ঢাকা ০৬:৩৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নির্মাণ শেষের আগেই কমলনগর বাঁধে ধস, নিম্নমানের কাজের অভিযোগ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৩২:৪৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৯ জুলাই ২০১৭
  • ৩৩২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  লক্ষ্মীপুরের কমলনগর মেঘনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই ধস দেখা দিয়েছে। নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে  ব্লক র্নিমাণ, ব্লক স্থাপন এবং জিও ব্যাগ ড্রাম্পিং না করাসহ নানা কারণে বাঁধে ধস নেমেছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বাঁধের উত্তর অংশে ধসে ভাঙন দেখা দিয়েছে। আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে কমলনগরের মানুষ। একইসঙ্গে ক্ষুব্ধও তারা। শুরু থেকেই বাঁধ নির্মাণে গাফিলতি ছিল। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নির্মাণ কাজে বিলম্ব, দফায় দফায় কাজ বন্ধ রাখা ও নিম্নমানের কাজের অভিযোগ ছিল প্রথম থেকেই। এ নিয়ে স্থানীয়রা বিক্ষোভ ও মানববন্ধনও করেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নির্ধারিত এক কিলোমিটার বাঁধের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এর মধ্যে বাঁধের উত্তর অংশের প্রায় ২০০ মিটার এলাকা ধসে পড়ছে। ভেঙে গেছে বেশ কিছু অংশ। বাঁধ ভেঙে ব্লক নদীতে পড়ে যাচ্ছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রথম দিকে নদীর তীর রক্ষা বাঁধের দক্ষিণ অংশে জিও ব্যাগ দিয়ে ড্রাম্পিং করা হয়েছে। কিন্তু বাঁধের উত্তর অংশের প্রায় ২০০ মিটার এলাকায় জিও ব্যাগ দিয়ে ড্রাম্পিং করা হয়নি। যে কারণে বর্ষা শুরু হওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে বাঁধ ধসে গেছে।

কমলনগর উপজেলা নদী ভাঙগন প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক আনোয়ারুল হকের অভিযোগ, ‘বর্তমান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খুবই নিম্নমানের কাজ করছেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক প্রভাবশালী আওয়াম লীগ নেতার আত্মীয় হওয়ার তিনি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে তার ইচ্ছামতো কাজ করছেন। যার কারণে বাধেঁর কাজ হ্যান্ডওভার করার আগেই ভাঙা শুরু হয়েছে।’

কমলনগর রক্ষা বাঁধের ২০০ মিটার জায়গা ধসে পড়ছে, ছবি-প্রতিনিধি

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুদ্দিন আজম বলেন, দ্রুত সময় মধ্যে জিও ব্যাগ ডাম্পিংসহ যথাযথ উদ্যোগ না নিলে নদী তীর রক্ষা বাধাঁ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এজিএম মাসুদ রানা বলেন, ভালো বালু প্রাপ্তিতে অসুবিধার কারণে সামান্য কিছু অংশে বালুভর্তি জিও ব্যাগ যথাসময়ে ডাম্পিং করা সম্ভব হয়নি। যে কারণে তীব্র জোয়ারে বাঁধের ওই অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মঙ্গলবার (৪ জুলাই) সকাল থেকে ফের জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী গাজী ইয়ার আলী বলেন, ড্রাম্পিং না করে ব্লক স্থাপন করা হয়েছে। এতে প্রায় ১৫০ মিটার বাঁধে ধস নেমেছে। নদীর ভেতরে ব্লক দিয়ে গার্ড লাইন দেওয়া হয়। ব্লকের পরে ৪০ মিটার জিও ব্যাগ ডাম্পিং করার কথা কিন্তু তা না করায় বাঁধ নদীতে নেমে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বিষয়টি দেখছে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কার হবে।

২০১৪ সালে লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলায় মেঘনা নদীর ভাঙন প্রতিরোধে ১৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। এ বরাদ্দ দিয়ে রামগতির আলেকজান্ডার এলাকায় সাড়ে তিন কিলোমিটার, রামগতিরহাট মাছঘাট এলাকায় এক কিলোমিটার এবং কমলনগর মাতাব্বরহাট এলাকায় এক কিলোমিটার নদীর তীর রক্ষায় বাঁধ নির্মাণের কথা। ২০১৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারিতে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ১৯ ইঞ্জিনিয়ারি কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন আলেকজান্ডার এলাকায় ভাঙন রোধে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করে সাড়ে তিন কিলোমিটার সফলভাবে বাস্তবায়ন করে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

