হাওর বার্তা ডেস্কঃ ম্যাচ শেষে আনুষ্ঠানিকতার সৌজন্য করমর্দনেও প্রচণ্ড অনীহা যেন কৃষ্ণাদের। কোনোরকমে মাঠ ছেড়ে বের হতে পারলেই যেন বাঁচে। এমন বড় পরাজয় কি সহজে মেনে নেওয়া যায়!
প্রতিপক্ষ শক্তিশালী উত্তর কোরিয়া, যাদের জাতীয় দলের ফিফা র্যাঙ্কিং ১০। সেখানে বাংলাদেশ ১০৬-এ। দলটি চারবার খেলেছে বিশ্বকাপে। বয়সভিত্তিক অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপেও কোরিয়া দুবারের চ্যাম্পিয়ন। চ্যাম্পিয়ন বর্তমান টুর্নামেন্টেও। এমন দলের কাছে হারটা অনুমিতই ছিল বাংলাদেশের।
উত্তর কোরিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশও জয়ের আশা করেনি। তবে একটু ভালো ফুটবল উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কৃষ্ণা-সানজিদারা। কিন্তু ‘ভালো ফুটবল’ দূরে থাক, সারাক্ষণ কোরীয় মেয়েদের পেছন পেছন দৌড়াল কৃষ্ণা-স্বপ্নারা।
চনবুরি স্টেডিয়ামে কাল টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রথম ম্যাচে উত্তর কোরিয়ার কাছে বাংলাদেশ বিধ্বস্ত হয়েছে ৯-০ গোলে। কোরিয়ান ফরোয়ার্ড কিম কিয়ং ইয়ংকে সামলাতেই হিমশিম খেয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। ৯ গোলের ৫টিই করেছে কিম। তবে ঢাকায় গত বছর টুর্নামেন্টের বাছাইপর্বে যেমন খেলেছিল, সেটির ধারেকাছেও কাল যেতে পারেনি বাংলাদেশের মেয়েরা।
অথচ এক বছর ধরে টানা অনুশীলন করেছে এই টুর্নামেন্টে ভালো খেলবে বলে। চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, সিঙ্গাপুরে গিয়ে ২২টি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে। এভাবে প্রস্তুতি নেওয়ায় মাঠের ফুটবলে লড়াইয়ের প্রত্যাশা করেছিলেন কোচ গোলাম রব্বানী। কিন্তু প্রথম ম্যাচেই অসহায় আত্মসমর্পণ!
কাল ম্যাচের দিনও অনুশীলন করেছে বাংলাদেশ দল। সকালে অন্তত ৪৫ মিনিট মেয়েদের অনুশীলন করিয়েছেন কোচ। বাফুফের টেকনিক্যাল ও স্ট্র্যাটেজিক ডিরেক্টর পল স্মলির সিদ্ধান্তেই হয়েছে অনুশীলন, এ নিয়ে দলের মধ্যে রয়েছে অসন্তোষ। বড় হারের পেছনে এসবেরও দায় দেখছেন অনেকে। স্মলির এমন সিদ্ধান্তে এএফসির অনেক কর্মকর্তাও হাসাহাসি করেছেন চনবুরিতে।
এমনিতেই শারীরিক গড়নে, উচ্চতায়, শক্তিতে, বল ড্রিবলিংয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশের মেয়েরা। তবে খেলায় রক্ষণভাগের দুর্বলতা ছিল চোখে পড়ার মতো। বাংলাদেশ অন্তত তিনটি গোল খেয়েছে ‘অনিয়মিত’ গোলরক্ষক রুকসানার ভুলে। রুকসানাকে একাদশে রেখেছিলেন কোচ গোলাম রব্বানী। ৫৮ মিনিটে তাঁকে বদলে যখন নিয়মিত গোলরক্ষক মাহমুদাকে মাঠে নামানো হলো—৭টি গোল খাওয়া সারা!
ম্যাচের আট মিনিটেই বাংলাদেশের জালে ২ গোল দিয়ে পার্থক্যটা বুঝিয়ে দেয় উত্তর কোরিয়া। ৩৩ মিনিটে বাংলাদেশ খেয়েছে ৪ গোল! এরপর থেকে বক্সে ঢুকেই গোল করে বেরিয়ে এসেছে কোরিয়ার মেয়েরা।
বিশ্বমানের এই দলের সঙ্গে কখনোই সমানতালে দৌড়াতে পারেনি কৃষ্ণারা। পুরো ম্যাচে মাত্র দুবার উত্তর কোরিয়ার বক্সে ঢুকতে পারে বাংলাদেশ! পোস্টে কোনো শটই নিতে পারেনি। কোরিয়ার গোলরক্ষক সন গুমের হাত থেকে একবার বল বেরিয়ে গেলেও কৃষ্ণা ও স্বপ্নার ভুল-বোঝাবুঝিতে গোলের সেই সম্ভাবনাও নষ্ট হয়।
কিম কিয়ং ইয়ংয়ের ৫ গোলের পাশে রি সিও জিয়ং ২টি গোল করেছে। একটি করে গোল কিম উন উকে ও উন জি হুয়ার। গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ম্যাচ আগামী পরশু, প্রতিপক্ষ জাপান। দুঃস্বপ্নের এই হারটা ভুলে ওই ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াতে চায় বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ: রুকসানা (মাহমুদা), শিউলি, শামসুন নাহার, নার্গিস (রত্না), মাসুরা, সানজিদা, মৌসুমী (মনিকা), মারিয়া, আঁখি, স্বপ্না, কৃষ্ণা।