ঢাকা ০৪:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাড়ছে নৌকার কদর ঘিওরে নৌকার হাট জমজমাট

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:২০:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ জুলাই ২০১৭
  • ৪৮৪ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  কালীগঙ্গা আর ধলেশ্বরী নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে ঘিওর ও পাশ্ববর্তী দৌলতপুর উপজেলার নাঞ্চাল পাবিত হয়েছে। তাই বর্ষা মওসুমে মানিকগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় চলছে নৌকা তৈরি ও বিক্রির ধুম। ঘিওর ও দৌলতপুরের ১৫ ইউনিয়নের নিঞ্চাল বর্ষার পানিতে পাবিত হওয়ায় নৌকার কদর বেড়েছে। এসব এলাকার মানুষ মানিকগঞ্জ জেলার বৃহত্তম নৌকার হাট ঘিওরে ভিড় করছে নৌকা কিনতে।
ঘিওর উপজেলার চার ইউনিয়নের ২০ গ্রাম ও দৌলতপুরের দুর্গম এলাকায় বর্ষায় নৌকা ছাড়া চলাফেরা করা সম্ভব নয়। তাই বর্ষা আসার আগেই এ দুই উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের কাঠমিস্ত্রীরা নৌকা তৈরি ও মেরামতের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বর্ষা মওসুমে এ অঞ্চলের মানুষের মালামাল পরিবহন ও চলাচলের একমাত্র বাহন হিসেবে নৌকার ব্যবহার দীর্ঘ দিনের।
উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় এখনো পারাপারে পুরোদমে ব্যবহার হচ্ছে ডিঙ্গি নৌকা। নৌকাশিল্পের জন্য বিখ্যাত ঘিওরের কারিগরদের তৈরি নৌকা এ উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি হচ্ছে হরিরামপুর, শিবালয়, দৌলতপুরসহ বিভিন্ন এলাকায়। নৌকা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় কাটছে মিস্ত্রিপাড়ার নারী-পুরুষদের।
বর্ষার আগমনে মানিকগঞ্জের ঘিওর, দৌলতপুর, শিবালয় ও হরিরামপুর উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকা পানি উঠে গেছে। রাস্তাঘাট ভেঙে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। বর্ষার পানি জমে বাড়ির আঙিনায়। এ সময় এসব অঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র বাহন হয়ে ওঠে নৌকা।
অন্যান্য বছরের মতো এবারো বর্ষার শুরুতেই ঘিওর উপজেলা সদরের প্রধান ঈদগাহ মাঠের নৌকা বিক্রির হাট জমজমাট হয়ে উঠেছে। ওই হাটে ক্রেতাদের জন্য থরে থরে সাজানো রয়েছে বাহারি কয়েক শ’ নৌকা।
ঘিওর বাজারের কাঠমিস্ত্রী রবি সূত্রধর, নিলকমল সূত্রধর, মাসুদ ও হারেছ জানান, বর্ষা মওসুমে তারা নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত। সপ্তাহে তাদের কারখানা থেকে ৮-১০টি নৌকা ঘিওর, দৌলতপুর, বরংগাইল, তরা ও মহাদেবপুর হাটে বিক্রি করা হয়। বর্তমানে লোহা ও কাঠের দাম বেড়ে যাওয়ায় নৌকা তৈরিতে খরচ বেড়েছে। নৌকার আকার ও প্রকারভেদে তিন থেকে পনের হাজার টাকায় বিক্রি হয়। তবে লাভের অংশ আগের থেকে কমে গেছে। কাঠমিস্ত্রি সুবল দাস জানান, তিনি দাদার আমল থেকেই দেখছেন নৌকা বানানো। বর্ষা এলেই ধুমধাম শব্দ হয় মিস্ত্রিপাড়ায়। বর্ষা মওসুম শুরুর কিছু আগে অর্থাৎ জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে তারা নৌকা তৈরি শুরু করেন এবং ভাদ্র মাস পর্যন্ত চলে। বর্তমানে ছোট ডিঙি ও কোষা নৌকার কদর বেশি। কড়ই, জাম্বল, আম ও কদম কাঠের নৌকা বেশি চলে। তিনি দুঃখ করে বলেন, ‘সরকারি সুযোগ-সুবিধা না থাকায় আমরা এ ব্যবসায় অনেক কষ্ট দুঃখের মধ্যে টিকে আছি’।
