হাওর বার্তা ডেস্কঃ রেইনট্রি ঘটনার এবার আলোচনায় এসেছে ইভানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ। অনলাইনেও বেশ সমালোচনা সৃষ্টি করেছে এই ঘটনা।
বাহাউদ্দীন ইভান বহুবার গাড়িতে শারীরিক সম্পর্ক করেছে বলে জানিয়েছেন তরুণী নিজেই। ইভানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে মামলা করা ওই তরুণী বলেন, ‘গত মে মাসে ৩০০ ফুট রাস্তায় ইভানের গাড়িতে যখন শারীরিক সম্পর্ক হয়, তখন সে গোপন তা ক্যামেরায় ভিডিও করে রাখে। বনানীতে বাসায় ডেকে ধর্ষণের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলার তদন্ত করছেন বনানী থানার এসআই সুলতানা আক্তার। শনিবার দুপুর ১২টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত মামলার বাদী এক তরুণী ও রিমান্ডে থাকা আসামি বাহাউদ্দিন ইভানকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। রোববার তরুণী নিজেই বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
তরুণীর ভাষ্য, ‘আমি মামলা করতে চাইনি। পুলিশকে বলেছিলাম, ইভানের কাছ থেকে ধর্ষণের ভিডিও, মোবাইল সেট, মোমোরি কার্ড এবং ব্যাগটি উদ্ধার করে দিলেই চলবে। ’ অতীতের ধর্ষণের ভিডিওগুলো তার নিজের মোমোরি কার্ডেও ছিল বলে স্বীকার করেন তরুণী।
জানা যায়, ওই তরুণীর ৫ বছর বয়সী সন্তান এখন তার নানীর কাছে গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রামে আছে। পুলিশ এবং যুগান্তরের কাছে সন্তানের ব্যাপারে অস্বীকার করলেও তরুণীর বাবা পুলিশকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তরুণী জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাতে তিনি প্রথম ইভানের বাসায় যান। একই সঙ্গে তরুণী দাবি করেন, তার নিজের বাসা, খিলক্ষেতের ৩০০ ফুট এলাকা, নিকুঞ্জ, বনানী এবং ইভানের গাড়িতে বেশ কয়েকদিন তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে। তবে এ সম্পর্ককেও ধর্ষণ হিসেবে উল্লেখ করেন তরুণী।
ইভানের স্ত্রী টুম্পার অভিযোগ, ‘পাঁচ হাজার টাকার কন্ট্রাক্টে ইভানের বাসায় এসেছিল ওই তরুণী। শারীরিক সম্পর্কের পর পুরো টাকা পরিশোধ করেনি ইভান। কারণ, তখন বাসায় টাকা ছিল না। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। টুম্পার দাবি, তরুণী একা ওই বাসায় আসেননি। তার এক ছেলে বন্ধুকে নিয়ে এসেছিলেন। ওই ছেলে বন্ধু বাসার বাইরে অবস্থান করছিল। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ওই ছেলে বন্ধুকে ফোন করে তরুণী জানায়, ১০-১২ পিস ইয়াবা নিয়ে আয়।
এই বাসায় বসে ইয়াবা খাব। তখন ইভান বলেন, বাসায় এসব হলে মা-বাবা ঘুম থেকে জেগে যাবে। পরে সমস্যা হবে। এ নিয়ে বাদানুবাদের এক পর্যায়ে তরুণীকে জোর করে বাসা থেকে বের করে দেয় ইভান। ’ টুম্পার দাবি, তরুণীর সঙ্গে যে ব্যাগটি ছিল সেটি তার ছেলে বন্ধুর কাছেই আছে। টুম্পা আরও জানান, ইভানের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
শনিবার বিকালেও ইভানের মোবাইল খুঁজতে পুলিশ বাসায় এসেছিল। বাসায় তার মোবাইল না পেয়ে বনানী থানার ওসি বিএম ফরমান আলী থানায় অবস্থানরত এক পুলিশ সদস্যের মোবাইলে ফোন করে রিমান্ডে থাকা ইভানের সঙ্গে কথা বলেন। ইভান তখন পুলিশকে জানায়, আলমারিতে খুঁজে দেখেন। কিন্তু পুলিশ সেখানেও তা খুঁজে পায়নি।
ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করা মামলার বাদী ওই তরুণী বলেন, তার বান্ধবী শারমীন এবং দূর সম্পর্কের বোন সুমির মাধ্যমে প্রায় এক বছর আগে ইভানের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সুমি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের শিল্পী। সুমি, শারমীন, ইভান এবং আমি একদিন গুলশানের নান্দুস রেস্টুরেন্টে সাক্ষাৎ করি। এরপর থেকে ফেসবুক এবং মোবাইল ফোনে ইভানের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হতো।
