হাওর বার্তা ডেস্কঃ স্বামীকে বেআইনিভাবে গ্রেপ্তার, হয়রানি ও চাঁদাবাজির বিষয়ে কথিত সাংবাদিকের স্ত্রীর অভিযোগকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন পুলিশের ডেমরা জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) ইফতেখায়রুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, ওই নারীর স্বামী এলাকায় মাদকের সঙ্গে জড়িত। তাদের বানোয়াট অভিযোগ তাকে থামাতে পারবে না। এলাকাকে মাদকমুক্ত করে ছাড়বেন তিনি।বৃহস্পতিবার হাওর বার্তার সঙ্গে আলাপকালে ইফতেখায়রুল ইসলাম আরো বলেন, কারো কাছ থেকে এক পয়সা চাঁদাবাজি করেছেন, কিংবা কাউকে অন্যায়ভাবে হয়রানি করেছেন এমন প্রমাণ কেউ দিতে পারলে চাকরি ছেড়ে দেবেন তিনি।
এর আগে মঙ্গলবার ইফতেখায়রুল ইসলামসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন নীরব ওরফে নিবিড় ওরফে ফরমান উল্লাহ খান নামের এক কথিত সাংবাদিকের স্ত্রী নাজমা। মামলায় নাজমা তার স্বামীকে বেআইনি আটক, হয়রানি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ করেন।
৩১তম বিসিএসের পুলিশ কর্মকর্তা ইফতেখায়রুল ইসলাম গত বছরের ডিসেম্বরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপির) ডেমরা জোনে কাজ শুরু করেন। পেশাগত দায়িত্ব পালনের বাইরে নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়ে বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন ইতিমধ্যে। বিশেষ করে তার এলাকায় মাদক নির্মূল, ইভটিজিং প্রতিরোধের পাশাপাশি অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টার খবর গণমাধ্যমে এসেছে অনেকবার।
সজ্জন বলে পরিচিত এই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও হয়রানির অভিযোগ এনে মামলা হওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে এর প্রতিবাদ করছেন। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ মাদকের বিরুদ্ধে তার কঠোর অবস্থানের জন্য সাধুবাদ জানানোর পাশাপাশি তার পাশে থাকারও অঙ্গীকার করছেন।
এসব বিষয় নিয়ে হাওর বার্তার সঙ্গে ইফতেখায়রুল ইসলামের মুঠোফোনে কথা হয়। আলাপচারিতায় ছিলেন স্টাফ রিপোর্টার বোরহান উদ্দিন।
আমি গত বছরের ডিসেম্বরে ডেমরা জোনে জয়েন করি। কয়েক দিন পর আমার ফোনে একটি কল আসে। পরে জানতে পারি কল করা ব্যক্তি কথিত সাংবাদিক নীরব। আমার প্রশংসা করার পাশাপাশি এখনকার পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, ‘আপনি ভালো অফিসার শুনেছি। আপনি এসব অসৎ পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবেন।’ শুনে খুব খুশি হলাম। যদি এমন কেউ থাকে তাহলে তাদের চিহ্নিত করা সহজ হবে। কিন্তু কিছুদিন পর এই মানুষটার আসল পরিচয় জানতে পেরে রীতিমতো অবাক হই।
জানতে পারি, নিজেকে ক্রাইম নিউজের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এই লোক নিজে মাদক সেবন করে, মাদকের ব্যবসা করে, আবার যারা মাদক ব্যবসাসহ অবৈধ কাজ করে তাদের কাছ থেকে হুমকি দিয়ে চাঁদাবাজি করে। শুধু তাই না, কোনো পুলিশ এই লোকের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে গেলে তার বিরুদ্ধে পুলিশ হেডকোয়ার্টার, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করে।
তখন চিন্তা করলাম, একে তো ছাড়া যাবে না। নিজস্ব সোর্স মারফত জানতে পারলাম নীরব তার বাসায় সহযোগীদের নিয়ে মাদকের আসর বসিয়েছে। পরে অভিযান চালিয়ে ৬৫টি ইয়াবাসহ নীরবকে গ্রেপ্তার করি। সেবার দুই মাসের বেশি জেল খেটে জামিনে বের হয়ে আবার নতুন জায়গায় মাদকের আখড়া বানায় নীরব। পরে নিরবের নতুন আখড়ার সন্ধান পেয়ে সেখানে অভিযান চালাই। তবে তাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। সেই মামলায় নীরব পলাতক আসামি।
নীরব তার বিরুদ্ধে অ্যাকশনে গেলে পুলিশ হেডকোয়ার্টারে অভিযোগ দিয়ে পুলিশ সদস্যদের হয়রানি করতে সিদ্ধহস্ত। কিন্তু আমি এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে কাজ শুরু করি। যে কারণে হয়তো ক্ষুব্ধ হয়ে আমার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও হয়রানির অভিযোগ এনে মামলা করেছে।
মামলা হয়েছে এখন তদন্ত হবে। তার আগে এ নিয়ে কিছু বলা ঠিক নয়। বলা হয়েছে, আমি নাকি নীরবের স্ত্রীকে অপমান করে থানা থেকে বের করে দিয়েছি। এ ধরনের কথা আমার বিরুদ্ধে কেউ বলবে এটা স্বপ্নেও ভাবিনি। আমি আমার বাসার কাজের ছোট্ট ছেলেটাকেও সম্মান দিয়ে কথা বলি। আপনারা এসে আমার এলাকায় দেখুন, আমার সম্পর্কে জানুন, তথ্য নিন, সত্যতা যাচাই করুন, ইউ আর মোস্ট ওয়েলকাম। আর আমার পদক্ষেপগুলো আইনগত ও নৈতিক মনে হলে মাদকমুক্ত করার এই চেষ্টায় আমাকে সহায়তা করুন।
অভিযোগের বিষয়ে আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, চাকরিতে জয়েন করার আগে বা পরে কারো কাছ থেকে এক পয়সা চাঁদাবাজি করেছি, কারো প্রতি অন্যায় আচরণ করেছি প্রমাণ করতে পারলে চাকরি ছেড়ে দেব।
ভুয়া সাংবাদিক ও মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আমার অভিযান চলবে। আমি থামব না। আমার পুরো এলাকা মাদকমুক্ত করেই আমি থামব।