ঘিওরের বানিয়াজুড়ি, বালিয়াডাঙ্গা, সিংজুড়ি ও বেগুন নারচি, দৌলতপুর উপজেলার জিয়নপুর, বাঁচামারা, বাঘুটিয়া, চরকাটারি, খলসি, ধামশ্বর, কলিয়া ও বিনোদপুর এবং শিবালয়ের কয়েকটি গ্রামের মানুষ বর্ষায় জমায়েত হন ঘিওরের নৌকার হাটে। সপ্তাহের প্রতি বুধবার হাটের দিন হওয়ায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিক্রেতারা নৌকা সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রাখেন। এ ছাড়াও প্রায় সারা সপ্তাহজুড়েই কম-বেশি বিক্রি হয় নৌকা।
ঘিওর হাটে নৌকা বিক্রি করতে আসা খগেন সূত্রধর জানান, ১০ হাত লম্বা এবং দুই হাত প্রস্থের একটি নৌকার মূল্য তিন হাজার থেকে তিন হাজার ২০০ টাকা। এরকম ১১/৩ সাইজের নৌকা চার হাজার, ১২/৩ সাইজের সাড়ে চার হাজার, ১৩/৩ সাইজের পাঁচ হাজার, ১৪/৩ সাইজের সাড়ে পাঁচ হাজার এবং ১৫/৩ সাইজের নৌকা বিক্রি করেন ছয় হাজার টাকায়। এ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের স্টিলের নৌকা বিক্রি করেন তিনি।
দৌলতপুর উপজেলার বাচামারা এলাকার সিরাজ প্রামাণিক জানান, প্রতি বছর বর্ষায় তার একটি করে নৌকা কিনতে হয়। তবে এ বছর নৌকার দাম একটু বেশি বলে মন্তব্য করেন তিনি। তারপরও বাড়ির কাছাকাছি এলাকায় তৈরি নৌকা কিনতে পারায় অনেক খুশি তিনি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বাড়ছে নৌকার কদর ঘিওরে নৌকার হাট জমজমাট

আপডেট টাইম : ০৪:২০:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ জুলাই ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  কালীগঙ্গা আর ধলেশ্বরী নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে ঘিওর ও পাশ্ববর্তী দৌলতপুর উপজেলার নাঞ্চাল পাবিত হয়েছে। তাই বর্ষা মওসুমে মানিকগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় চলছে নৌকা তৈরি ও বিক্রির ধুম। ঘিওর ও দৌলতপুরের ১৫ ইউনিয়নের নিঞ্চাল বর্ষার পানিতে পাবিত হওয়ায় নৌকার কদর বেড়েছে। এসব এলাকার মানুষ মানিকগঞ্জ জেলার বৃহত্তম নৌকার হাট ঘিওরে ভিড় করছে নৌকা কিনতে।
ঘিওর উপজেলার চার ইউনিয়নের ২০ গ্রাম ও দৌলতপুরের দুর্গম এলাকায় বর্ষায় নৌকা ছাড়া চলাফেরা করা সম্ভব নয়। তাই বর্ষা আসার আগেই এ দুই উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের কাঠমিস্ত্রীরা নৌকা তৈরি ও মেরামতের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বর্ষা মওসুমে এ অঞ্চলের মানুষের মালামাল পরিবহন ও চলাচলের একমাত্র বাহন হিসেবে নৌকার ব্যবহার দীর্ঘ দিনের।
উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় এখনো পারাপারে পুরোদমে ব্যবহার হচ্ছে ডিঙ্গি নৌকা। নৌকাশিল্পের জন্য বিখ্যাত ঘিওরের কারিগরদের তৈরি নৌকা এ উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি হচ্ছে হরিরামপুর, শিবালয়, দৌলতপুরসহ বিভিন্ন এলাকায়। নৌকা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় কাটছে মিস্ত্রিপাড়ার নারী-পুরুষদের।
