ছাই লাগবনি ছাই …

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ফেলনা জিনিস আঁকড়ে ধরে বাঁচার স্বপ্ন দেখেন তিনি। নামেন পথে। সেই ফেলনা জিনিসই তার বেঁচে থাকার অবলম্বন এখন। একদিন দুই দিন নয়, দীর্ঘ ২০ বছর ধরে তিনি এই ফেলনা জিনিসের সঙ্গেই বসবাস করছেন। সংসার চালাচ্ছেন। কথায় বলে না, যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখ তাই। পাইলেও পাইতে পার মানিক-রতন। তিনি মানিক-রতন না পেলেও পেয়েছেন বেঁচে থাকার খুঁটি। এই ছাইই তার বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখিয়েছে। নাম তার শাহিনুর। দীর্ঘ বিশ বছর ধরে ছাইয়ের সঙ্গে তার সম্পর্ক। ছাই তার রুটি-রুজি। সেই সকালে এক বস্তা ছাই নিয়ে বের হন, সন্ধ্যায় ঘরে ফিরেন। ছাই বিক্রি করে এ টাকা নিয়ে আসেন শাহীনুর। এক ডিব্বা ছাই বিক্রি করেন ৩০ টাকায়। প্রতিদিন ছাই বিক্রি করে দুই থেকে আড়াই শ’ টাকা আয় করেন শাহিনুর। কামরাঙ্গীর চরের বস্তিতে থাকেন তিনি। প্রতিদিন কাওরান বাজার, তেজকুনি পাড়া ও নাখালপাড়ায় ঘুরে ঘুরে ছাই বিক্রি করেন। অ্যাই ছাই লাগবনি ছাই…। শাহিনুর তার জীবনের কথা বলতে গিয়ে জানান, এক সময় সংসারে নিত্য অভাব ছিল। তিন বেলার মধ্যে এক বেলা খেয়ে না খেয়ে দিন পার করতেন। অভাবের সংসারে আর কেউ নেই রোজগার করার। শাহিনুরের স্বামী হোসেন আলীর পচন রোগে এক পা কেটে ফেলতে হয়েছে। সে বাড়িতেই থাকে। শাহিনুরের তিন মেয়ে। এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। আর বাকি দুই মেয়ে বাড়িতেই থাকে বাপের দেখাশোনা করে। কোথা থেকে ছাই কেনেন জানতে চাইলে শাহিনুর বলেন, কামরাঙ্গীচরের ছাইয়ের পাইকারি বাজার থাইক্যা। এক বস্তা ছাই কিনি তিন শ’ টাকায়। আরেকজন ছাই বিক্রেতা দিলু। সে ছাই বিক্রি করে মহাখালী এলাকায়। দিলু জানায় রাজধানীর বিভিন্ন  মহল্লায় প্রায় ত্রিশজন নারী ছাই বিক্রি করে। মানুষ তাদের ছাইআলী বলে ডাকে। কোনো পুরুষ মহল্লায় ঘুইরা ছাই বিক্রি করে না। ছাই লাগে ছাই এভাবে  নিজেরাই চিৎকার করে জানান দেয় তারা মহল্লায় এসেছে। দিলু বলেন, আমরা তো এক জায়গায় বইসা ছাই বিক্রি করি না। মহল্লায় হাইটা হাইটা ছাই বিক্রি করি। এই জন্য চিল্লান লাগে। আগে তো  এত বড় বড় বিল্ডিং আছিল না তখন এত জোরেও চিল্লান লাগতো না। এখন সব বড় বড় বিল্ডিং এই লইগা চিল্লান লাগে বেশি। যতই চিল্লাই মানুষ এখন আমাগো ডাক শুনে না। তারা ছাই না কিনা বাজার থেইকা সাবান কিনা আনে। আগে এই পেশায় অনেক মহিলা আছিল। অহন আস্তে আস্তে এই কাজ ছাইরা দিতেছে। এই কাজে কষ্ট বেশি টাকা কম। বিভিন্ন জায়গার ধান সিদ্ধর বয়লার থেকে ছাই এনে পাইকাররা কামরাঙ্গীর চরে বিক্রি করে। পাইকার লিটন বলেন ভৈরব, কালিয়াকৈর, সাভারের ধান সিদ্ধ করার বয়লার থেইকা ছাই আইনা আমরা বিক্রি করি। একবারে এক ট্রাক ছাই আনি। প্রতি বস্তার পাইকারি দাম তিনশো টাকা। কেউ যদি এক সঙ্গে বেশি বস্তা নিই তাহলে আরো কম দামে দেয়। তবে বেচা বিক্রি আগের মতো নেই বলে জানালেন শাহিনুর। এখন ভিম বারের যুগে ছাইয়ের চাহিদা অনেক কমে গেছে । শাহিনুর বলেন, আগে প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় শ টাকার ছাই বিক্রি করতাম। এখন দুই থেকে আড়াই শ’ টাকার ছাই বিক্রি করতেই কষ্ট হয়। মানুষ থালা বাসুন মাজতে এখন ছাই বাদ দিয়া সাবান ব্যবহার করে। বাসা বাড়িতে এখন মানুষ  ছাই দিয়া মাছও কুটে না। বাজার থেইক্যা মাছ কুইটা আনে। সাড়া দিন মহল্লায়-মহল্লায় ঘুইরা আধা বস্তা ছাইও বেচতে পারি না। তারপরও ছাই বিক্রির টাকায়  সংসার চলে শাহিনুরের।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর