হাওর বার্তা ডেস্কঃ ভয়াবহ পাহাড়ধসে ঘরবাড়ি হারানো ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য সরকারের ত্রাণ সহায়তা পর্যাপ্ত নয় বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে রাঙামাটি শহরের বাইরে উপজেলা পর্যায়ে ক্ষতিগ্রস্ত অনেক পরিবার এখন পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ পায়নি। আবার ক্ষতিগ্রস্ত যেসব পরিবার ত্রাণ পেয়েছে, তা তাদের প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়। এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর দিন কাটছে কষ্টে। জেলার কাপ্তাই ও কাউখালী উপজেলার কয়েকটি এলাকায় সরেজমিনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
ইউনিয়ন পর্যায়ের কয়েকজন জনপ্রতিনিধি বলেন, পাহাড়ধসের পর কিছু বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং সামাজিক সংগঠন নিত্যপণ্যসহ বিভিন্ন ধরনের ত্রাণ সহায়তা নিয়ে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু ঈদের পর থেকে তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। যে কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ ত্রাণের জন্য পুরোপুরি সরকারের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু সরকারি ত্রাণ সহায়তা পর্যাপ্ত নয়।
গত ১৩ জুনের পাহাড়ধসে রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার ৫ নম্বর ওয়াগ্গা ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বিমল চন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যা বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ওয়ার্ডে সরকারি তালিকাভুক্ত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা ৭৬। এর মধ্যে ১৬টি পরিবারের বাড়িঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, ১৬টি পরিবার ৪ জুলাই (পাহাড়ধসের ঘটনার তিন সপ্তাহ পরে) সরকারি সহায়তা হিসেবে ৩০ কেজি করে চাল পেয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ৬০টি পরিবার বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সরকারি ত্রাণ সহায়তা পায়নি।
ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডে মোট ২৬টি পরিবার পাহাড়ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১৪টি পরিবার বাড়িঘর হারিয়েছে। ১২টি পরিবার আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদের মধ্যে মোট ১৮টি পরিবার সরকারি সহায়তা হিসেবে ৩০ কেজি করে চাল পেয়েছে বলে জানান ইউপি সদস্য নিরঞ্জন তঞ্চঙ্গ্যা। তিনি বলেন, ৪ জুলাই ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে ত্রাণ সহায়তা হিসেবে চাল দেওয়া হয়েছে।
একই ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য অং চা প্রু মারমা বলেন, তাঁর ওয়ার্ডে এক দম্পতিসহ মোট ছয়জন পাহাড়ধসে মারা গেছেন। সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৪টি পরিবার এবং ৩৮টি পরিবার আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে। পাহাড়ধসের পর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী এ এলাকা পরিদর্শনে এসে নিহত ছয়জনের পরিবারকে ২০ হাজার করে টাকা এবং ৩০ কেজি করে চাল দেন। এরপর রাঙামাটি জেলা পরিষদ থেকেও প্রতি পরিবারকে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। ৪ জুলাই তাদের ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে নিহত দম্পতির ছেলেকে ১৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।
ওয়ার্ড তিনটির ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের মধ্যে যাঁদের বাড়িঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে, তাঁরা আত্মীয়স্বজনের বাড়িসহ যে যেখানে পারেন আশ্রয় নিয়েছেন। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের কয়েকজন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের খাদ্য ও বাসস্থানের সমস্যা প্রকট। এলাকায় কোনো আশ্রয়কেন্দ্র নেই। নিজেদের ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর মেরামত না করে থাকতে সমস্যা হচ্ছে। বৃষ্টি হলেই অন্যের বাড়িতে বা স্কুলে কিংবা প্যাগোডায় আশ্রয় নিতে হয় তাঁদের। এ অবস্থার মধ্যে খাদ্যের সংস্থান করাও কঠিন হয়ে পড়েছে।
এদিকে রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নে পাহাড়ধসে ১৬৭টি পরিবারের বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা প্রায় ৩০০। এ ছাড়া অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ধসে খেতের ফসল, বনের গাছ, বাগানের ফলমূল হারিয়েছে অনেক পরিবার। সব মিলে এখন পর্যন্ত মোট ৮৭৫টি পরিবারকে সরকারি ত্রাণ সহায়তা হিসেবে ২০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে বলে জানান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জগদীশ চাকমা।
রাঙামাটি সদর উপজেলার বালুখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিজয়গিরি চাকমা জানান, তাঁর ইউনিয়নের ৪৮টি পরিবার সম্পূর্ণ এবং ৭১টি পরিবার আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে। এ ছাড়া কয়েক দিনের টানা অতিবৃষ্টিতে আরও কিছু পরিবারের ক্ষতি হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১৫০টি পরিবারকে ২০ কেজি করে চাল সরকারি ত্রাণ সহায়তা হিসেবে দিয়েছেন তাঁরা।
এদিকে জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার কেংড়াছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অমরজিৎ চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ইউনিয়নে ২১টি পরিবার সম্পূর্ণ এবং ৩৫টি পরিবার আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে। আরও অনেক পরিবার অতিবৃষ্টি ও পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব মিলে ২৭৪টি পরিবারকে ২০ কেজি করে চাল ত্রাণ সহায়তা হিসেবে দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের এ অভিযোগের বিষয়ে রাঙামাটির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোয়াজ্জম হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসনের চাহিদার ভিত্তিতে ত্রাণসামগ্রী বরাদ্দ করা হয়। জেলা প্রশাসনের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণ রয়েছে। উপজেলা প্রশাসন থেকে বাড়তি চাহিদাপত্র দিলে সে অনুযায়ী বরাদ্দ করা যাবে।