বর্ষার আগমনে মানিকগঞ্জের ঘিওর, দৌলতপুর, শিবালয় ও হরিরামপুর উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকা পানি উঠে গেছে। রাস্তাঘাট ভেঙে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। বর্ষার পানি জমে বাড়ির আঙিনায়। এ সময় এসব অঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র বাহন হয়ে ওঠে নৌকা।
অন্যান্য বছরের মতো এবারো বর্ষার শুরুতেই ঘিওর উপজেলা সদরের প্রধান ঈদগাহ মাঠের নৌকা বিক্রির হাট জমজমাট হয়ে উঠেছে। ওই হাটে ক্রেতাদের জন্য থরে থরে সাজানো রয়েছে বাহারি কয়েক শ’ নৌকা।
ঘিওর বাজারের কাঠমিস্ত্রী রবি সূত্রধর, নিলকমল সূত্রধর, মাসুদ ও হারেছ জানান, বর্ষা মওসুমে তারা নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত। সপ্তাহে তাদের কারখানা থেকে ৮-১০টি নৌকা ঘিওর, দৌলতপুর, বরংগাইল, তরা ও মহাদেবপুর হাটে বিক্রি করা হয়। বর্তমানে লোহা ও কাঠের দাম বেড়ে যাওয়ায় নৌকা তৈরিতে খরচ বেড়েছে। নৌকার আকার ও প্রকারভেদে তিন থেকে পনের হাজার টাকায় বিক্রি হয়। তবে লাভের অংশ আগের থেকে কমে গেছে। কাঠমিস্ত্রি সুবল দাস জানান, তিনি দাদার আমল থেকেই দেখছেন নৌকা বানানো। বর্ষা এলেই ধুমধাম শব্দ হয় মিস্ত্রিপাড়ায়। বর্ষা মওসুম শুরুর কিছু আগে অর্থাৎ জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে তারা নৌকা তৈরি শুরু করেন এবং ভাদ্র মাস পর্যন্ত চলে। বর্তমানে ছোট ডিঙি ও কোষা নৌকার কদর বেশি। কড়ই, জাম্বল, আম ও কদম কাঠের নৌকা বেশি চলে। তিনি দুঃখ করে বলেন, ‘সরকারি সুযোগ-সুবিধা না থাকায় আমরা এ ব্যবসায় অনেক কষ্ট দুঃখের মধ্যে টিকে আছি’।
ঘিওরের বানিয়াজুড়ি, বালিয়াডাঙ্গা, সিংজুড়ি ও বেগুন নারচি, দৌলতপুর উপজেলার জিয়নপুর, বাঁচামারা, বাঘুটিয়া, চরকাটারি, খলসি, ধামশ্বর, কলিয়া ও বিনোদপুর এবং শিবালয়ের কয়েকটি গ্রামের মানুষ বর্ষায় জমায়েত হন ঘিওরের নৌকার হাটে। সপ্তাহের প্রতি বুধবার হাটের দিন হওয়ায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিক্রেতারা নৌকা সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রাখেন। এ ছাড়াও প্রায় সারা সপ্তাহজুড়েই কম-বেশি বিক্রি হয় নৌকা।
ঘিওর হাটে নৌকা বিক্রি করতে আসা খগেন সূত্রধর জানান, ১০ হাত লম্বা এবং দুই হাত প্রস্থের একটি নৌকার মূল্য তিন হাজার থেকে তিন হাজার ২০০ টাকা। এরকম ১১/৩ সাইজের নৌকা চার হাজার, ১২/৩ সাইজের সাড়ে চার হাজার, ১৩/৩ সাইজের পাঁচ হাজার, ১৪/৩ সাইজের সাড়ে পাঁচ হাজার এবং ১৫/৩ সাইজের নৌকা বিক্রি করেন ছয় হাজার টাকায়। এ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের স্টিলের নৌকা বিক্রি করেন তিনি।
দৌলতপুর উপজেলার বাচামারা এলাকার সিরাজ প্রামাণিক জানান, প্রতি বছর বর্ষায় তার একটি করে নৌকা কিনতে হয়। তবে এ বছর নৌকার দাম একটু বেশি বলে মন্তব্য করেন তিনি। তারপরও বাড়ির কাছাকাছি এলাকায় তৈরি নৌকা কিনতে পারায় অনেক খুশি তিনি।