরকম সমস্যাগুলো শতভাগ প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে প্রধান অন্তরায়। দ্রুত সমস্যাটি সমাধানের লক্ষ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

যে স্কুলে ভর্তির আগে সাঁতার জানতে হয়

আপডেট টাইম : ০৪:২১:২৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ শুষ্ক মৌসুমে কখনও গলা কখনও বুক পানি পেরিয়ে নিয়মিত আসতে হয় বিদ্যালয়ে। প্রতিদিন ভিজা কাপড়ে বিদ্যালয় আসতে গিয়ে ছাত্রছাত্রীরা অনেকে পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। বর্ষা মৌসুমে নদীর ওপারের প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে পাহাড়ি এলাকার সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা শিক্ষায় আরো পিছিয়ে পড়ে। বিদ্যালয়ে কমে যায় উপস্থিতি। একান্ত আলাপকালে এমনই জানালেন বান্দরবানের লামা উপজেলার দুর্গম এম. হোসেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিয়াবুল হক।
তিনি আরো বলেন, এই বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আগে শিশুদের সাঁতার জানতে হয়। যেখানে ছোট ছোট শিশুরা প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খাল পার হয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা করে। গত ২৭শে আগস্ট বৃহস্পতিবার পারাপারের সময় পানি বেশি থাকায় দুজন শিক্ষার্থী খালে ভেসে যায়। পরে সহপাঠীদের চিৎকারে স্থানীয়রা উদ্ধার তাদের করে। এই চিত্র প্রতিদিনের। বিদ্যালয়টির তিন পাশে ঘিরে রেখেছে এই পোপা খালটি। সমস্যা উত্তোরণে খালটির ওপর একটি ব্রিজ অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। ব্রিজটি হলে ছাত্রছাত্রীদের পাশাপাশি ওপারের কয়েক হাজার মানুষের যাতায়াতের সুবিধা হবে। বর্তমানে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় দুই শতাধিক। সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কয়েক বছর আগে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হয়েছে। স্কুলটি উপজেলার সদর থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার পূর্বে লামা সদর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের দুর্গম পোপা মৌজায় অবস্থিত। সম্প্রতি শিক্ষা অধিদপ্তরের পিডিবি-৩ প্রকল্পের আওতায় ৫ রুম বিশিষ্ট শ্রেণিকক্ষের দোতলা একটি আধুনিক ভবন হয়েছে। বিদ্যালয়টি লামা সদর ও রূপসীপাড়া ইউনিয়নের সীমানায় হওয়ায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী নদীর ওপার থেকে আসে। নদীর ওপারের অংহ্লাডুরী মার্মাপাড়া, ছিচাখইন মার্মাপাড়া, কলার ঝিরির মুখ, লক্ষণঝিরি, তাউপাড়া, নয়াপাড়া ও এম. হোসেনপাড়া থেকে নদী পেরিয়ে শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রবিউল আলম ও জমাইতি ত্রিপুরা জানায়, আমাদের খুব কষ্ট হয় খাল পেরিয়ে স্কুলে আসতে। ছোটরা নদীতে ঠাঁই পায় না। বড়রা কোলে করে তাদের পার করে। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি রবিউল আলম বলেন, পাহাড় থেকে নেমে আসা পানির কারণে পোপা খালটি প্রায় সময় ভরপুর থাকে। পাহাড়ি খাল হওয়ায় খালটিতে স্রোত অনেক বেশি। তাছাড়া বর্ষা মৌসুমে খালটিতে স্রোত আরো বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। যার ফলে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমে যায়। অংহ্লাডুরী মার্মাপাড়ার বাসিন্দা ও অভিভাবক মংএথোয়াই মার্মা বলেন, খালের ওপারের মানুষের পারাপারের কোনো মাধ্যম নেই। শেষ অবলম্বন হচ্ছে সাঁতার। সাঁতার না জানলে এপার থেকে ওপারে যাওয়া আসা বন্ধ হয়ে যায়। স্কুলের শিক্ষার্থীরা গায়ের জামা খুলে সাঁতার দিয়ে খালটি পার হয়ে তারপর স্কুলের ইউনির্ফম পরে বিদ্যালয়ে আসে। তাই এই এলাকার মানুষের দুঃখ লাঘবের জন্য এবং শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি থেকে রেহাই দেয়ার লক্ষ্যে মানবিক কারণে পোপা খালের ওপর ব্রিজ নির্মাণ করা অতীব প্রয়োজন। লামা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিন্টু কুমার সেন জানান, শিক্ষার্থীরা যাতে নির্ভয়ে বিদ্যালয়ে আসতে পারে এবং মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পোপা খালের ওপর জনস্বার্থে একটি ব্রিজ নির্মাণের বরাদ্দ দেয়ার জন্য পার্বত্য প্রতিমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার যতীন্দ্র মোহন মণ্ডল বলেন, বিষয়টি অনেকবার উপজেলা শিক্ষা মিটিংয়ে বলেছি। ব্রিজটির জন্য সব সময় বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কম থাকে। লামা উপজেলা চেয়ারম্যান থোয়াইনু অং চৌধুরী বলেন, বিষয়টি আসলে দুঃখজনক। পাহাড়ি এলাকা হিসেবে এমনিতে লামা উপজেলা শিক্ষায় পিছিয়ে আছে। তারপর এরকম সমস্যাগুলো শতভাগ প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে প্রধান অন্তরায়। দ্রুত সমস্যাটি সমাধানের লক্ষ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।