ঢাকা ০২:২৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নৌকা দেখলেই ছুটে আসছে বন্যা দুর্গতরা চরাঞ্চলগুলোতে ত্রাণের জন্য হাহাকার

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:২১:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ জুলাই ২০১৭
  • ৩৫০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি সামান্য হ্রাস পেলেও ব্রহ্মপুত্রের পানি এখনও চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার পানিতে দীর্ঘদিন ঘর-বাড়ি তলিয়ে থাকায় দুর্ভোগ বেড়েছে চরাঞ্চলের মানুষের। চরাঞ্চলগুরে মানুষগুলোর ত্রাণের জন্য হাহাকার বাড়ছে। নৌকা বা নৌকার ইঞ্জিনের শব্দ শুনলেই ত্রাণের জন্য ছুটে আসছে বানভাসী মানুষগুলো।

কুড়িগ্রাম জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকার ২ শতাধিক চর ও দ্বীপচরের বানভাসী মানুষজন ১০ দিন ধরে পানিবন্দী থাকায় তীব্র খাদ্য সংকটে পড়েছেন তারা।

জেলার ৭ উপজেলার ৪২ ইউনিয়নের ৫ শতাধিক গ্রামের প্রায় ২ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাবে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। অনেক বানভাসী পরিবার ঘরের ভিতর উচুঁ মাচান বেধে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছে। পাঠদান বন্ধ রয়েছে প্রাথমিক, মাধ্যমিক স্কুল ও মাদ্রাসাসহ ১৯৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের।

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বালাডোবা চরের আরমান আলীর স্ত্রী সাহেদা বেগম জানান, সকাল থেকে এখনও রান্না করা হয় নাই। ঘরে চাল নাই। তার স্বামী বাকিতে চাল কিনতে বাজারে গেছে। চাল না পেলে না খেয়ে থাকতে হবে।

নৌকা দেখে কলার ভেলায় শিশু বাচ্চাকে নিয়ে ছুটে আসা একই চরের আরেক বাসিন্দা মাহবুবুর রহমানের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম জানান, ১০ দিন ধরে পানিবন্দী আছি। স্বামী কাজে যেতে পারে না, কোথাও কাজ নাই। আপনাদের নৌকা দেখে মনে হলো ত্রাণের নৌকা এসেছে, এজন্য এসে দেখি আপনারা ত্রাণ নিয়া আসেন নাই। ছোট ছেলে মেয়ে নিয়া ভেলার উপর দিন পার করছি।

এই বালাডোবা চরের শুধু সাহেদা ও আনোয়ারা বেগম নয় এ অবস্থা এখন এ চরের আকলিমা, মাজেদা, জেসমিন, রাশিদাসহ প্রায় ২ শতাধিক পরিবারের।

সাংবাদিকের নৌকা চরের কাছে ভিড়তেই ত্রাণের আশায় কলা গাছের ভেলা ও গলা পানি ভেঙ্গে ছুটে আসতে থাকে বানভাসীরা। পরে নৌকায় কোন সাহায্য নেই দেখে হতাশ হয়ে ফিরে যায়। বন্যা দুর্গতারা অভিযোগ করেন এই চরে এখন পর্যন্ত কোন সাহায্য পৌঁছায়নি।

এ ব্যাপারে উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. বেলাল হোসেন জানান, বেগমগঞ্জ ইউনিয়নে ৪ হাজারেরও বেশি পরিবার প্রায় ১০ দিন ধরে পানিবন্দী জীবন-যাপন করছে। এ পর্যন্ত যে বরাদ্দ পেয়েছি তা সাড়ে ৮শ পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল ও দেড়শ প্যাকেট শুকনো খাবার দেড়শ পরিবারকে দিতেই শেষ হয়ে গেছে। আমার ইউনিয়নের ১২টি চরের সবগুলোতেই দেওয়া সম্ভব হয়নি। নতুন করে বরাদ্দ পেলে দেওয়া হবে।

এ অবস্থা শুধু বালাডোবা চরেরই নয় ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার সকল চর ও দ্বীপচরের। কোথাও কোথাও ত্রাণের ১০ কেজি চাল ও শুকনো খাবারের একটি প্যাকেট জুটলেও পরিবারের ৫ থেকে ১০ জন সদস্যের জন্য তা কোন কাজেই আসছে না।

এদিকে কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি সামান্য হ্রাস পেলেও বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে ধরলার পানি হ্রাস পেয়ে সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান জানান, বন্যার্তদের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে ৪শ মেট্রিক টন চাল ও ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও ৪ হাজার শুকনো খাবার প্যাকেট বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘন্টায় চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ১০ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়ে বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধরলা নদীর পানি কমে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