নির্মাণ শেষের আগেই কমলনগর বাঁধে ধস, নিম্নমানের কাজের অভিযোগ

আপডেট টাইম : ১১:৩২:৪৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৯ জুলাই ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  লক্ষ্মীপুরের কমলনগর মেঘনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই ধস দেখা দিয়েছে। নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে  ব্লক র্নিমাণ, ব্লক স্থাপন এবং জিও ব্যাগ ড্রাম্পিং না করাসহ নানা কারণে বাঁধে ধস নেমেছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বাঁধের উত্তর অংশে ধসে ভাঙন দেখা দিয়েছে। আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে কমলনগরের মানুষ। একইসঙ্গে ক্ষুব্ধও তারা। শুরু থেকেই বাঁধ নির্মাণে গাফিলতি ছিল। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নির্মাণ কাজে বিলম্ব, দফায় দফায় কাজ বন্ধ রাখা ও নিম্নমানের কাজের অভিযোগ ছিল প্রথম থেকেই। এ নিয়ে স্থানীয়রা বিক্ষোভ ও মানববন্ধনও করেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নির্ধারিত এক কিলোমিটার বাঁধের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এর মধ্যে বাঁধের উত্তর অংশের প্রায় ২০০ মিটার এলাকা ধসে পড়ছে। ভেঙে গেছে বেশ কিছু অংশ। বাঁধ ভেঙে ব্লক নদীতে পড়ে যাচ্ছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রথম দিকে নদীর তীর রক্ষা বাঁধের দক্ষিণ অংশে জিও ব্যাগ দিয়ে ড্রাম্পিং করা হয়েছে। কিন্তু বাঁধের উত্তর অংশের প্রায় ২০০ মিটার এলাকায় জিও ব্যাগ দিয়ে ড্রাম্পিং করা হয়নি। যে কারণে বর্ষা শুরু হওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে বাঁধ ধসে গেছে।

কমলনগর উপজেলা নদী ভাঙগন প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক আনোয়ারুল হকের অভিযোগ, ‘বর্তমান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খুবই নিম্নমানের কাজ করছেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক প্রভাবশালী আওয়াম লীগ নেতার আত্মীয় হওয়ার তিনি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে তার ইচ্ছামতো কাজ করছেন। যার কারণে বাধেঁর কাজ হ্যান্ডওভার করার আগেই ভাঙা শুরু হয়েছে।’

কমলনগর রক্ষা বাঁধের ২০০ মিটার জায়গা ধসে পড়ছে, ছবি-প্রতিনিধি

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুদ্দিন আজম বলেন, দ্রুত সময় মধ্যে জিও ব্যাগ ডাম্পিংসহ যথাযথ উদ্যোগ না নিলে নদী তীর রক্ষা বাধাঁ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এজিএম মাসুদ রানা বলেন, ভালো বালু প্রাপ্তিতে অসুবিধার কারণে সামান্য কিছু অংশে বালুভর্তি জিও ব্যাগ যথাসময়ে ডাম্পিং করা সম্ভব হয়নি। যে কারণে তীব্র জোয়ারে বাঁধের ওই অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মঙ্গলবার (৪ জুলাই) সকাল থেকে ফের জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী গাজী ইয়ার আলী বলেন, ড্রাম্পিং না করে ব্লক স্থাপন করা হয়েছে। এতে প্রায় ১৫০ মিটার বাঁধে ধস নেমেছে। নদীর ভেতরে ব্লক দিয়ে গার্ড লাইন দেওয়া হয়। ব্লকের পরে ৪০ মিটার জিও ব্যাগ ডাম্পিং করার কথা কিন্তু তা না করায় বাঁধ নদীতে নেমে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বিষয়টি দেখছে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কার হবে।

২০১৪ সালে লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলায় মেঘনা নদীর ভাঙন প্রতিরোধে ১৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। এ বরাদ্দ দিয়ে রামগতির আলেকজান্ডার এলাকায় সাড়ে তিন কিলোমিটার, রামগতিরহাট মাছঘাট এলাকায় এক কিলোমিটার এবং কমলনগর মাতাব্বরহাট এলাকায় এক কিলোমিটার নদীর তীর রক্ষায় বাঁধ নির্মাণের কথা। ২০১৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারিতে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ১৯ ইঞ্জিনিয়ারি কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন আলেকজান্ডার এলাকায় ভাঙন রোধে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করে সাড়ে তিন কিলোমিটার সফলভাবে বাস্তবায়ন করে।