ঢাকা ১১:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে রড দিয়ে পেটালেন পুলিশ কর্মকর্তা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৮:১১:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ জুলাই ২০১৭
  • ৩১১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  নড়াইলে ১০ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে এক গৃহবধূকে রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশ কর্মকর্তা স্বামীর বিরুদ্ধে। স্ত্রী ফাতেমা বেগম শিখাকে (২৬) তিনদিন ঘরে আটকে রেখে  নির্যাতন করেন পুলিশ কর্মকর্তা সৈয়দ আল মামুন। বর্তমানে শিখা লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় পুলিশ মামলা নিতে গড়িমসি করলেও রোববার পুলিশ সুপারের নির্দেশে মামলা হয়েছে।

ফাতেমার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, প্রায় পাঁচ বছর আগে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া গ্রামের আব্দুল মান্নান শরীফের মেয়ে ফাতেমা বেগম শিখার সঙ্গে লোহাগড়া পৌরসভার কুন্দশী এলাকার সৈয়দ সিরাজ আলীর ছেলে পুলিশ কর্মকর্তা সৈয়দ আল মামুনের বিয়ে হয়। আল মামুন খুলনার আদালতে পুলিশ ইন্সপেক্টর হিসেবে কর্মরত আছেন।

বিয়ের পর বছর খানেক সুখের জীবন কাটলেও পরবর্তীতে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রী ফাতেমা বেগম শিখার ওপর শুরু হয় নির্যাতন। যৌতুকের দাবি মেটাতে গৃহবধূর পাঁচ লাখ টাকার গয়নাসহ বাবার বাড়ির গরু পর্যন্ত বিক্রি করতে হয়েছে। এমনকি সুদে টাকা এনেও যৌতুক দেওয়া হয়েছে। চাকরিতে বদলি ও পদোন্নতির কথা বলে আল মামুন সম্প্রতি ফাতেমার বাবার কাছে ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। দাবিকৃত এই টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় গত শুক্রবার রাতে রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয় ফাতেমাকে। গুরুতর অবস্থায় শনিবার সকাল ১০টার দিকে ফাতেমাকে উদ্ধার করে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ফাতেমা জানান, যৌতুকের দাবিতে তার স্বামী তিনদিন ঘরে আটকে রেখে রড দিয়ে পিটিয়ে তাকে জখম করেছে। তার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে নির্যাতন করা হয়েছে। তাদের তিন বছরের শিশু সন্তান আরাফাতকেও লাথি মেরে আহত করে পাষণ্ড স্বামী।

পুলিশ কর্মকর্তা সৈয়দ আল মামুন ও স্ত্রী শিখাফাতেমার ভাই সাবু শরীফ বলেন, প্রথমে আমরা মামুনকে পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছি। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে পদোন্নতির কথা বলে আমাদের কাছ মামুন এই টাকা নেন। কিছুদিন চুপচাপ থাকার পর আবারও টাকার জন্য বোনের ওপর শুরু হয় নির্যাতন। এখন কোর্ট ইন্সপেক্টর থেকে থানায় যাওয়ার নাম করে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন মামুন। সেই টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় শুক্রবার রাতে আমার বোনকে পিটিয়ে শরীরের কমপক্ষে ২৫টি স্থানে আঘাত করে রক্তাক্ত করা হয়েছে।

ফাতেমার মা ফুরজাহান বেগম বলেন, মামুন এতোটা লোভী আমরা আগে বুঝতে পারিনি। মোটা অঙ্কের টাকা ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে পাঁচ থেকে ১০ হাজার পর্যন্ত টাকা দিয়েছি। তবুও ওর টাকার প্রয়োজন শেষ হয়নি। আমার মেয়েকে লাথি ও চোখে ঘুষি দিয়ে এবং রড দিয়ে মেরে জীবনটা প্রায় শেষ করে দিয়েছে। এ নির্যাতনের বিচার চাই।

ফাতেমার বাবা আব্দুল মান্নান শরীফ বলেন, হাসপাতালেও আমার মেয়ের চিকিৎসা ঠিকভাবে করাতে পারছি না। জামাই এখানে এসে হাসপাতাল ছাড়ার হুমকি দিয়ে গেছে। আমরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

ফাতেমা ও তার শিশু সন্তানের নিরাপত্তায় পুলিশের কোনও ভূমিকা দেখা যায়নি বলে অভিযোগ করেছেন ফাতেমার খালা নিলুফার ইয়াসমিন।

লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. শেখ আবুল হাসনাত বলেন, ফাতেমার শরীরে একাধিক আঘাতের চিহৃ রয়েছে। তার চিকিৎসা চলছে।

এদিকে, স্ত্রীকে নির্যাতনের কথা অস্বীকার করে আল-মামুন জানান,  তিনি তার স্ত্রীর কাছ থেকে কখনও যৌতুক নেননি।

এ ঘটনায় পুলিশ মামলা নিতে গড়িমসি করলেও এসপির নির্দেশে শেষমেশ মামলা নেওয়া হয়েছে বলে জানান ফাতেমার ভাই সাবু শরীফ।

লোহাগড়া থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ফাতেমা নামে এক গৃহবধূকে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া যায়। পরে আজ বিকালে মামলা রজু করা হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে রড দিয়ে পেটালেন পুলিশ কর্মকর্তা

