হাওর বার্তা ডেস্কঃ ভারত যে একটি ক্রিকেট উম্মত্ত জাতি একথা সবাই এক বাক্যে স্বীকার করবে। কিন্তু দেশটির ঘরোয়া ফুটবল লীগের একটি ক্লাব সম্প্রতি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, টটেনহ্যাম ইত্যাদি খ্যাতনামা ক্লাবে খেলে আসা নামজাদা সাবেক স্ট্রাইকার টেডি শেরিঙ্গমকে ম্যানেজার নিয়োগ করার পর বেশ একটা শোরগোল পড়ে যায়। মাস দুয়েক পরেই ভারত আয়োজন করতে যাচ্ছে ফিফার অনুর্ধ্ব ১৭ ফুটবল বিশ্বকাপ। দেশটির প্রধানমন্ত্রীও আজকাল ফুটবল নিয়ে কথাবার্তা বলছেন। ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন এই দেশটিতে ফুটবল এখন কোন জায়গায়।
কলকাতার একটি পানশালায় গিয়ে বিবিসির সাংবাদিক দেখেছেন সেখানে বিরাট একটি টিভি স্ক্রিনে ফুটবল খেলা চলছে।
খেলা দেখছেন আর উল্লাসে ফেটে পড়ছেন ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের একদল সমর্থক।
শব্দ শুনে বুঝা যায় তারা একেবারে ফুটবল পাগল দর্শক। ভারতে কোনো খেলার কথা বলতে গেলে ক্রিকেটের কথাই সবার আগে আসে। কিন্তু পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্রের এই দেশে ফুটবলও এগোচ্ছে।
এক ভক্ত যেমন বিবিসির রাহুল ট্যান্ডনকে বলছিলেন, “ভারত একটা ফুটবল প্রিয় জাতি। আমরা ক্রিকেটকে অনুসরণ করি, কিন্তু একই সাথে ফুটবলকে ভালোবাসি।”
“ইদানীং মানুষ ফুটবলে অনুরক্ত হতে শুরু করেছে, আমি মনে করি এটা একটা ভাল ব্যাপার” বলছিলেন আরেক ভক্ত।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ভারতের বেশিরভাগ ফুটবল দর্শকই হয় ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ নয়তো স্প্যানিশ ফুটবল লীগ লা লিগার খেলা দেখে থাকে।
কয়েক বছর ধরেই ভারতের নিজস্ব ফুটবল লীগ আছে যেটির নাম আইএসএল।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে যদি এই ভারতীয় লীগ এবং প্রিমিয়ার লিগের খেলা একই সময়ে অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে দেশটির দর্শকেরা কোনটিকে বেছে নেবে?
“প্রিমিয়ার লীগ অবশ্যই” সমস্বরে জবাব দিলেন এই ফুটবল ভক্তরা।
আরেক জনের কাছে প্রশ্ন ছিলো তিনি কোন ক্লাবের সমর্থক, মুম্বাই এফসি নাকি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড?
“ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড সত্যি বলছি। আসলে আমার এটা করা উচিত নয়। কিন্তু আমি সত্যিই তাই।”
“আমরা এগিয়ে যেতে চাই এবং চাই আমাদের ঘরোয়া লীগ প্রিমিয়ার লীগের মতোই হোক।”
ভারতীয় লীগ আইএসএল-এর একটি ক্লাব অ্যাটলেটিকো ডি কলকাতা যখন সম্প্রতি তাদের নতুন ম্যানেজারের নাম ঘোষণা করে তখন বেশ একটা শোরগোল পড়ে যায়। কারণ এই ম্যানেজার আর কেউ নন, তিনি একজন ম্যানচেস্টার ইউনাটেড গ্রেট এবং ইংলিশ ম্যানেজার টেডি শেরিঙ্গম।
ফুটবল কি ভারতকে দখল করে নিতে যাচ্ছে?
টেডি শেরিঙ্গম বলছেন, “ইংল্যান্ডে যে কেউ যখন ভারত নিয়ে চিন্তা করে, তখন তার মনে ক্রিকেটের কথাই আসে। এটাই এখানকার এক নম্বর খেলা। কিন্তু তারা অবশ্যই ফুটবলের অতিশয় ভক্ত। আমি মনে করি আরো অনেক সময় লাগবে, আরো অনেক কিছু শেখার আছে। ফুটবল প্রশ্নে ক্ষেত্রে অনেক দেশই ভারতের চাইতে বহু বহু এগিয়ে রয়েছে।”
বিবিসির সংবাদদাতা একটি ময়দানে গিয়ে দেখতে পান সেখানে শিশুরা ফুটবল খেলছে। ফুটবলে ভারতকে এগিয়ে যেতে হলে শিশুদেরকে বেশি বেশি করে ফুটবল খেলতে হবে।
কিন্তু প্রায় একশো বিশ কোটি মানুষের এই দেশে জায়গা একটা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যূ। ফুটবলার আর ক্রিকেটারদের মাঝেমধ্যেই বাস্তবিক অর্থেই এই জায়গার জন্য মারামারি করতে হয়।
একজন খেলোয়াড় বলছিলেন, “আমরা ওইখানে ফুটবল খেলি। আর এখানে দেখুন, প্রতি কুড়ি ফুট অন্তর একটি ক্রিকেটের পিচ। এখানে জায়গা নিয়ে যুদ্ধ করতে হয়। মারামারি করতে হয়। গত বছর আমাদের একজন বন্ধু আহত হয়।”
“তাদের সাথে যেতা অসম্ভব। তারা যা বলে তাই শুনতে হয়” ময়দানের ক্রিকেট খেলোয়াড়দের উদ্দেশ্য করে বলছিলেন এই ফুটবল খেলোয়াড়।
ফলে ফুটবলের জন্য ভারতে অনেক চ্যালেঞ্জ, কিন্তু দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও এখন ক্রিকেটের পরিবর্তে ফুটবল নিয়ে কথা বলছেন।
সম্প্রতি জার্মানী সফরে গিয়ে তিনি দেশটিকে অনুরোধ করেছেন, ভারতকে ফুটবলে উন্নতি করতে সাহায্য করবার।
এমনকি আগামী অক্টোবরে ভারতে ফিফার যে অনুর্ধ্ব ১৭ ফুটবল বিশ্বকাপের আসর বসবে, সেখানেও মি. মোদির জোর সমর্থন রয়েছে।
এটাকে ভারতের ফুটবল ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় বলে বর্ণনা করছেন ক্রীড়ালেখক ধীমান সরকার- “ফিফা চাইছে এটা একটা গেম চেঞ্জার হোক। আর সত্যিই যদি এটা গেম চেঞ্জার হয়ে যায়, তাহলে ভারত ফুটবলের ক্ষেত্রে আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে আমি মনে করি এটা একটা বিরাট ব্যাপার হতে যাচ্ছে।”
ভারতের ব্যস্ত রাস্তায় অনেক শিশু-কিশোরকেই দেখা যায় ফুটবলের টিশার্ট পড়া—“ক্রিকেট সাবধান। তোমাকে ছক্কা মেরে উড়িয়ে দিতে পারি আমরা।” বিবিসি