হাওর বার্তা ডেস্কঃ ১০ বছর কম সময় নয়। কিন্তু ২০০৭ সালে শুরু হওয়া বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ বা পেশাদার ফুটবল লিগটা আজও শুধু নামেই পেশাদার। বাস্তবে এটি অপেশাদারির চূড়ান্ত উদাহরণ। যখন-তখন খেলা বন্ধ। একেক সময় একেক নিয়ম। পেশাদারি কাঠামো নেই কোনো ক্লাবেরই। থাকবে কীভাবে? দৈনিক বাজার করার টাকা জোগাড় করতেই হিমশিম খায় অনেক ক্লাব।
তবু পেশাদার লিগ নাম দিয়ে একটা লিগ চলছে বাংলাদেশের শীর্ষ ফুটবলে। যেখানে খেলার বড় শর্ত, নিজস্ব স্টেডিয়াম বা ভেন্যু থাকতে হবে। ক্লাবের অনুশীলন মাঠ থাকা চাই। তবে চাইলে একটি স্টেডিয়ামকে একাধিক দল ভেন্যু করতে পারে। ইন্টার ও এসি মিলানের মতো দল যেমন সান সিরো স্টেডিয়াম ব্যবহার করে আসছে। তবে বাংলাদেশে ব্যতিক্রম। বলতে গেলে একটি স্টেডিয়ামেই বন্দী এ দেশের কথিত পেশাদার লিগ!
এই অবস্থা থেকে বেরোতে ক্লাব চাইলে ঢাকার বাইরে স্টেডিয়াম নিতে পারে। কিন্তু শর্তের শৈথিল্যে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামকে ভেন্যু দেখায় প্রায় সব ক্লাব। আর তাই পেশাদার লিগে শর্ত মেনে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে খেলার নিয়মটা স্রেফ কাগুজে নিয়মই হয়ে আছে। অনুশীলন মাঠ তো এদেশে চিরকালীন এক সমস্যাই। অনেকের অনুশীলন মাঠ নেই। শর্তানুযায়ী মাঠ অবশ্য ভাড়া নেওয়া যায়। কিন্তু অনেক ক্লাব আছে যাদের এ কাজেও অনীহা। তথাকথিত বড় দল পর্যন্ত যাযাবরের মতো এদিক-ওদিক ঘোরে। সামান্য অনুশীলনের আশায় রমনা পার্ক বা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যায়।
পেশাদার কাঠামোয় ক্লাবের নিজস্ব ক্লাব ভবন থাকা জরুরি নয়। তবে সচিবালয় আবশ্যক। বাংলাদেশে সব শীর্ষ ক্লাবেরই তা নামমাত্র হলেও আছে। অভাব স্থায়ী আবাসনের। প্রায় প্রতিটি ক্লাবই নিজস্ব যুব দল না গড়ে শর্ত ভাঙছে। এ কারণে বাফুফে দুটি যুব টুর্নামেন্টের বেশি করতে পারেনি।
দলের প্রধান কোচের এএফসি ‘বি’ সনদ বাধ্যতামূলক। সহকারী কোচের জন্য তা যদিও বাধ্যতামূলক নয়, তবে থাকলে তাঁর অন্তত ‘সি’ সনদ থাকতে হবে। এই শর্ত অবশ্য পূরণ করেছে সব দলই। বাইলজ অনুযায়ী একটি দলে প্রধান কোচ ও ম্যানেজার থাকতেই হবে। সহকারী কোচ বাধ্যতামূলক না হলেও সব দলেরই তা আছে। খেলোয়াড় ও কোচের সঙ্গে লিখিত চুক্তি বাধ্যতামূলক। গোঁজামিল দিয়ে হলেও ক্লাবগুলো চুক্তিপত্রটা অবশ্য ফুটবল ফেডারেশনকে দেয়। কোনোভাবে জোগাড় করে আবশ্যকীয় নিরীক্ষিত প্রতিবেদনও ফেডারেশনকে দেয় ক্লাবগুলো। ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বা সিইও, বিপণন কর্মকর্তা ও সমন্বয়কারী থাকা জরুরি। বিপণন কর্মকর্তার জন্য এএফসি মাসে মাসে কিছু টাকা দিত, অবিশ্বাস্যভাবে টাকা পেয়েও ক্লাব বিপণন কর্মকর্তা নেয়নি।
বাফুফেকে ‘ম্যানেজ’ করে দেশের পেশাদার লিগে হয়তো খেলা যায়, কিন্তু এএফসি কাপে খেলার শর্ত অনেক কঠিন। ডাক্তার ও ফিজিও তখন থাকতেই হয়। খেলোয়াড়দের মেডিকেল রিপোর্ট এএফসিকে দিতে হয় আগেই। বাংলাদেশের দু-তিনটি ক্লাব ছাড়া এসব অন্যদের নেই। যাদের আছে, খণ্ডকালীন। ক্লাবের যুবদল ও যুব পরিকল্পনার তো ছিটেফোঁটাও নেই। ক্লাবভিত্তি কতটা নড়বড়ে একটা উদাহরণেই বোঝা যাবে। এএফসি কাপে খেলতে গত ২২ আগস্ট পর্যন্ত অনলাইনে ক্লাব লাইসেন্সিং ফরম পূরণ করার সুযোগ নিয়েছে মাত্র তিনটি ক্লাব ঢাকা আবাহনী, মোহামেডান ও নবাগত সাইফ স্পোর্টিং। শেখ জামাল, শেখ রাসেল সব কাগজ দিতে পারেনি। চট্টগ্রাম আবাহনী ফর্মই পূরণ করেনি। শেষোক্ত তিনটি দলের কেউ চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেলে লজ্জাজনকভাবে এএফসি কাপে খেলতে পারবে না।
ভারত পাঁচ বছর এএফসিকে ঠেকিয়ে রেখে পেশাদার লিগ আই লিগ চালু করেছে ১০ বছর আগে। তারপরও সব শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় কলকাতা মোহামেডান ও ইউনাইটেড স্পোর্টস আই লিগ থেকে অবনমিত হয়ে গেছে। পেশাদারির ব্যাপারে এএফসি বেশ কঠোর এখন। তারা চায় সব ক্লাবের আইনগত নিবন্ধন। বাংলাদেশের সব ক্লাবেরই তা আছে। প্রিমিয়ারের সাতটি ক্লাব লিমিটেড কোম্পানি। দুই আবাহনী, মোহামেডান, শেখ রাসেল, শেখ জামাল, ব্রাদার্স, সাইফ। অন্যগুলো সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বা সরকারি সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে নিবন্ধিত। এসব ব্যাপারে অগ্রগতি হচ্ছে। তবু এখনো পেশাদারি থেকে হাজার মাইল দূরে বাংলাদেশের ক্লাব ফুটবল।
প্রিমিয়ার লিগে খেলার শর্ত
নিজেদের স্টেডিয়াম
নিজস্ব অনুশীলন মাঠ
ক্লাব অফিস
প্রধান কোচের এএফসি ‘বি’ সনদ
সহকারী কোচ থাকলে ‘সি’ সনদ
ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক, সমন্বয়কারী, বিপণন কর্মকর্তা
ক্লাবে আর্থিক প্রতিবেদন হবে নিরীক্ষিত
যুব দল
ক্লাবের আইনগত সত্তা