ঢাকা ০২:১২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাড়ির নকশায় যুক্ত হচ্ছে ‘রেইন হার্ভেস্টিং

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:০৪:১৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ অগাস্ট ২০১৭
  • ৩০৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  রাজধানীর ভবনগুলোয় বৃষ্টির পানি ধরে রাখতে ব্যবস্থা নিচ্ছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। নতুন করে বাড়ির নকশা অনুমোদনের ক্ষেত্রে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য ভবনের ছাদ বা নিচে ‘রেইন রিজার্ভর’ এর ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এই পদ্ধতিকে ‘রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং’ বলা হচ্ছে। এ জন্য ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ও গৃহায়ণ বিধিমালায় পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টি বাস্তবায়নের ওপর জোর দেওয়া হলেও এ নিয়ে নীতিমালা ও ধারণা না থাকায় এখনও আবাসন কোম্পানিগুলোর মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব বিরাজ করছে।

জানতে চাইলে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া হাওর বার্তাকে বলেন, ‘রাজউক যে বিষয়টি বলছে এই সম্পর্কে আমার কোনও স্পষ্ট ধারণা নেই। অন্যদেরও ধারণা আছে বলে আমার মনে হয়নি। তাহলে আমরা এটা নিয়ে কিভাবে সামনে এগোবো। আগে আমাদের স্পষ্ট ধারণা দেওয়া হোক। এর পর সিদ্ধান্ত।’

তবে নতুন এ পদ্ধতি সংযুক্ত করেই বাড়ি নির্মাণের জন্য রাজউকের ‘ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮’ সংশোধন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এতে ‘রেইন হার্ভেস্টিং’ এর বিষয়টি সংযুক্ত করা হবে। তাছাড়া, বিধিমালায় নতুন করে আরও কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত ও বাদ দেওয়া হবে। রাজউক ও নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পদ্ধতিতে ছাদ বা ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ড পানির ধারক হিসেবে কাজ করে। ছাদে বৃষ্টির পানি ধারণ করার পর তা চলে যাবে রিজার্ভারে। এই পদ্ধতিতে তুলনামূলক খরচ কম। উপরন্তু, এতে ১৫-২০ শতাংশ পানির চাহিদা পূরণ হবে। কমবে জলাবদ্ধতা।

রাজউকের সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) মো. আসমাউল হোসেন বলেন, ‘ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও সংকট দূর করতে সংশোধিত বিধিমালায় বৃষ্টির পানি ধারণ করতে বিধান রাখা হচ্ছে। রেইন রিজার্ভারের পানি গৃহস্থালির পাশাপাশি বাড়ির বাগান ও অন্যান্য কাজেও ব্যবহার করা যাবে। ভবন নির্মাণের জন্য যখন নকশা অনুমোদন দেওয়া হবে তখন এই শর্তটি থাকবে।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, বাসার আন্ডারগ্রাউন্ডে ৫০০ বর্গমিটার বা তার কম জায়গা হলে ওই শর্তটি পালনে বাধ্যবাধকতা থাকবে না। এছাড়া, পুরোনো ভবনের ক্ষেত্রে এই নীতিমালা বাধ্যতামূলক না হলেও কেউ আগ্রহী হলে সেই নকশা নবায়ন করে দেওয়া হবে। রাজউক জানিয়েছে, এরই মধ্যে রাজউকের উত্তরার ৭৯টি অ্যাপার্টমেন্টে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়া, আবাসন প্রকল্পগুলোতেও জলাশয় ও খোলা জায়গা রাখা হয়েছে। এর মাধ্যমে ভূগর্ভে বৃষ্টির পানি রিজার্ভ হবে।

রাজউকের কর্মকর্তারা বলছেন, সংকট মেটাতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের বিষয়টি রাজউকের পরিকল্পনায় মাত্র আসলেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ পদ্ধতিটি চালু রয়েছে। প্রতিবেশী ভারতসহ অনেক দেশে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের নজির রয়েছে। এ জন্য শহরগুলোর সংশ্লিষ্ট সংস্থা থেকে বিভিন্ন প্রণোদনাও দেওয়া হচ্ছে। হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফেরও উদাহরণ রয়েছে অনেক দেশে।

ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান জানিয়েছেন, ওয়াসার ৮৬ শতাংশ পানি আসে ভূগর্ভ থেকে। বাকি ১৪ শতাংশ পানি আসে নদী থেকে। ফলে দিন দিন ঢাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। স্তর নেমে যাওয়ায় ওয়াসার নলকূপগুলো পানিও পাচ্ছে না। নগরবাসীর পানি সংকট দূর করতে ঢাকা ওয়াসাকে অনেক দূর থেকে নদীর পানি শোধন করে তা সরবরাহ করতে হয়। এ অবস্থায় নদীর ১৪ শতাংশের সঙ্গে বৃষ্টির ১৫-২০ শতাংশ জল যুক্ত করা গেলে ভূগর্ভের পানির উপর নির্ভরতা কমবে।

সম্প্রতি ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘ঢাকার জলাবদ্ধতা দূর ও বিশুদ্ধ পানির সংকট নিরসনে আমরা বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছি। এক লাখ অ্যাপার্টমেন্টের ছাদে বৃষ্টির পানির রিজার্ভার করার পরিকল্পনা নিয়েছি। রাজউকের যতগুলো বিল্ডিং হচ্ছে সবগুলোতে রেইন হার্ভেস্টিংয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এজন্য রাজউকের ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় সংশোধন আনা হচ্ছে। আমার বৃষ্টির পানি আমার কাছে থাকবে, কোথাও যাবে না। আমরা পর্যায়ক্রমে প্রত্যেকটি বাড়িতে রেইন হার্ভেস্টিংয়ের ব্যবস্থা করব।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি রাজউক চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছি, সামনে কোনও রেইন হার্ভেস্টিং ছাড়া প্ল্যান পাস না করতে।’

নগর পরিকল্পনাবিদ ও স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন হাওর বার্তাকে বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টি নিয়ে কথা বলে আসার পর সম্প্রতি পূর্তমন্ত্রী রাজউককে আগামীতে অনুমোদন দেওয়া প্রতিটি বাড়ির নকশায় রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিংয়ের ব্যবস্থা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এই পদ্ধতিতে বৃষ্টির পানি যখন ছাদে আটকে রাখা যাবে, তখন তা আর রাস্তায় আসবে না। জলাবদ্ধতা কমবে। এতে পরিবেশগত ও অর্থনৈতিকভাবে আমরা লাভবান হওয়া যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই পানি ওয়াসার নলকূপের পানির চেয়ে অনেক বিশুদ্ধ। খাওয়ার উপযোগী। এর পরও এই পানি ছাদ থেকে নামিয়ে আনার সময় ফিল্টারিং করার ব্যবস্থা আছে। এছাড়া অন্যভাবেও তা করা যায়। বছরের ছয় মাস যদি বৃষ্টির পানি ব্যবহার করা যায়, তাহলে অনেক খরচ কমে আসবে। ওয়াসার বিল কমবে। বাড়িওয়ালারা রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিংয়ের জন্য যে টাকা ইনভেস্ট করবেন, তা দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে উঠে আসবে।’ এভাবে বর্ষা মৌসুমে রাস্তায় পানি (জলাবদ্ধতা) ৬০ থেকে ৭০ ভাগ কমে আসবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বিআইডব্লিউটিএর সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) নির্বাহী সদস্য ও নগর বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ হাওর বার্তাকে বলেন, ‘মানুষের বাড়িতে আগে উঠোন ছিল। সেখান থেকে পানি ভূগর্ভে চলে যেত। কিন্তু এখন সেই ব্যবস্থা নেই। খোলা মাঠ নেই। আছে ছাদ। ছাদ থেকে পানি চলে যাচ্ছে রাস্তায়। ফলে জলজটের সৃষ্টি হয়। এই পানি দীর্ঘক্ষণ আবদ্ধ থাকার ফলে রাস্তা নষ্ট হয়ে যায়। এতে দুর্ঘটনা বাড়ে। প্রত্যেক বাড়িওয়ালা যদি এই পদ্ধতি অবলম্বন করেন, তাহলে জলজট আর থাকবে না।’

তবে এ নিয়ে এখনও হাউজিং কোম্পানিগুলোর মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে। সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং’ বিষয়ক তৃতীয় বাংলাদেশ কনভেনশনে রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন কাজল বলেন, ‘এ সম্পর্কে সঠিক নীতিমালা ও ধারণা না থাকায় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ নিয়ে এখনও ভবন নির্মাতাদের মধ্যে দ্বিধা রয়েছে। এখন পর্যন্ত এর কোনও ব্যবহার দেখছি না। এই পানি গাড়ি ধোয়া ও বাগানে দেওয়ার জন্য ব্যবহার করতে পারি। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করতে হলে আমাদের বিল্ডিং নির্মাণ খরচ বেড়ে যাবে। এতে গ্রাহক পর্যায়ে ফ্ল্যাটের দামও বাড়বে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বাড়ির নকশায় যুক্ত হচ্ছে ‘রেইন হার্ভেস্টিং

