তারাপুরের পাশের গাজীপুর গ্রাম থেকে আসা আরেক তরুণ শাহরিয়ার রিফাত বলেন, ‘আমি প্রায় দিনই সকালে লাল শাপলাগুলো দেখতে আসি। যাওয়ার সময় কয়েকটি ছিঁড়ে নিয়ে যাই বাড়িতে বসেও সৌন্দর্য দেখবো বলে। শাপলা ফুলগুলো ভোরবেলা ফোটে আর দিনের আলো বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাপড়িগুলো বুজে যায়।’
শাহনাজ পারভীন নামে এক তরুণী বলেন, ‘অসংখ্য পাপড়ির বিন্যাসে প্রতিটি শাপলা ফুল যে কারোই মন কেড়ে নেয়। লাল শাপলা ফুলের স্পর্শ নিতে এখানে এসেছি। লাল শাপলার সৌন্দর্যে আমি মুগ্ধ।’
তারাপুর গ্রামের বাসিন্দা চল্লিশোর্ধ্ব দুলাল দাস বলেন, ‘প্রায় ৩০ একর জায়গা জুড়ে এই শাপলা জন্মেছে। আমি ছোটবেলা থেকেই গ্রামে বাস করি। এখনোই ধানের জমিতে এই লাল শাপলা দেখিনি। এ বছর বন্যার কারণে জমিতে ফসল নেই। বন্যার পানি কমার কিছুদিন পরই এই লাল শাপলা জন্মেছে। বর্তমানে ভোর থেকেই বিভিন্ন স্থানের মানুষ এই শাপলা দেখতে আসছেন।’
গ্রামের কৃষক মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এই লাল হাপলা (শাপলা) কেমনে আছে আংগো খেতো জানি না। তবে হাপলাগুলা দেখতে অনেক সুন্দর লাগে। কত মানুষ আঁইয়ে ছবি তোলনের লাই। মাইনসে খুশি, আনরাও খুশি।’
লাকসামের বিজরা রহমানিয়া চিরসবুজ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আবুল খায়ের বলেন, ‘অতীতে এই এলাকায় বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে এভাবে লাল শাপলার হাতছানি দেখা যায়নি। লাল শাপলা গ্রামবাংলার প্রকৃতির জন্য এক অনবদ্য সৌন্দর্যের প্রতীক। তারাপুর গ্রামের পুরো ফসলের মাঠের চারদিকে ফুটে থাকা এসব শাপলার রং প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যেন একাকার হয়ে গেছে। আমি নিজেও ঘুরে দেখে এসেছি। ভোর বেলায় শাপলা ফুলের পাঁপড়িতে হালকা শিশিরের ছোঁয়া এদের সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে তোলে। বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ আসছেন সৌন্দর্য উপভোগ করতে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কুমিল্লার উপ-পরিচালক আইউব মাহমুদ বলেন, ‘বন্যার কারণে এই লাল শাপলা লাকসামের পাশাপাশি মনোহরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার কৃষি জমিতেও জন্মেছে। কিছুদিন পরেই এসব জমিতে বোরো আবাদ হবে। এই শাপলার পাতা, কাণ্ড পচে গেলে মাটিতে জৈব পদার্থ হিসেবে কাজ করবে। মূলত লাল শাপলা প্রকৃতির সৌন্দর্য বাড়ায়। ভ্রমণপিপাসু ও প্রকৃতিপ্রেমী মানুষরা এতে বেশি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন।’