বেসরকারী বিজনেস টু বিজনেস – বিটুবি পদ্ধতিতে মালয়েশিয়া আগামী তিন বছরে বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশ থেকে ১৫ লাখ কর্মী নিয়োগ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বিটুবি পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্বলিত একটি সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত করতে মালয়েশিয়ার কারিগরি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মঙ্গলবার ঢাকায় গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিনিধি দলটি তিন দিনের সফরে রোববার ঢাকায় পৌঁছেছে। সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত হওয়ার পর শিগগিরই উচ্চ পর্যায়ে সফর বিনিময়কালে তা সই হবে। তারপর বেসরকারী বিটুবি পদ্ধতিতে কর্মী প্রেরণের পথ উন্মুক্ত হবে।
সফররত চার সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মালয়েশিয়ার অভিবাসন সংক্রান্ত মহাপরিচালক দাতু মোস্তাফা বিন ইব্রাহিম।
প্রতিনিধি দলের সদস্যরা সোমবার জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) মহাপরিচালক বেগম সামসুন্নাহারের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকের একটি সূত্র মতে, মালয়েশিয়ার প্রতিনিধি দল বৈঠকে জানিয়েছে যে, এই মূহুর্তে মালয়েশিয়ায় ৫০ হাজার কর্মীর চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ তা যথা শিগগির সম্ভব সরবরাহ দিতে পারবে কি না। জবাবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, বাংলাদেশ কর্মী পাঠানোর পূর্বে ১০ দিনের একটি প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। বাংলাদেশে বর্তমানে ৭১টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে। সেখানে এই প্রশিক্ষণ দেয়ার পর বাংলাদেশ চাহিদা মোতাবেক কর্মী মালয়েশিয়ায় পাঠাতে পারবে। অভিবাসন ব্যয় নিয়েও আলোচনা হয় বলে জানা গেছে। অভিবাসন ব্যয় যতটা সম্ভব কম রাখার বিষয়ে উভয়পক্ষ একমত পোষণ করেছে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি, প্রতিনিধি দলের সদস্যরা প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। মালয়েশিয়ার প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বেসরকারী রিক্রুটিং এজেন্সিসমূহের সংগঠন বায়রার সঙ্গে বৈঠক করতে পারে।
বৈঠকের প্রস্তুতি হিসাবে সোমবার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের মধ্যে একটি প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে মন্ত্রণালয়ের সচিব খন্দকার মোঃ ইফতেখার হায়দারসহ উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। মালয়েশিয়ার কারিগরি প্রতিনিধি দলের সফর উপলক্ষ্যে কুয়ালালামপুরে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার শহিদুল ইসলাম বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। তিনি কর্মী নিয়োগ সম্পর্কে সরকারী পর্যায়ে পরামর্শ দিচ্ছেন।
বাংলাদেশ থেকে কর্মীরা সাধারনত তিন বছর মেয়াদের জন্য মালয়েশিয়ায় যান। কিন্তু মালয়েশিয়ায় মেয়াদের বেশি সময় অবস্থান করা বাংলাদেশীদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ২০০৯ সালে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ বন্ধ করে দেয়। একশ্রেণীর অসাধু রিক্রুটিং এজেন্সি প্রায় তিন লাখ টাকা নিয়ে কর্মী পাঠানোর কারণে তিন বছর মেয়াদে খরচের টাকাই উঠাতে হিমশিম খেতে হয়েছে। এ কারণে বাধ্য হয়ে কর্মীরা মেয়াদের বেশি সময় অবৈধভাবে অবস্থান করেছেন।
মালয়েশিয়ায় জনশক্তির বন্ধ দুয়ার খোলার লক্ষ্যে ব্যাপক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানোর ফলে দেশটি নতুন করে কর্মী নিতে রাজি হয়। এই অবস্থায় অভিবাসন ব্যয় কমানো, কর্মীদের ন্যূনতম মজুরী নিশ্চিত করা এবং কর্মীদের বঞ্চনা বন্ধে সরকারী পর্যায়ে (গভর্ণমেন্ট টু গভর্ণমেন্ট – জিটুজি) কর্মী পাঠানোর ব্যাপারে ২০১২ সালে একটি সমঝোতা স্মারক সই করে। তারপর ব্যাপক-উৎসাহ উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়। মালয়েশিয়া যেতে আগ্রহীদের অনলাইনে নিবন্ধন করা হয় সারাদেশে। এর মাধ্যমে ১৪ লাখ কর্মীর ডাটাবেস তৈরি হয়।
জিটুজি পদ্ধতিতে মাত্র ২৫ হাজার টাকা খরচে কর্মীরা মালয়েশিয়া যেতে পেরেছেন। তাদের ন্যূনতম মজুরী মাসে নয়শ রিঙ্গিত (প্রায় ১৮ হাজার টাকা) নির্ধারন করা হয়েছিল। কিন্তু এই পদ্ধতিতে মালয়েশিয়া থেকে কর্মীর চাহিদা তেমন পাওয়া যায়নি। চুক্তি সই হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত মাত্র আট হাজার কর্মী জিটুজি পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ায় পাঠানো সম্ভব হয়েছে। ফলে আবার সেই বেসরকারী রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী পাঠানোর পথেই অগ্রসর হচ্ছে বাংলাদেশ। বেসরকারীভাবে কর্মী পাঠানোর এই উদ্যোগের নাম দেয়া হয়েছে বিজনেস টু বিজনেস (বিটুবি)।
বেশি কর্মী পাঠানোর আশায় আবার কর্মীরা অসাধু রিক্রুটিং এজেন্সি কিংবা দালালদের কাছে বঞ্চনার শিকার হবেন কি না এমন চ্যালেঞ্জও সামনে এসেছে।
উল্লেখ্য, জিটুজি পদ্ধতিতে মূলত প্লান্টেশন অর্থাৎ গাছরোপন খাতে কর্মী নিয়েছে মালয়েশিয়া। মালয়েশিয়ায় বর্তমানে প্রায় সাড়ে চার লাখ কর্মী কর্মরত রয়েছেন। দেশটি ২০০৯ সালে দুই লাখ ৬৭ হাজার বাংলাদেশী অবৈধ কর্মীকে বৈধতা দিয়েছে। ভবিষ্যতেও বাংলাদেশী কর্মীদের বৈধতার বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা অব্যাহত থাকবে।