নৌকা দেখলেই ছুটে আসছে বন্যা দুর্গতরা চরাঞ্চলগুলোতে ত্রাণের জন্য হাহাকার

আপডেট টাইম : ১১:২১:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ জুলাই ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি সামান্য হ্রাস পেলেও ব্রহ্মপুত্রের পানি এখনও চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার পানিতে দীর্ঘদিন ঘর-বাড়ি তলিয়ে থাকায় দুর্ভোগ বেড়েছে চরাঞ্চলের মানুষের। চরাঞ্চলগুরে মানুষগুলোর ত্রাণের জন্য হাহাকার বাড়ছে। নৌকা বা নৌকার ইঞ্জিনের শব্দ শুনলেই ত্রাণের জন্য ছুটে আসছে বানভাসী মানুষগুলো।

কুড়িগ্রাম জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকার ২ শতাধিক চর ও দ্বীপচরের বানভাসী মানুষজন ১০ দিন ধরে পানিবন্দী থাকায় তীব্র খাদ্য সংকটে পড়েছেন তারা।

জেলার ৭ উপজেলার ৪২ ইউনিয়নের ৫ শতাধিক গ্রামের প্রায় ২ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাবে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। অনেক বানভাসী পরিবার ঘরের ভিতর উচুঁ মাচান বেধে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছে। পাঠদান বন্ধ রয়েছে প্রাথমিক, মাধ্যমিক স্কুল ও মাদ্রাসাসহ ১৯৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের।

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বালাডোবা চরের আরমান আলীর স্ত্রী সাহেদা বেগম জানান, সকাল থেকে এখনও রান্না করা হয় নাই। ঘরে চাল নাই। তার স্বামী বাকিতে চাল কিনতে বাজারে গেছে। চাল না পেলে না খেয়ে থাকতে হবে।

নৌকা দেখে কলার ভেলায় শিশু বাচ্চাকে নিয়ে ছুটে আসা একই চরের আরেক বাসিন্দা মাহবুবুর রহমানের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম জানান, ১০ দিন ধরে পানিবন্দী আছি। স্বামী কাজে যেতে পারে না, কোথাও কাজ নাই। আপনাদের নৌকা দেখে মনে হলো ত্রাণের নৌকা এসেছে, এজন্য এসে দেখি আপনারা ত্রাণ নিয়া আসেন নাই। ছোট ছেলে মেয়ে নিয়া ভেলার উপর দিন পার করছি।

এই বালাডোবা চরের শুধু সাহেদা ও আনোয়ারা বেগম নয় এ অবস্থা এখন এ চরের আকলিমা, মাজেদা, জেসমিন, রাশিদাসহ প্রায় ২ শতাধিক পরিবারের।

সাংবাদিকের নৌকা চরের কাছে ভিড়তেই ত্রাণের আশায় কলা গাছের ভেলা ও গলা পানি ভেঙ্গে ছুটে আসতে থাকে বানভাসীরা। পরে নৌকায় কোন সাহায্য নেই দেখে হতাশ হয়ে ফিরে যায়। বন্যা দুর্গতারা অভিযোগ করেন এই চরে এখন পর্যন্ত কোন সাহায্য পৌঁছায়নি।

এ ব্যাপারে উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. বেলাল হোসেন জানান, বেগমগঞ্জ ইউনিয়নে ৪ হাজারেরও বেশি পরিবার প্রায় ১০ দিন ধরে পানিবন্দী জীবন-যাপন করছে। এ পর্যন্ত যে বরাদ্দ পেয়েছি তা সাড়ে ৮শ পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল ও দেড়শ প্যাকেট শুকনো খাবার দেড়শ পরিবারকে দিতেই শেষ হয়ে গেছে। আমার ইউনিয়নের ১২টি চরের সবগুলোতেই দেওয়া সম্ভব হয়নি। নতুন করে বরাদ্দ পেলে দেওয়া হবে।

এ অবস্থা শুধু বালাডোবা চরেরই নয় ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার সকল চর ও দ্বীপচরের। কোথাও কোথাও ত্রাণের ১০ কেজি চাল ও শুকনো খাবারের একটি প্যাকেট জুটলেও পরিবারের ৫ থেকে ১০ জন সদস্যের জন্য তা কোন কাজেই আসছে না।

এদিকে কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি সামান্য হ্রাস পেলেও বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে ধরলার পানি হ্রাস পেয়ে সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান জানান, বন্যার্তদের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে ৪শ মেট্রিক টন চাল ও ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও ৪ হাজার শুকনো খাবার প্যাকেট বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘন্টায় চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ১০ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়ে বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধরলা নদীর পানি কমে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।