আপডেট টাইম : ০৮:১১:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ জুলাই ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  নড়াইলে ১০ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে এক গৃহবধূকে রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশ কর্মকর্তা স্বামীর বিরুদ্ধে। স্ত্রী ফাতেমা বেগম শিখাকে (২৬) তিনদিন ঘরে আটকে রেখে  নির্যাতন করেন পুলিশ কর্মকর্তা সৈয়দ আল মামুন। বর্তমানে শিখা লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় পুলিশ মামলা নিতে গড়িমসি করলেও রোববার পুলিশ সুপারের নির্দেশে মামলা হয়েছে।

ফাতেমার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, প্রায় পাঁচ বছর আগে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া গ্রামের আব্দুল মান্নান শরীফের মেয়ে ফাতেমা বেগম শিখার সঙ্গে লোহাগড়া পৌরসভার কুন্দশী এলাকার সৈয়দ সিরাজ আলীর ছেলে পুলিশ কর্মকর্তা সৈয়দ আল মামুনের বিয়ে হয়। আল মামুন খুলনার আদালতে পুলিশ ইন্সপেক্টর হিসেবে কর্মরত আছেন।

বিয়ের পর বছর খানেক সুখের জীবন কাটলেও পরবর্তীতে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রী ফাতেমা বেগম শিখার ওপর শুরু হয় নির্যাতন। যৌতুকের দাবি মেটাতে গৃহবধূর পাঁচ লাখ টাকার গয়নাসহ বাবার বাড়ির গরু পর্যন্ত বিক্রি করতে হয়েছে। এমনকি সুদে টাকা এনেও যৌতুক দেওয়া হয়েছে। চাকরিতে বদলি ও পদোন্নতির কথা বলে আল মামুন সম্প্রতি ফাতেমার বাবার কাছে ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। দাবিকৃত এই টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় গত শুক্রবার রাতে রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয় ফাতেমাকে। গুরুতর অবস্থায় শনিবার সকাল ১০টার দিকে ফাতেমাকে উদ্ধার করে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ফাতেমা জানান, যৌতুকের দাবিতে তার স্বামী তিনদিন ঘরে আটকে রেখে রড দিয়ে পিটিয়ে তাকে জখম করেছে। তার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে নির্যাতন করা হয়েছে। তাদের তিন বছরের শিশু সন্তান আরাফাতকেও লাথি মেরে আহত করে পাষণ্ড স্বামী।

পুলিশ কর্মকর্তা সৈয়দ আল মামুন ও স্ত্রী শিখাফাতেমার ভাই সাবু শরীফ বলেন, প্রথমে আমরা মামুনকে পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছি। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে পদোন্নতির কথা বলে আমাদের কাছ মামুন এই টাকা নেন। কিছুদিন চুপচাপ থাকার পর আবারও টাকার জন্য বোনের ওপর শুরু হয় নির্যাতন। এখন কোর্ট ইন্সপেক্টর থেকে থানায় যাওয়ার নাম করে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন মামুন। সেই টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় শুক্রবার রাতে আমার বোনকে পিটিয়ে শরীরের কমপক্ষে ২৫টি স্থানে আঘাত করে রক্তাক্ত করা হয়েছে।

ফাতেমার মা ফুরজাহান বেগম বলেন, মামুন এতোটা লোভী আমরা আগে বুঝতে পারিনি। মোটা অঙ্কের টাকা ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে পাঁচ থেকে ১০ হাজার পর্যন্ত টাকা দিয়েছি। তবুও ওর টাকার প্রয়োজন শেষ হয়নি। আমার মেয়েকে লাথি ও চোখে ঘুষি দিয়ে এবং রড দিয়ে মেরে জীবনটা প্রায় শেষ করে দিয়েছে। এ নির্যাতনের বিচার চাই।

ফাতেমার বাবা আব্দুল মান্নান শরীফ বলেন, হাসপাতালেও আমার মেয়ের চিকিৎসা ঠিকভাবে করাতে পারছি না। জামাই এখানে এসে হাসপাতাল ছাড়ার হুমকি দিয়ে গেছে। আমরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

ফাতেমা ও তার শিশু সন্তানের নিরাপত্তায় পুলিশের কোনও ভূমিকা দেখা যায়নি বলে অভিযোগ করেছেন ফাতেমার খালা নিলুফার ইয়াসমিন।

লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. শেখ আবুল হাসনাত বলেন, ফাতেমার শরীরে একাধিক আঘাতের চিহৃ রয়েছে। তার চিকিৎসা চলছে।

এদিকে, স্ত্রীকে নির্যাতনের কথা অস্বীকার করে আল-মামুন জানান,  তিনি তার স্ত্রীর কাছ থেকে কখনও যৌতুক নেননি।

এ ঘটনায় পুলিশ মামলা নিতে গড়িমসি করলেও এসপির নির্দেশে শেষমেশ মামলা নেওয়া হয়েছে বলে জানান ফাতেমার ভাই সাবু শরীফ।

লোহাগড়া থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ফাতেমা নামে এক গৃহবধূকে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া যায়। পরে আজ বিকালে মামলা রজু করা হয়েছে।