ঢাকা ০২:৩৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিছানায় ১২ ফুট অজগর পরে উদ্যানে অবমুক্ত

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:২০:৫৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ জুলাই ২০১৭
  • ২৭৪ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গভীর ঘুমে সবাই। মশারি টানানো। হঠাৎ হুড়মুড় করে শরীরের ওপর পড়ল মশারি। গৃহকর্তা ঘুম থেকে জেগে দেখলেন শরীরের ওপর পড়া মশারিতে ভারী লম্বা কোনো বস্তু। দ্রুত বাতি জ্বালালেন তিনি। বাতির আলোয় তিনি আস্ত এক অজগর দেখে হতবাক হয়ে গেলেন। মশারির মধ্যে পেঁচিয়ে ফাঁদে পড়ে আছে। শেষে মশারি থেকে ছাড়িয়ে অক্ষত অবস্থায় এটি ধরেন তিনি।

সিলেট শহরতলির খাদিম এলাকার মেঘনা পাত্রের শয়নকক্ষ থেকে এভাবেই গত রোববার মধ্যরাতে ধরা পড়ে অজগর। গতকাল সোমবার দুপুরে অজগরটি বন বিভাগের মাধ্যমে খাদিমনগর জাতীয় উদ্যানে অবমুক্ত করা হয়।

মেঘনা পাত্র একটি বেসরকারি সংস্থায় মাঠকর্মীর পদে চাকরি করেন। স্ত্রী ও তিন ছেলে নিয়ে তাঁর পরিবার। বাস করেন দলইপাড়ার পাত্রপল্লিতে। তাঁর বসতঘরের আশপাশে টিলা ও ঘন বন। বনাঞ্চল থেকে অজগরটি ঘরে ঢুকে পড়েছে বলে ধারণা করছেন বন বিভাগের কর্মীরা।

মেঘনা পাত্র (৩০) জানান, রাত প্রায় পৌনে একটার সময় ভারী কিছু মশারি খুলে শরীরের ওপর পড়লে তাঁর ঘুম ভেঙে যায়। মশারিতে আটকা পড়ায় অজগরটি অনায়াসে ধরে ঘরে বস্তাবন্দী করে রাখেন। সকালবেলা দেখা যায়, বস্তা নেই। উঠানে হাঁস-মুরগির কক্ষটিও খোলা। আশপাশে খোঁজাখুঁজি করে শেষে টিলা এলাকার জঙ্গলে গিয়ে পাওয়া যায় অজগরটি। মেঘনা পাত্র বলেন, তিনটি হাঁস খেয়ে ওত পেতে বসেছিল অজগরটি। এবার রশি দিয়ে ফাঁদ দিয়ে ধরে বন বিভাগে তাঁরা খবর দেন।

বেলা একটার দিকে বেসরকারি সংস্থা পাত্র কল্যাণ পরিষদের (পাসকপ) মাধ্যমে খবর পেয়ে খাদিমনগর জাতীয় উদ্যানে কর্তব্যরত বন বিভাগের একটি দল দলইপাড়া গিয়ে মেঘনা পাত্রের বাড়ি থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় অজগরটি। এর ওজন ৩৫ কেজি। এটি ১২ ফুট লম্বা ছিল।

খাদিমনগর জাতীয় উদ্যানে কর্মরত বন বিভাগের কর্মকর্তা আবদুল কাদির জানালেন, অজগরটি প্রাপ্তবয়স্ক। বন্যার পর তিন দিন ধরে গরম পড়ায় এটি বন থেকে বের হয়ে খাবারের জন্য ঘরে গিয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে এটি সুস্থ দেখানোয় গতকাল দুপুরের দিকে সংরক্ষিত বনে অবমুক্ত করা হয়েছে।

সিলেট ও চট্টগ্রামের পাহাড়-টিলা অঞ্চলে অজগরের বসবাস রয়েছে জানিয়ে বন বিভাগের ওই কর্মকর্তা বলেন, অজগরকে নিয়ে মানুষের মধ্যে একধরনের অমূলক ভয় আছে। এ কারণে দেখামাত্র মেরে ফেলা হয়। মেঘনা পাত্র সাহস করে অক্ষত অবস্থায় ধরে দিয়েছেন, এটি আসলেই প্রশংসনীয়।

পাত্র কল্যাণ পরিষদের (পাসকপ) প্রধান নির্বাহী গৌরাঙ্গ পাত্র প্রথম আলোকে জানান, প্রাণিকুলের প্রতি বিশেষ মায়া দেখা যায় মেঘনার মধ্যে। এর আগেও তিনি তাঁর ঘরের উঠানে ফাঁদে ধরা পড়া দুটো মেছোবাঘ ও একটি অজগর অক্ষত অবস্থায় ধরে বন বিভাগে দিয়েছিলেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

বিছানায় ১২ ফুট অজগর পরে উদ্যানে অবমুক্ত

আপডেট টাইম : ১১:২০:৫৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ জুলাই ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গভীর ঘুমে সবাই। মশারি টানানো। হঠাৎ হুড়মুড় করে শরীরের ওপর পড়ল মশারি। গৃহকর্তা ঘুম থেকে জেগে দেখলেন শরীরের ওপর পড়া মশারিতে ভারী লম্বা কোনো বস্তু। দ্রুত বাতি জ্বালালেন তিনি। বাতির আলোয় তিনি আস্ত এক অজগর দেখে হতবাক হয়ে গেলেন। মশারির মধ্যে পেঁচিয়ে ফাঁদে পড়ে আছে। শেষে মশারি থেকে ছাড়িয়ে অক্ষত অবস্থায় এটি ধরেন তিনি।

সিলেট শহরতলির খাদিম এলাকার মেঘনা পাত্রের শয়নকক্ষ থেকে এভাবেই গত রোববার মধ্যরাতে ধরা পড়ে অজগর। গতকাল সোমবার দুপুরে অজগরটি বন বিভাগের মাধ্যমে খাদিমনগর জাতীয় উদ্যানে অবমুক্ত করা হয়।

মেঘনা পাত্র একটি বেসরকারি সংস্থায় মাঠকর্মীর পদে চাকরি করেন। স্ত্রী ও তিন ছেলে নিয়ে তাঁর পরিবার। বাস করেন দলইপাড়ার পাত্রপল্লিতে। তাঁর বসতঘরের আশপাশে টিলা ও ঘন বন। বনাঞ্চল থেকে অজগরটি ঘরে ঢুকে পড়েছে বলে ধারণা করছেন বন বিভাগের কর্মীরা।

মেঘনা পাত্র (৩০) জানান, রাত প্রায় পৌনে একটার সময় ভারী কিছু মশারি খুলে শরীরের ওপর পড়লে তাঁর ঘুম ভেঙে যায়। মশারিতে আটকা পড়ায় অজগরটি অনায়াসে ধরে ঘরে বস্তাবন্দী করে রাখেন। সকালবেলা দেখা যায়, বস্তা নেই। উঠানে হাঁস-মুরগির কক্ষটিও খোলা। আশপাশে খোঁজাখুঁজি করে শেষে টিলা এলাকার জঙ্গলে গিয়ে পাওয়া যায় অজগরটি। মেঘনা পাত্র বলেন, তিনটি হাঁস খেয়ে ওত পেতে বসেছিল অজগরটি। এবার রশি দিয়ে ফাঁদ দিয়ে ধরে বন বিভাগে তাঁরা খবর দেন।

বেলা একটার দিকে বেসরকারি সংস্থা পাত্র কল্যাণ পরিষদের (পাসকপ) মাধ্যমে খবর পেয়ে খাদিমনগর জাতীয় উদ্যানে কর্তব্যরত বন বিভাগের একটি দল দলইপাড়া গিয়ে মেঘনা পাত্রের বাড়ি থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় অজগরটি। এর ওজন ৩৫ কেজি। এটি ১২ ফুট লম্বা ছিল।

খাদিমনগর জাতীয় উদ্যানে কর্মরত বন বিভাগের কর্মকর্তা আবদুল কাদির জানালেন, অজগরটি প্রাপ্তবয়স্ক। বন্যার পর তিন দিন ধরে গরম পড়ায় এটি বন থেকে বের হয়ে খাবারের জন্য ঘরে গিয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে এটি সুস্থ দেখানোয় গতকাল দুপুরের দিকে সংরক্ষিত বনে অবমুক্ত করা হয়েছে।

সিলেট ও চট্টগ্রামের পাহাড়-টিলা অঞ্চলে অজগরের বসবাস রয়েছে জানিয়ে বন বিভাগের ওই কর্মকর্তা বলেন, অজগরকে নিয়ে মানুষের মধ্যে একধরনের অমূলক ভয় আছে। এ কারণে দেখামাত্র মেরে ফেলা হয়। মেঘনা পাত্র সাহস করে অক্ষত অবস্থায় ধরে দিয়েছেন, এটি আসলেই প্রশংসনীয়।

পাত্র কল্যাণ পরিষদের (পাসকপ) প্রধান নির্বাহী গৌরাঙ্গ পাত্র প্রথম আলোকে জানান, প্রাণিকুলের প্রতি বিশেষ মায়া দেখা যায় মেঘনার মধ্যে। এর আগেও তিনি তাঁর ঘরের উঠানে ফাঁদে ধরা পড়া দুটো মেছোবাঘ ও একটি অজগর অক্ষত অবস্থায় ধরে বন বিভাগে দিয়েছিলেন।