হাওর বার্তা ডেস্কঃ তামাক নয়, বর্তমানে ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন লালমনিরহাটের কৃষকেরা। কয়েক বছর আগেও এ অঞ্চলের যেসব জমিতে তামাক চাষ হতো, সেখানে এখন লাভজনক ফসল হিসেবে ভুট্টার চাষ হচ্ছে। মিলছে কাঙ্ক্ষিত ফলনও। এতে ভুট্টা চাষের পরিধি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভাগ্য ফিরেছে এ জেলার শত শত কৃষকের।
সংশ্লিষ্টরা জানান, জেলার পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা ও লালমনিরহাট সদর উপজেলায় এবার ভুট্টার ব্যাপক আবাদ হয়েছে। যদিও বিভিন্ন কোম্পানির প্রলোভনে এখনো আদিতমারী ও কালীগঞ্জ উপজেলায় তামাক চাষের প্রভাব কিছুটা রয়ে গেছে। তবে সরকারিভাবে মনিটরিং ও প্রয়োজনীয় প্রণোদনা দেয়া হলে এ দুই উপজেলাও তামাকের পরিবর্তে ভুট্টা বা অন্য ফসল চাষ বৃদ্ধি করা সম্ভব।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে জেলার পাঁচ উপজেলায় ২৪ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। যার মধ্যে ২২ হাজার ৯১০ হেক্টর জমির আবাদ থেকে ২ লাখ ৩ হাজার ৮৯৯ টন ভুট্টা উৎপাদন হয়। প্রতি হেক্টরে গড়ে ৮ দশমিক ৯০ টন ফলন পাওয়া যায়। আর প্রতি মণ ভুট্টা ৫০০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হলে কৃষকরাও বেশ লাভবান হন।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২৯ হাজার ৮৭৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আবাদ হয় ২৪ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে। এ থেকে ভুট্টা উৎপাদন হয় ২ লাখ ১৮ হাজার ২২৮ টন। প্রতি হেক্টরে গড়ে ৮ দশমিক ৮৮ টন করে ফলন পান কৃষক। বর্তমান বাজারে এসব ভুট্টা প্রতি মণ ৭০০-৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে কৃষকদের লাভ হচ্ছে উৎপাদন খরচের প্রায় দ্বিগুণ।
তাছাড়া তিস্তা বিধৌত হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় জেগে ওঠা চরেও ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। এসব চরের পতিত প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টা উৎপাদন হচ্ছে।
লালমনিরহাটের একসময়ের তামাকচাষী মজিবর রহমান জানান, তামাক চাষ ছেড়ে তিনি বর্তমানে ভুট্টা ছাড়াও সরিষা, গম ও বোরো ধান চাষ করেছেন। বিশেষ করে ভুট্টা চাষে তিনি তামাকের থেকে দ্বিগুণেরও বেশি লাভ করছেন। শুধু মজিবর রহমানই নন, এ অঞ্চলে তার মতো শত শত তামাকচাষী এখন ভুট্টা চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। তুলনামূলকভাবে কম পরিশ্রমে ভুট্টায় তামাকের থেকে বেশি লাভই তাদের এ আগ্রহের মূল কারণ।
মজিবর রহমান বলেন, কয়েক বছর আগে এনসিসি ব্যাংক থেকে ৪ শতাংশ সুদে ৭০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ভুট্টা চাষ শুরু করি। ওই টাকা পরিশোধ করে আবারো ঋণ নিয়ে প্রায় ১২ একর জমিতে ভুট্টা চাষ করছি। তামাকের তুলনায় ভুট্টায় খরচ কম, লাভও বেশি। তাছাড়া তামাক চাষ ক্ষতিকর হওয়ার ভুট্টা চাষই শ্রেয়।
একই কথা জানান সদর উপজেলার বিমানবন্দর এলাকার ভুট্টাচাষী ইয়াকুব আলী, মনছুর মিয়া ও আতাউর রহমানসহ বেশ কয়েকজন। তাদের দাবি, সরকারিভাবে কম সুদে ব্যাংক থেকে ঋণ প্রদান করা হলে এ অঞ্চলে তামাক চাষ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে।
আদিতমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বিপ্লব বলেন, এ উপজেলায় একসময় ব্যাপক তামাক চাষ করা হতো। বর্তমানে তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করতে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি তাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
লালমনিরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক (ডিডি) বিধু ভূষণ রায় বলেন, তামাক চাষ নিরুৎসাহিত করার জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। এ বিষয়ে আমরা পুরোপুরি সফল, তা এখনো বলা যাবে না। কারণ লালমনিরহাট সদর, হাতীবান্ধা ও পাটগ্রামে আশাব্যঞ্জকভাবে ভুট্টা চাষ বৃদ্ধি করা সম্ভব হলেও কালীগঞ্জের একটি অংশ ও আদিতমারীতে এখনো তামাক চাষ পুরোপুরি থামানো যায়নি। তবে আগের তুলনায় তা অনেকাংশেই কমেছে। সামনের বছরগুলোয় আশা করি তামাক চাষ আরো কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।