হাওর বার্তা ডেস্কঃ ফখরুল আলম আক্কাছ বলেন, একাত্তরে যাঁর নির্দেশে আমরা দেশ স্বাধীন করতে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিলাম, সেই বঙ্গবন্ধুর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী তাঁর প্রিয় স্থান ভৈরবে পালন করতেই আয়োজন করেছিলাম মিলাদ মাহফিল ও কোরআন খতমের
বঙ্গবন্ধু স্মরণে ধর্মীয় আয়োজনেও বাধা দেওয়া হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার এক বছর পর কিশোরগঞ্জের ভৈরবে বঙ্গবন্ধুর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করতে গিয়ে কারাবরণ করেন উপজেলার ২২ যুবক।
১৯৭৬ সালের ১৫ আগস্ট। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম শাহাদাতবার্ষিকী। দেশে তখন সামরিক শাসন চলছে। সেই সময় এ দেশে বঙ্গবন্ধুর নামটি উচ্চারণ করাই ছিল দুরূহ; কিন্তু সেদিন ভৈরব থানা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক (বর্তমানে ভৈরব পৌর মেয়র) ফখরুল আলম আক্কাছ সাহস নিয়ে আয়োজন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে মিলাদ মাহফিল ও কোরআন খতমের। তাঁর সঙ্গে ছিল আরো ২১ স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মী। এ ঘটনার খবরে সামরিক শাসকের নির্দেশে ভৈরব থানা পুলিশ সেদিন বঙ্গবন্ধুর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মিলাদের আয়োজন ব্যর্থ করে দিয়ে আয়োজকদের গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়।
সেদিন বঙ্গবন্ধুর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করতে গিয়ে ভৈরবে যাঁরা গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তাঁরা হলেন অ্যাডভোকেট ফখরুল আলম আক্কাছ, আসাদুজ্জামান ফারুক (সাংবাদিক), রুহুল আমিন, মাহাবুর রহমান, মতিউর রহমান, মফিজুর রহমান, মোশারফ হোসেন (জজ মিয়া), জিল্লুর রহমান (প্রয়াত), আসাদ মিয়া, আতাউর রহমান, আসাদুল হক শিশু, দিলীপ চন্দ্র সাহা, দিজেন্দ্র চন্দ্র সাহা, ফজলুর রহমান, আব্দুল হামিদ, মো. ইদ্রিস, মাহাবুব আলম, রসরাজ সাহা, সুবল চন্দ্র কর, শাহজালাল, ফিরোজ মিয়া ও আজমল ভূঁইয়া।
১৯৭৬ সালে ১৫ আগস্ট ভৈরবের সেই সময়ের যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফখরুল আলম আক্কাছ হাজী আসমত কলেজের শহীদ আশুরঞ্জন ছাত্রাবাসে (বর্তমান শৈবাল আবাসিক হোটেল) জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রথম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে মিলাদ মাহফিল ও কোরআন খতমের আয়োজন করেন। দুপুরের পর থেকে ১৫ জন মৌলভির প্রত্যেকে দুই পারা করে কোরআন খতম দিতে থাকেন।
তাঁদের সঙ্গে উপস্থিত ছিল ২১ জন স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মী। কথা ছিল আসর নামাজের পর মিলাদ পড়ানো হবে; কিন্তু ইতিমধ্যে এ খবর চলে যায় সামরিক সরকারের উচ্চপর্যায়ে। ভৈরব থানা পুলিশের কাছে নির্দেশ আসে মিলাদের আয়োজন ভেঙে দিয়ে আয়োজকদের গ্রেপ্তার করতে। পুলিশ ১৫ জন মৌলভিসহ ২২ জনকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়। তাঁরা সেদিন গ্রেপ্তারের কারণ জানতে চাইলে পুলিশ তাঁদের ওপর অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন চালায়। পুলিশের নির্যাতনে তাঁরা অনেকেই রক্তাক্ত হলেও সেদিন আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থাটুকুও করা হয়নি। পরে ১৫ জন মৌলভিকে ছেড়ে দেওয়া হলেও পরের দিন ১৬ আগস্ট ২২ জনকে কোমরে রশি বেঁধে হাতকড়া লাগিয়ে কিশোরগঞ্জ মহকুমা কোর্টে পাঠানো হয়। পুলিশ বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করে। আদালত তাঁদের জেলহাজতে পাঠান।
পরবর্তী সময় দীর্ঘদিন জেলহাজতে থাকার পর পর্যায়ক্রমে সবাইকে ছেড়ে দেওয়া হয়। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় একে একে সবাই মামলা থেকে খালাস পান। তাঁদের মধ্যে সুবল দাস, মোশারফ হোসেন (জজ মিয়া), মাহাবুব ও জিল্লুর রহমান আজ বেঁচে নেই।
সেদিনের ভৈরব থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বর্তমান পৌর মেয়র ফখরুল আলম আক্কাছ বলেন, ‘একাত্তরে যাঁর নির্দেশে আমরা দেশ স্বাধীন করতে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিলাম, সেই বঙ্গবন্ধুর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী তাঁর প্রিয় স্থান ভৈরবে পালন করতেই আয়োজন করেছিলাম মিলাদ মাহফিল ও কোরআন খতমের। ’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমার দুঃখ একটাই, যাঁরা সেদিন কারাবরণ করেছিলেন তাঁদের অনেকেই আজ উপেক্ষিত।