তরুণী বলেন, ‘আমরা এক সঙ্গে অনেক জায়গায় ঘুরতে যেতাম। যখন এক সঙ্গে ঘুরতে যেতাম তখন ইভানের মা ইতি এবং স্ত্রী টুম্পা প্রায়ই ফোন দিত। তখন সে তার মাকে বলত, আমি অরিনের সঙ্গে আছি। এ থেকে আমি বুঝতে পারি যে, আমাদের সম্পর্কের বিষয়টি তার মা জানত। আমি টুম্পার কথা জিজ্ঞাসা করলে বলত, টুম্পা তার বোন। ’
তরুণী বলেন, ‘আমরা ৩০০ ফুট এলাকা, উত্তরার বিভিন্ন স্থান, নিকুঞ্জ এবং বনানীর বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে যেতাম। ইভান তার বন্ধুদের কাছে আমাকে স্ত্রী বলে পরিচয় করিয়ে দিলেও আমি আপত্তি করতাম না। তার ৪-৫ জন বন্ধু আমাকে ভাবী বলেই ডাকেন। তিনি জানান, কয়েক মাস আগে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হওয়ার পর থেকেই সে আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়।
তরুণী বলেন, ‘ডিওএইচএসের বাসায় আমি উঠি গত ৪ জুন। পরদিন ইভান তার এক বন্ধুকে নিয়ে আমার বাসায় আসে। তার সঙ্গে ছিল মার্টিন বিয়ার এবং বিদেশি মদ। পরে সে আমাকে মদ এবং বিয়ার এক সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ায়।
এরপর আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়। তার বন্ধু ওই দৃশ্য ভিডিও করে। ওইদিন আমি প্রায় অজ্ঞান অবস্থায় ছিলাম। সকালে আমি সুস্থ হলে দেখতে পাই, ইভান আমার বেডরুমে। ওই সময় ইভান জানায়, সে যে মিশন নিয়ে এসেছিল ওই মিশন বাস্তবায়ন হয়েছে। এর পর আমি ফেসবুকে তার আইডি ব্লক করে দিই, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করি। কিন্তু সে ওই ভিডিও’র মাধ্যমে ব্ল্যাক মেইলিং করে বারবার আমাকে পেতে চাইত। বাসায় এসে হৈচৈ করত।
শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়া হুমকি দিত। ছুরি এবং রিভলভার নিয়েও আমার বাসায় আসত। বলত যদি আমি (তরুণী) তার সঙ্গে সম্পর্ক না রাখি তাহলে সে আÍহত্যা করবে। ভয় দেখিয়ে গত রমজানে নিকুঞ্জ এলাকায় নিয়ে তার গাড়িতে আমাকে ধর্ষণ করে। সেটিরও ভিডিও করে গোপন ক্যামেরায়। ’
বাদী (তরুণী) বলেন, ‘ইভান কখনও গাড়িচালক নিয়ে আমার কাছে আসত না। কখনও ইভান গাড়ি চালাত, আবার কখনও আমি নিজে তার গাড়ি ড্রাইভ করতাম। ঘটনার আগের দিন সন্ধ্যায় আমার বাসার নিচে গাড়ি নিয়ে এসে আমাকে জোর করে তার গাড়িতে তোলে। ওইদিন বলে, কাল আমার জন্মদিন। তুমি যদি আমার বাসায় না যাও তাহলে অতীতের সব ভিডিও ইন্টারনেটে ভাইরাল করে দেব। ’
তরুণী বলে, ‘ওইদিন রাতে বারিধারা ডিওএইচএস থেকে বনানী ন্যাম ভিলেজ পর্যন্ত পুরো রাস্তা রিকশায় গিয়েছি। একবার রিকশা বদল করেছি। বনানীতে যাওয়ার পর সরাসরি ইভান আমাকে বাসায় নেয়নি। বাসার কাছে যাওয়ার পর বলেছে, তুমি বাইরে অপেক্ষা কর। বাসায় জন্মদিনের কিছু কাজ আছে। আমি সেসব সেরে নিই। তখন আমি বুঝতে পারিনি যে, বাসার অন্য সদস্যদের ঘুমানোর জন্যে সে অপেক্ষা করছিল। প্রায় দুই ঘণ্টা সময় আমি বনানীর বিভিন্ন রাস্তায় রিকশায় ঘুরেছি। রিকশা ভাড়া দিয়েছি ৪৮০ টাকা। রাত ১১ টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে ইভান আমাকে বাসায় নিয়ে যায়। আমি তার রুমে প্রবেশের ৫-৭ মিনিট পর তার দুই বন্ধুও বাইরে থেকে তার রুমে আসে। তারা ইভানের হাতে একটি প্যাকেট দিয়ে চলে যায়।
সম্ভবত সেটি ছিল ইয়াবার প্যাকেট। এরপর তারা বাইরে চলে গেলে ২০-৩০ পিস ইয়াবা, মারিজোয়ানা (গাঁজা জাতীয়) এবং এক বোতল ড্রিংক নিয়ে বিছানায় বসে পড়ে। পরে আমাকে জোর করে ইয়াবা খাইয়ে ধর্ষণ করে। পাশাপাশি গোপন ক্যামেরায় তা ধারণ করে। এতে বাধা দেয়ায় আমাকে মারধরও করা হয়। সে যখন দ্বিতীয়বার ভয়ঙ্কর হওয়ার চেষ্টা করছিল তখন আমি বাসা থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করি। আমি মনে করছিলাম, আমি বেরিয়ে আসার চেষ্টা করলে সে স্বাভাবিক হবে।