হাওর বার্তা ডেস্কঃ জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি হলেও গবাদি পশুর খাদ্যের সংকট ও জেলার দেড় সহস্রাধিক পুকুর ভেসে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে গবাদিপশু পালনকারী ও মৎস চাষিরা। এ ছাড়া বন্যাদুর্গত যমুনা চরাঞ্চলের কৃষকদের বাড়িঘরের চারপাশে এখনও বন্যার পানি থাকায় গরু চোর ও নৌডাকাত আতঙ্কে রয়েছে তারা।
আজ শুক্রবার সকালে যমুনার দুর্গম চরাঞ্চল ইসলামপুরের সাপধরী ইউনিয়নের আমতলি গ্রামের কৃষক জিয়াউল হক ফারাজী বলেন, “আঙ্গরে বাড়ির চারপাশে এহনো বানের পানি আছে। এ ছাড়া আঙ্গরে গ্রামের তিন দিকেই যমুনা নদী। রাতে ডাকাতরা নৌকা নিয়ে চলাফেরা করে। আমরা আমতলি, কাশাড়ীডোবা, চেঙ্গানিয়া, শিশুয়া ও প্রজাপতি- এই পাঁচ গ্রামের মানুষ পালা করে দল বেঁধে সারা রাত জেগে গরু আর বাড়িঘর পাহারা দেই। ডাকাতদের জন্য আঙ্গরে খুব ভয় করে। ” একই গ্রামের সুরুজ মণ্ডল বলেন, “বানের পানির জন্য গরু ছাগলের ঘাস মরে গেছে। খড়ের পালাও বানে ভাইসা গেছে। ঘাস ও খড়ের অভাবে গরু ছাগল পালা খুবই কষ্ট হইছে। ”
বেলগাছা ইউনিয়নের শীলদহ, সিন্দুরতলি, মন্নিয়া এবং কুলকান্দি ইউনিয়নের বরুল, জিগাতলা ও হরিণধরা চরাঞ্চলে নৌকায় ঘুরে কৃষক মোস্তফা খাঁ, আবু বক্কর, ছামিউল হক, সেকান্দর আলী, ফজল প্রামানিক, নবীর হোসেনসহ অর্ধশতাধিক কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বন্যার পানিতে চরের ঘাস মরে যাওয়ায় এবং অনেকের পালার খড় বন্যার পানির স্রোতে ভেসে যাওয়ায় চরাঞ্চলে গবাদি পশুর খাদ্যের তীব্র সংকট চলছে। এ ছাড়া প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও বন্যার সময় যমুনার চরাঞ্চলগুলোতে নৌডাকাত আতঙ্ক বিরাজ করছে।
ইসলামপুরের ইউএনও এ বি এম এহানুল মামুন জানান, ইসলামপুরের বন্যাদুর্গত এলাকার গবাদি পশুর জন্য বন্যার সময় গবাদি পশুর খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে। বর্তমানে বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় সংকট হ্রাস পেয়েছে।
অপরদিকে, এ বছর যমুনার পানি বিপৎসীমার ৮৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় ইসলামপুরের চিনাডুলি, নোয়ারপাড়া, পাথর্শী, ইসলামপুর সদর এবং মেলান্দহের নাংলা, কুলিয়া ও মাহমুদপুর ইউনিয়ন সমুহের সহস্রাধিক পুকুরের পাড় ডুবে ও ভেঙে পুকুরের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। ইসলামপুরের বলিয়াদহ গ্রামের মৎস চাষি আব্দুল বাছেদ ও শিংভাঙ্গা গ্রামের মৎস চাষি অহিদুজ্জামানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চিনাডুলি ইউনিয়নের দুই শতাধিক ছোট বড় পকুর বন্যায় ডুবে যাওয়ায় ওইসব পুকুরের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। পুকুরের মাছ ভেসে যাওয়ায় মৎস্য চাষিরা অপূরণীয় ক্ষতির মুখে পড়েছেন। বন্যার কারণে ভবিষ্যতে এই এলাকার মানুষ মৎস্য চাষ ছেড়ে দিতে হবে বলেও তারা আশঙ্কা করছেন। এ সময় মৎস চাষি আব্দুল বাছেদ আহাজারি করে বলেন, “আমি এক একর জমির একটি পুকুরে মাছ চাষ করেছিলাম। বন্যায় আমার পুকুর ডুবে যাওয়ায় অন্তত তিন লাখ টাকার মাছ বানের পানিতে ভেসে গেছে। মাছ চাষ করেই জীবন ধারণ করি আর সংসার চালাই। এখন ঋণ করে সংসার চালাতে হবে এবং অত্যন্ত কষ্ট করে পুকুর সংস্কার করতে হবে নতুবা মাছ চাষ ছাড়তে হবে। ”
জামালপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. আব্দুল মজিদ জানান, বন্যায় এ বছর জেলার এক হাজার ১৩৪টি পুকুর ভেসে যাওয়ায় পাঁচ কোটি ২৬ লাখ ২২ হাজার টাকা মূল্যের মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় মৎস্য চাষি ও খামারিরা ব্যক্তিপর্যায়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তাদের সরকারিভাবে কোনও ঋণ বা ত্রাণ সহায়তার সুযোগ নাই বলেও জানান তিনি।