হাওর বার্তা ডেস্কঃ ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় হিরামণি ওরফে তিশা (১৫) নামের দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, শিক্ষকের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের অপবাদ সহ্য করতে না পেরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে ওই শিক্ষার্থী।
বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে উপজেলা সদরের কাপুড়িয়া সদরদী মহল্লার ভাড়া বাসা থেকে এই ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আজ শুক্রবার আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে।
হিরামণি ভাঙ্গার আলগী ইউনিয়নের শাহমুল কদী গ্রামের মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া ও হাওয়া বিবির মেয়ে। তার বাবা ঢাকায় ব্যবসা করেন। দুই বোনের মধ্যে বড় হিরামণি ভাঙ্গা মডেল পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তারা কাপুড়িয়া সদরদী মহল্লায় ভাড়া থাকত।
হিরামণির পরিবার ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হিরামণিকে বাসায় গিয়ে পড়াতেন প্রতিবেশী ও একই বিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানের শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ (৩১)। আজাদ উপজেলার ঘারুয়া ইউনিয়নের চৌকিঘাটা গ্রামের মজিবর মুন্সির ছেলে। তিনি ওই মহল্লায় স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন। শিক্ষকের সঙ্গে হিরামণির অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে বলে আজাদের স্ত্রী মাহামুদা বেগম (২৫) সন্দেহ করতেন। এ নিয়ে পারিবারিক কলহের জেরে বাবার বাড়ি চলে গিয়েছিলেন মাহামুদা। পরে সালিস-বৈঠকে শর্ত দিয়ে আজাদ তাঁর স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনেন। মাহামুদার শর্ত ছিল, ওই ছাত্রীকে বাসায় গিয়ে আর পড়ানো যাবে না।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, স্ত্রীর শর্ত ভেঙে গতকাল রাত নয়টার দিকে আজাদ হিরামণির বাসায় যান। এ খবর পেয়ে স্ত্রী মাহামুদা ওই বাসায় গিয়ে আজাদ ও হিরামণিকে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করেন। একপর্যায়ে তিনি জোর করে আজাদকে বাসায় নিয়ে যান। এ ঘটনার এক ঘণ্টা পর হিরামণিকে তার ঘরের আড়ায় বিছানার চাদর পেঁচিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। তাকে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ভাঙ্গা মডেল পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হায়দার হোসেন বলেন, ‘হিরামণি মেধাবী ছাত্রী ছিল। ওই শিক্ষার্থী ও আজাদের সম্পর্ক নিয়ে এলাকায় আগে থেকেই একটি গুঞ্জন ছিল। ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। মেয়েটির এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর জন্য আমাদের স্কুলের শিক্ষক জড়িত থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আবদুল্লাহ পূর্বপশ্চিমকে বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য লাশ ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচনার দেওয়ার অভিযোগে ওই ছাত্রীর মা বাদী হয়ে শিক্ষক আবুল কালাম ও তাঁর স্ত্রী মাহামুদা বেগমকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন।
ওসি বলেন, আজাদ ও তাঁর স্ত্রীকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। তাঁর বাসাটি তালাবদ্ধ।