হাওর বার্তা ডেস্কঃ একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে মন্ত্রিসভা থেকে জাতীয় পার্টির সদস্যরা পদত্যাগ করতে চান। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কথা হয়েছে। সরকার প্রধান অনুমতি দিলেই জাপার তিন সদস্য এবং মন্ত্রী মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের পদ ছাড়বেন এরশাদ। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি ছাড়া মন্ত্রিসভা থেকে সরে দাঁড়িয়ে তাকে অসম্মান করতে চায় না জাতীয় পার্টি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর বনানীর জাপা কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এরশাদ এ কথা বলেন।
মন্ত্রিসভা থেকে জাতীয় পার্টির মন্ত্রীরা পদত্যাগ করবে কি না— জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর এই বিশেষ দূত বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী অনুমতি দিলে আমরা সময়মতো পদত্যাগ করব।’
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি জোটবদ্ধ হয়েই নির্বাচন করে। আর পরে সরকারও গঠন করে একসঙ্গে। তকে পাঁচ বছর পর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে এই জোট ভেঙে যায় এবং বিএনপি-জামায়াত জোটের বর্জনের মুখে জাতীয় পার্টি আলাদা নির্বাচন করে।
তবে নির্বাচনের আগে আগে এরশাদ ভোট না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। পরে তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আর তার স্ত্রী রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি ভোটে যায়।
ভোট শেষে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা শপথ নিলেও এরশাদ প্রথমে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেননি। পরে নির্ধারিত সময়েই আলাদা শপথ নেন তিনি। আর ভোটের এক সপ্তাহ পর গঠন করা সরকারে যোগ দেন জাতীয় পার্টির তিন জন সদস্য। এদের মধ্যে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ পানিসম্পদ মন্ত্রী, মশিউর রহমান রাঙ্গা স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী এবং মুজিবুল হক হয়েছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী।
আর দলের চেয়ারম্যান এরশাদ হন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত। তার পদ মন্ত্রী মর্যাদার। তবে এই সাড়ে তিন বছরেও তার কোনো ভূমিকা দৃশ্যমান হয়নি।
সরকারের অংশীদার থেকেও জাতীয় পার্টি সংসদে প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করছে। এরশাদ একাধিকবার দলের সদস্যদের পদত্যাগের কথা বলেছেন। কিন্তু সরে দাঁড়ায়নি কেউ।
এরশাদ বলেন, ‘মন্ত্রিসভায় থাকা জাতীয় পার্টির জন্য লজ্জার। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আমাকে দূত পদ দিয়ে সম্মান দিয়েছেন। তাকে বলেছি পদত্যাগের বিষয়ে। উনি আমাকে জানাবেন। তার আগে পদত্যাগ করে ওনাকে অসম্মান করতে চাই না।’
এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব কি না, তা জানতে চাইলে এরশাদ বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এই কমিশনের পরীক্ষা হয়নি। ভবিষ্যতে বোঝা যাবে।’
দেশের এমন অবস্থায় জাতীয় পার্টি সরকারের পদত্যাগ চায় কিনা জানতে চাইলে এরশাদ বলেন, ‘তা চাই না। এতে সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি হবে।’
বগুড়ায় শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকারের বিরুদ্ধে উঠা কিশোরী ধর্ষণের বিষয়ে এরশাদ বলেন, ‘দেশে এখন ক্ষমতার তুফান চলছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তুফান আওয়ামী লীগের কেউ না। গঠনতান্ত্রিকভাবে এটি গ্রহণযোগ্য হলেও রাজনৈতিকভাবে খোলা চোখে মানুষ মনে করে, শ্রমিক লীগ আওয়ামী লীগের অংশ। এই তুফান সরকার কী করে শ্রমিক লীগের নেতা হন। তাঁর ভাই মতিন সরকার কি করে যুবলীগের নেতা হন।’
জাপা প্রধান বলেন, ‘বিচারব্যবস্থা এখন নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। সরকার যেন অসহায় হয়ে পড়েছে।’ সংবিধানের ১৬ তম সংশোধনীর বিষয়ে আপিল বিভাগের রায়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের রায়ে যা বলা হয়েছে তাতে আমাদের মাথা হেঁট হয়ে গেছে। দেশে সুশাসন নেই, খুন গুমে দেশ ছেয়ে গেছে।’
চালের দাম বাড়ার বিষয়ে এরশাদ বলেন, ‘দেশের খাদ্য পরিস্থিতি এখন নাজুক। আমরা ১০ টাকা কেজি দরে চাল দেওয়ার কথা শুনেছি। এখন ১০ টাকা তো দূরে থাকা, সাধারণ মানুষকে ৫০ টাকায় চাল খেতে হচ্ছে।’
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের, মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।