হাওর বার্তা ডেস্ক ঃনতুন শিশু পরিবারে বয়ে আনে আনন্দ, কিন্তু সেটা সব সময় নয়। কখনও কখনও উদ্বেগ, হতাশা আর দুঃখের কারণও হয় শিশুর জন্ম। যেমনটি হয়েছে পাবনার চাটমোহরের একটি পরিবারে। জমজ শিশুর জন্মের আনন্দ মুছে স্বজনদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আর ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তা ছেয়ে গেছে শিশু দুটির মাথা জোড়া লাগানো দেখে।
উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের আটলংকা গ্রামের স্কুল শিক্ষক রফিকুল ইসলাম-তাসলিমা দম্পতির পরিবারে এই ঘটনা ঘটেছে। গত বছর তাসলিমার প্রসববেদনা নিয়ে পাবনা শহরের একটি ক্লিনিকে ভর্তি হলে সেখানে সিজারিয়ানের মাধ্যমে জমজ মেয়ে শিশুর জন্ম হয়। জন্মের পরই প্রথম বোঝা যায় মেয়ে দুটির মাথা একসঙ্গে লাগানো।
পরিবার থেকে মেয়ে শিশু দুটির নাম রাখা হয়েছে রাবেয়া ও রোকাইয়া। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই ধরনের শিশুদের অপারেশনের মাধ্যমে আলাদা করা হয়। এই শিক্ষক দম্পতিও আশা করছেন সন্তান দুটিকে তারা আলাদা করে স্বাধীনভাবে বাঁচার সুযোগ করে দেবেন। কোথায় অপারেশন করালে মেয়ে দুটিকে আলাদা করাতে পারবেন- এ নিয়ে প্রশ্নের শেষ নেই বাবা মায়ের।
সম্প্রতি ঐ পরিবারের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বিছানার উপর শুয়ে মনের আনন্দে খেলা করছে রাবেয়া ও রোকাইয়া। দারুণ উৎফুল্ল ও চঞ্চল শিশু দুটির মা তাদের জন্য খাবার তৈরি করছেন। এ মাসের ১৬ তারিখে তাদের বয়স হবে এক বছর। অনেক কিছুই তারা বুঝতে ও দেখতে শিখেছে। বাবা মাকে দেখেই কোলে উঠতে ব্যাকুল হচ্ছে তারা।
মেয়ে দুটিকে আলাদা করতে চিকিৎসার জন্য ঢাকা বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক রুহুল আমিনের শরণাপন্ন হয়েছিল পরিবারটি। তিনি জানিয়েছেন বয়স কম হওয়ায় অপারেশনের মাধ্যমে শিশু দুটিকে আলাদা করার প্রক্রিয়া অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
শিশু দুটির বাবা রফিকুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বাচ্চা দুটিকে নিয়ে ভীষণ দুশ্চিন্তায় আছি। কোথায় কীভাবে এদের চিকিৎসা করাব তার সঠিক কোন দিক নির্দেশনা আমরা পাচ্ছি না। দেশে অথবা বিদেশে চিকিৎসার জন্য কেউ যদি আমাদের তথ্য দিয়ে কিংবা সাধ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করতেন আমরা অনেক উপকৃত হতাম। বাচ্চা দুটি কবে নাগাদ আলাদা হবে সেই দিনটির অপেক্ষাতেই আমরা আছি।’
শিশু দুটির মা তাসলিমা খাতুন বলেন, ‘স্কুলে শিক্ষকতা করে বাচ্চা দুটিকে খাওয়ানো, গোছল করানো, ঘুম পাড়ানোর কাজ করা বেশ কষ্টসাধ্য বেপার। বাচ্চা দুটিকে সুচিকিৎসার মাধ্যমে অপারেশন করে আলাদা করতে সরকার এবং বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করছি।’
শিশু দুটির প্রতিবেশী মামুনুর রহমান বলেন, ‘প্রথমে আমরা গ্রামের মানুষ যখন জানতে পারলাম রফিকুল ভাইয়ের স্ত্রীর জমজ বাচ্চা সন্তান হয়েছে তখন আমরা ভীষণ খুশি হয়েছিলাম। হাসপাতাল থেকে বাড়িতে আসার পরে দেখলাম বাচ্চা দুটির মাথা জোড়া লাগানো, তখন মনটা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল। আমরা চাই বাচ্চা দুটি দ্রুত সময়ের মধ্যে অপারেশনের মাধ্যমে আলাদা হয়ে বাবা মায়ের আদরের সন্তান হয়ে বেঁচে থাকুক।’
চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার স ম বায়েজেদুল ইসলাম বলেন, ‘জন্মগত ত্রুটির কারণে জোড়া মাথার যমজ শিশুর জন্ম হয়। ভালভাবে পরীক্ষা নীরিক্ষার পর বোঝা যাবে তাদের মাথা আলাদা করা যাবে কি না।’ তবে অপারেশনের মাধ্যমে শিশু দুটিকে আলাদা করা ব্যয়বহুল ও ঝুঁকিপূর্ণ বলেও জানিয়ে দেন তিনি।