হাওর বার্তা ডেস্কঃ হাওরে বন্যা এবং দেশের বিভিন্ন এলাকায় ফসলহানির পর বেড়ে যাওয়া চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে আমদানির কৌশল কাজে লাগেনি। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি করা দুই হাজার কোটি টাকার চালেও খুচরা পর্যায়ে বলার মত কোনো প্রভাব পড়েনি বাজারে। গরিব মানুষের খাবার মোটা চালের দাম কিছুটা কমলেও সেটা সহনীয় পর্যায়ে আসেনি। আর চিকন চালের দাম কমেছে নূন্যতম।
তবে চালকল মালিকরা দাবি করছেন, বস্তাপ্রতি চালের দাম ২০০ টাকার মত কমেছে (কেজিপ্রতি চার টাকা)। যদিও খুচরা পর্যায়ে ততটা প্রভাব নেই। খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছিলেন, চালের দাম বাড়ানোর পেছনে কারসারি রয়েছে। কিন্তু সে কারসাজি ধরা বা ব্যবস্থা নেয়া-কোনোটাই পারেনি তার মন্ত্রণালয়।
চালের দাম বাড়লে বরাবর নিম্নআয়ের মানুষরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর চালের দাম বাড়লে বাড়ে আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রেরও। এ কারণে তাদের আয়ের সিংহভাগই ব্যয় হয় খাবারের পেছনে।
চালের দাম বাড়ার পর বেড়েছে মাছ-মাংসের দামও। বর্ষার কারণে সবজির দামও এখন চড়া। জলাবদ্ধতায় চট্টগ্রামের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের বিশাল চালান নষ্ট হওয়ার পর পেঁয়াজের দামেও দিয়েছে লাফ। এই অবস্থায় নিম্ন আয়ের মানুষরা খাবারের জন্য বেশি খরচ করলে তাদের শিক্ষা-স্বাস্থ্য-বিনোদন বা সঞ্চয়ে টান পড়ে।
তবে সরকার আশায় ছিল আমদানি করে পরিস্থিতি মোকাবেলার। আর চালের আমদানি শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্তের পর বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছিলেন, কেজিতে ছয় টাকা করে কমবে চালের দাম। কিন্তু তার সেই আশা ফলেনি। মোটা চাল কেজিকে এক থেকে তিন টাকা কমলেও চিকন চালের দাম রয়ে গেছে আগের মতই।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবির শনিবারের বাজারদর ঘেঁটে দেখা যায়, গত এক মাসে নাজিরশাইল ও মিনিকেটের চালের মধ্যে যেটি সবচেয়ে কম মানের, সেটির দাম কমেছে কেজিতে দুই টাকা। তবে সবচেয়ে ভাল মানেরটির দাম কমেনি।
মোটা চালের দাম এই এক মাসে ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা কেজি দরের জায়গায় এখন বিক্রি হচ্ছে ৪২ থেকে ৪৫ টাকা কেজি করে। অর্থাৎ এই চালগুলো কমেছে কেজিতে তিন টাকার মত।
চলতি বোরো ধান উঠার আগে আগে হঠাৎ করে চালের দাম বেড়ে যায়। এই প্রেক্ষিতে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার চালের আদানি শুল্ক ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করে।
গত ২ আগস্ট ১০ লাখ টন চাল আমদানির জন্য কম্বোডিয়ার সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি সই করেছে সরকার। এর আগে ভিয়েতনামের সঙ্গে ১০ লাখ টন চাল আমদানির চুক্তি করে। ওই চালের দুটি চালান ইতিমধ্যে দেশের পৌঁছেছে। থাইল্যান্ড ও ভারতের সঙ্গে চাল আমদানি নিয়ে আলোচনা হলেও এখনো তা চূড়ান্ত চুক্তি হয়নি। তবে বেসরকারি পর্যায়ে এ দুই দেশ থেকে চাল আমদানি করছে ব্যবসায়ীরা। স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিনই শতশত টন চাল দেশে প্রবেশ করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুন ও জুলাই মাসে চাল দুই হাজারেরও বেশি কোটি টাকার চাল আমদানির এলসি খোলা হয়। এলসি নিষ্পত্তির পর দুই মাসে দেশে প্রায় দেড় লাখ টন চাল এসেছে। আমদানি পর্যায়ে রয়েছে আরো অনেক চাল।
শনিবার রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৪৭ টাকা কেজি দরে। আর চিকন চালের মধ্যে বিআর-২৮ ৫০ টাকা থেকে ৫২ টাকায়, মিনিকেট ও নাজিরশাইল চাল মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬২ টাকায়।
চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিদেশ থেকে শুধুমাত্র মোটা চাল আমদানি করা হচ্ছে। এজন্য এই ধরনের চাল গত দেড়-দুই মাসের চেয়ে একটু কম দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে চিকন চালের দাম কমেনি।
চিকন চালের দাম না কমার কারণ হিসেবে কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই চাল দেশেই উৎপাদিত হচ্ছে। গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে আবহাওয়া খারাপ থাকায় চাল উৎপাদনে প্রভাব পড়েছে। ফলে সরবরাহ বাড়েনি। তাই দাম সেভাবে কমেনি।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘চালের দাম বৃদ্ধির পর এখন মোটা চালের দাম একটু কম। তবে চিকন চালের দাম আগের মতোই আছে।’ চাল আমদানি অব্যাহত থাকলে সামনে আরো কমবে বলে আশা করেন তিনি।
জানতে চাইলে নওগাঁর চালকল ফারিহা রাইস মিলের মালিক ফরিদউদ্দিন হাওর বার্তাকে বলেন, ‘এলসি করা চালের চালান ঢুকায় মোটা চালের দাম কিছুটা কমেছে। আগে যে চাল বস্তাপ্রতি আমরা ২৩০০ থেকে ২৪০০ (৫০ কেজি বস্তা) টাকায় বিক্রি হতো, এখন সেটা ২২০০ থেকে ২২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিকন চালের বস্তা যেটা ২৬০০ থেকে ২৭০০ টাকায় বিক্রি হতো, এখন সেটা ২৪০০ থেকে ২৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’
ফরিদউদ্দিনের দেয়া তথ্যমতে চালকলে কেজিপ্রতি দাম চার টাকা কমলেও খুচরা পর্যায়ে কেন এই পরিমাণে কমেনি, সেই প্রশ্নের উত্তর জানা নেই এই চালকল মালিকের কাছে।