আপডেট টাইম : ০৬:০৪:১৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ অগাস্ট ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  রাজধানীর ভবনগুলোয় বৃষ্টির পানি ধরে রাখতে ব্যবস্থা নিচ্ছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। নতুন করে বাড়ির নকশা অনুমোদনের ক্ষেত্রে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য ভবনের ছাদ বা নিচে ‘রেইন রিজার্ভর’ এর ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এই পদ্ধতিকে ‘রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং’ বলা হচ্ছে। এ জন্য ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ও গৃহায়ণ বিধিমালায় পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টি বাস্তবায়নের ওপর জোর দেওয়া হলেও এ নিয়ে নীতিমালা ও ধারণা না থাকায় এখনও আবাসন কোম্পানিগুলোর মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব বিরাজ করছে।

জানতে চাইলে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া হাওর বার্তাকে বলেন, ‘রাজউক যে বিষয়টি বলছে এই সম্পর্কে আমার কোনও স্পষ্ট ধারণা নেই। অন্যদেরও ধারণা আছে বলে আমার মনে হয়নি। তাহলে আমরা এটা নিয়ে কিভাবে সামনে এগোবো। আগে আমাদের স্পষ্ট ধারণা দেওয়া হোক। এর পর সিদ্ধান্ত।’

তবে নতুন এ পদ্ধতি সংযুক্ত করেই বাড়ি নির্মাণের জন্য রাজউকের ‘ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮’ সংশোধন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এতে ‘রেইন হার্ভেস্টিং’ এর বিষয়টি সংযুক্ত করা হবে। তাছাড়া, বিধিমালায় নতুন করে আরও কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত ও বাদ দেওয়া হবে। রাজউক ও নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পদ্ধতিতে ছাদ বা ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ড পানির ধারক হিসেবে কাজ করে। ছাদে বৃষ্টির পানি ধারণ করার পর তা চলে যাবে রিজার্ভারে। এই পদ্ধতিতে তুলনামূলক খরচ কম। উপরন্তু, এতে ১৫-২০ শতাংশ পানির চাহিদা পূরণ হবে। কমবে জলাবদ্ধতা।

রাজউকের সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) মো. আসমাউল হোসেন বলেন, ‘ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও সংকট দূর করতে সংশোধিত বিধিমালায় বৃষ্টির পানি ধারণ করতে বিধান রাখা হচ্ছে। রেইন রিজার্ভারের পানি গৃহস্থালির পাশাপাশি বাড়ির বাগান ও অন্যান্য কাজেও ব্যবহার করা যাবে। ভবন নির্মাণের জন্য যখন নকশা অনুমোদন দেওয়া হবে তখন এই শর্তটি থাকবে।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, বাসার আন্ডারগ্রাউন্ডে ৫০০ বর্গমিটার বা তার কম জায়গা হলে ওই শর্তটি পালনে বাধ্যবাধকতা থাকবে না। এছাড়া, পুরোনো ভবনের ক্ষেত্রে এই নীতিমালা বাধ্যতামূলক না হলেও কেউ আগ্রহী হলে সেই নকশা নবায়ন করে দেওয়া হবে। রাজউক জানিয়েছে, এরই মধ্যে রাজউকের উত্তরার ৭৯টি অ্যাপার্টমেন্টে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়া, আবাসন প্রকল্পগুলোতেও জলাশয় ও খোলা জায়গা রাখা হয়েছে। এর মাধ্যমে ভূগর্ভে বৃষ্টির পানি রিজার্ভ হবে।

রাজউকের কর্মকর্তারা বলছেন, সংকট মেটাতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের বিষয়টি রাজউকের পরিকল্পনায় মাত্র আসলেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ পদ্ধতিটি চালু রয়েছে। প্রতিবেশী ভারতসহ অনেক দেশে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের নজির রয়েছে। এ জন্য শহরগুলোর সংশ্লিষ্ট সংস্থা থেকে বিভিন্ন প্রণোদনাও দেওয়া হচ্ছে। হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফেরও উদাহরণ রয়েছে অনেক দেশে।

ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান জানিয়েছেন, ওয়াসার ৮৬ শতাংশ পানি আসে ভূগর্ভ থেকে। বাকি ১৪ শতাংশ পানি আসে নদী থেকে। ফলে দিন দিন ঢাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। স্তর নেমে যাওয়ায় ওয়াসার নলকূপগুলো পানিও পাচ্ছে না। নগরবাসীর পানি সংকট দূর করতে ঢাকা ওয়াসাকে অনেক দূর থেকে নদীর পানি শোধন করে তা সরবরাহ করতে হয়। এ অবস্থায় নদীর ১৪ শতাংশের সঙ্গে বৃষ্টির ১৫-২০ শতাংশ জল যুক্ত করা গেলে ভূগর্ভের পানির উপর নির্ভরতা কমবে।

সম্প্রতি ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘ঢাকার জলাবদ্ধতা দূর ও বিশুদ্ধ পানির সংকট নিরসনে আমরা বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছি। এক লাখ অ্যাপার্টমেন্টের ছাদে বৃষ্টির পানির রিজার্ভার করার পরিকল্পনা নিয়েছি। রাজউকের যতগুলো বিল্ডিং হচ্ছে সবগুলোতে রেইন হার্ভেস্টিংয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এজন্য রাজউকের ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় সংশোধন আনা হচ্ছে। আমার বৃষ্টির পানি আমার কাছে থাকবে, কোথাও যাবে না। আমরা পর্যায়ক্রমে প্রত্যেকটি বাড়িতে রেইন হার্ভেস্টিংয়ের ব্যবস্থা করব।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি রাজউক চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছি, সামনে কোনও রেইন হার্ভেস্টিং ছাড়া প্ল্যান পাস না করতে।’

নগর পরিকল্পনাবিদ ও স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন হাওর বার্তাকে বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টি নিয়ে কথা বলে আসার পর সম্প্রতি পূর্তমন্ত্রী রাজউককে আগামীতে অনুমোদন দেওয়া প্রতিটি বাড়ির নকশায় রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিংয়ের ব্যবস্থা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এই পদ্ধতিতে বৃষ্টির পানি যখন ছাদে আটকে রাখা যাবে, তখন তা আর রাস্তায় আসবে না। জলাবদ্ধতা কমবে। এতে পরিবেশগত ও অর্থনৈতিকভাবে আমরা লাভবান হওয়া যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই পানি ওয়াসার নলকূপের পানির চেয়ে অনেক বিশুদ্ধ। খাওয়ার উপযোগী। এর পরও এই পানি ছাদ থেকে নামিয়ে আনার সময় ফিল্টারিং করার ব্যবস্থা আছে। এছাড়া অন্যভাবেও তা করা যায়। বছরের ছয় মাস যদি বৃষ্টির পানি ব্যবহার করা যায়, তাহলে অনেক খরচ কমে আসবে। ওয়াসার বিল কমবে। বাড়িওয়ালারা রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিংয়ের জন্য যে টাকা ইনভেস্ট করবেন, তা দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে উঠে আসবে।’ এভাবে বর্ষা মৌসুমে রাস্তায় পানি (জলাবদ্ধতা) ৬০ থেকে ৭০ ভাগ কমে আসবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বিআইডব্লিউটিএর সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) নির্বাহী সদস্য ও নগর বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ হাওর বার্তাকে বলেন, ‘মানুষের বাড়িতে আগে উঠোন ছিল। সেখান থেকে পানি ভূগর্ভে চলে যেত। কিন্তু এখন সেই ব্যবস্থা নেই। খোলা মাঠ নেই। আছে ছাদ। ছাদ থেকে পানি চলে যাচ্ছে রাস্তায়। ফলে জলজটের সৃষ্টি হয়। এই পানি দীর্ঘক্ষণ আবদ্ধ থাকার ফলে রাস্তা নষ্ট হয়ে যায়। এতে দুর্ঘটনা বাড়ে। প্রত্যেক বাড়িওয়ালা যদি এই পদ্ধতি অবলম্বন করেন, তাহলে জলজট আর থাকবে না।’

তবে এ নিয়ে এখনও হাউজিং কোম্পানিগুলোর মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে। সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং’ বিষয়ক তৃতীয় বাংলাদেশ কনভেনশনে রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন কাজল বলেন, ‘এ সম্পর্কে সঠিক নীতিমালা ও ধারণা না থাকায় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ নিয়ে এখনও ভবন নির্মাতাদের মধ্যে দ্বিধা রয়েছে। এখন পর্যন্ত এর কোনও ব্যবহার দেখছি না। এই পানি গাড়ি ধোয়া ও বাগানে দেওয়ার জন্য ব্যবহার করতে পারি। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করতে হলে আমাদের বিল্ডিং নির্মাণ খরচ বেড়ে যাবে। এতে গ্রাহক পর্যায়ে ফ্ল্যাটের দামও বাড়বে।