হাওর বার্তা ডেস্কঃ নীলফামারীর বিভিন্ন হাটবাজারে কোরবানির গরু উঠতে শুরু করেছে। তবে কেনা-বেচা জমে উঠেনি এখনো। কোরবানির হাটে এবারে ক্রেতার চেয়ে দালালের সংখ্যাই বেশি বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা। এছাড়া বন্যার কারণে এলাকার মানুষ চরম দুর্দশায় পড়েছেন।
এবারের ভয়াবহ বন্যায় নীলফামারীর সৈয়দপুরে কৃষকদের ঘরবাড়ি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। ফলে তাদের হাতে নগদ টাকা-পয়সার চরম অভাব দেখা দিয়েছে। এ কারণে যে সব কৃষক এককভাবে কোরবানির গরু দিতেন তারা এখন ভাগে কোরবানি দেয়ার চিন্তা করে হাটে এসেছেন।
ঢেলাপীর, তারাগঞ্জ, বেনীরহাট ঘুরে দেখা গেছে, গরু হাটে নিয়ে আসার আগেই দালাল গরুর দড়ি ধরে নিয়ে দরদামে গরু হাতে নিচ্ছেন দালালরা। এরপর মালিক সেজে সেই গরু বেশি দামে বিক্রি করে গরুর মালিককে কম দেওয়ার কারণে প্রায় বচসা হচ্ছে। ফলে হাটগুলোতে দালালদের দৌরাত্ম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েই চলেছে।
নীলফামারীর সৈয়দপুরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নওশাদ ২ লাখ টাকায় ঢেলাপীর হাটে একটি ষাড় কেনে পিকআপে নিয়ে যান। তিনি বলেন, গরুর দাম এবারে মোটামুটি সহনীয় তবে হাটে দালালদের দাপটে ক্রেতারা অসহায় হয়ে পড়েছেন।
এদিকে বন্যার পর মধ্য ও নিম্ন মধ্যবিত্তরা খুবই কষ্টে আছে। গ্রামে চুরি ও ছিনতাই বাড়ছে। লোকজন পেটের জ্বালায় হাঁস, মুরগি, গবাদি পশু এমনকি স্ত্রীর নাক ফুল, মেয়ের কানের রিং ঘরের টিন বিক্রি করে দিচ্ছে দরিদ্র পরিবারগুলো।
অপরদিকে বিভিন্ন এনজিওর কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের অভাবী মনুষেরা।
প্রতিদিন শত শত মানুষ ইউপি অফিস ও মেম্বার, চেয়ারম্যান এবং বিত্তবানদের বাড়িতে ভিড় করছে । কাজের সন্ধানে অনেকে গ্রাম থেকে শহরে আসতে শুরু করেছে এবং বেঁচে নিচ্ছে সহজলভ্য কাজ রিকশা চলা।
এরই মধ্যে একশ্রেণীর অসাধু লোক তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য ওই সকল মজুরদের দিচ্ছে সুদের টাকা।
খবর নিয়ে জানা যায়, এক শ্রেণীর দাদন ব্যবসায়ী এ সময়টা কাজে লাগায় কারণ এটাই নাকি তাদের সিজন। এক হাজার টাকায় প্রতি মাসে ২শ’ থেকে ১শ ৫০ টাকা লাভ দিয়ে টাকা নিচ্ছে। তাই অভাবের তাড়নায় তারা এই কড়া সুদে টাকা নিচ্ছে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধিতে নিম্ন ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
এ পরিস্থিতিতেই মানুষ সঞ্চয় ভেঙ্গে, জমি, গরু, ছাগলের মত সব সম্বল বিক্রি করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে।
এ মুহূর্তে কৃষাণ মানুষের হাতে কাজ নেই আর অর্থ সংকট তীব্র। দ্রব্য মূল্যের অপ্রতিরোধ্য ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ ক্রয় ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। এমনি পরিস্থিতিতে কথা হয় বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের চৌমুহনী হিন্দুপাড়ার আশেদুল, সালাম ও রফিকুলের সাথে, তারা জানায় আমরা গরীব মানুষ নুন আনতে পানতা ফুরায় আর নতুন কাপড় তো দুরের কথা এবারে ঈদের আনন্দ নেই বললেই চলে। দেখি আল্লাহ কি করে। তাই এ জনপদের অভাবী মানুষের প্রাকৃতিক দুর্যোগে এবারে ঈদ আনন্দের চেয়ে নিরানন্দই বেশি।