ঢাকা ০৭:০৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দ্রব্যমূল্য যেন পাগলা ঘোড়া

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:১০:০৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ মে ২০১৭
  • ২৩৪ বার

লাগামহীন দ্রব্যমূল্য। কোনো ভাবেই টেনে ধরা যাচ্ছে না। খাদ্য পণ্যের দাম বেড়েছে তা স্বীকার করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। তাদের তালিকায় চাল, মাছ, মাংস, শাক-সবজি, ভোজ্যতেল ও দুধের দাম বেড়েছে। তবে বাস্তবে এর তালিকা আরো বেশি।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বিশেষ করে রমজাননির্ভর পণ্যের দাম গত কয়েক সপ্তাহে দফায় দফায় বেড়েছে। এর মধ্যে প্রতিকেজি চিনি, ডাল ও ছোলার দাম বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। সব ধরনের চালে কেজিপ্রতি বেড়েছে ৮ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত। পেঁয়াজ, রসুন ও আদার দামও ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। পণ্যমূল্যের লাগামহীন বৃদ্ধিতে নাভিশ্বাস উঠেছে ভোক্তাদের। এ ছাড়া রমজান আসতে আরও এক সপ্তাহ বাকি। এভাবে ক্রমাগত দাম বাড়তে থাকলে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম রমজান আসার আগেই ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। এ ছাড়া বাজার ব্যবস্থাপনায় নিয়মিত মনিটরিং না থাকায় সুযোগ নিচ্ছে মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা। ভোক্তারা বলছেন, অসাধু এ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি সবাই।
ভোজ্য তেল: চাহিদার অতিরিক্ত আমদানি ও মজুদের পরও হঠাৎ করে ভোজ্য তেলের দাম মণে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা বেড়ে গেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশে ভোজ্য তেলের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ১৪ লাখ টন। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসেই আমদানি হয়েছে প্রায় ১৫ লাখ টন। বাজারে প্রতি মণ সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৫৪০ টাকা দরে। এর পর পণ্যটির দাম উঠে যায় ২ হাজার ৫৮০ টাকায়। সর্বশেষ এর দাম গিয়ে ঠেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত। দেশে ভোজ্য তেলের বড় আমদানিকারকের তালিকায় রয়েছে সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, টিকে গ্রুপ, এস আলম ও এসএ গ্রুপ। তাদের দাবি, বাজারে কোনো সংকট তৈরি হবে না। টিসিবির তথ্য মতে, প্রতি লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১০৬ টাকায়। গত বছরের একই সময়ে তা ছিল সর্বোচ্চ ৯৫ টাকা। অর্থাৎ এক বছরে দুই দফায় ১১.৩৫ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়েছে। আর পাঁচ লিটারের ক্যানে এক বছরে দাম বেড়েছে ১৪.১২ শতাংশ।
ছোলা: আন্তর্জাতিক বাজারে ভালো মানের ছোলা প্রতি টন বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ ডলারে। এই দর দীর্ঘদিন ধরে খুব একটা ওঠানামা করেনি। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বর্তমান সময়ে ছোলা বিক্রি হচ্ছে অনেকটা বেশি দামে। টিসিবির তথ্যমতে, কেজিতে এই বৃদ্ধির পরিমাণ ৮ শতাংশ। ট্যারিফ কমিশনের তথ্যানুযায়ী, রমজান মাসে সারা দেশে প্রায় ৮০ হাজার টন ছোলার চাহিদা রয়েছে। আর সারা বছর এই চাহিদার পরিমাণটা প্রায় দেড় লাখ টন। বাজারে ছোলার দাম ছিল মানভেদে ৭৪ থেকে ৮৪ টাকা, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৫ থেকে ১১০ টাকায়। ইফতারির অন্যতম খাবার ছোলার দাম বাড়ার জন্য খুচরা বিক্রেতারা দুষছেন পাইকারদের। পাইকারি বিক্রেতারা দুষছেন আন্তর্জাতিক বাজারকে। কাওরান বাজারের বিক্রেতা লিটন বলেন, কিছুদিন আগে তারা ৫০ কেজি ছোলার প্রতি বস্তা কিনতেন ৩ হাজার ৭৫০ টাকায়। খুচরা বাজারে বিক্রি করতেন ৭৮ থেকে ৮০ টাকা। কিন্তু সেই বস্তা এখন কিনতে হচ্ছে ৩ হাজার ৯০০ টাকায়। জানা গেছে, ছোলা আমদানি হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার টন। রমজানে এই পণ্যের চাহিদা ১ লাখ টনের মতো।
হাতিরপুলের বাসিন্দা সোহেল অভিযোগ করেন, রোজা আসার আগেই ছোলার দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা। তিনি বলেন, অন্য দেশে দেখেছি উৎসবে পণ্যের দাম কমে আর আমাদের দেশে এর উল্টো। উৎসব এলেই এখানে নির্লজ্জভাবে দাম বাড়িয়ে দেন বিক্রেতারা। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
চাল: চলতি বছরের শুরু থেকেই চালের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ার বিষয়টি বেশ আলোচনায় ছিল। দাম বেড়েছে কয়েক দফায়। এখনো তা বেড়েই চলেছে। টিসিবির তথ্য মতে, মানভেদে এই চাল বিক্রি হচ্ছে ৪২ থেকে ৪৫ টাকা কেজি, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৩২ থেকে ৩৪ টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে মোটা চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ১১ টাকা বা ৩১.৮২ শতাংশ। অন্য চালের দামও গত বছরের এই সময়ের তুলনায় অনেকটা বেড়ে গেছে বলে টিসিবির তথ্যে দেখা গেছে।
ডাল, খেজুর, চিনি ও রসুন: গত কয়েক সপ্তাহের বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, মানভেদে মসুর ডালের কেজিপ্রতি দাম ছিল ৭৫ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে। রমজান সামনে রেখে এখন তার দাম বেড়ে ১০৫ টাকা থেকে ১৪০ টাকার কাছাকাছি। এ ছাড়া ৬২ থেকে ৬৫ টাকার চিনি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। ১০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকার খেজুর চলতি মাসে ১৬০ টাকা থেকে ৩২০ টাকা ছাড়িয়েছে। ২০-২৫ টাকার পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৩-৩৮ টাকার মধ্যে। রসুন আগে ছিল (দেশি) ৮০-১০০ টাকা এবং (বিদেশি) ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে (দেশি) ১৩০-১৫০ টাকা এবং (বিদেশি) ২২০-২৪০ টাকা।
মাংস: গরুর মাংস গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৮.২৯ শতাংশ এবং খাসির মাংস ২২.৭৩ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। দেশের বাজারে মাংসের দাম কমার কোনো রেকর্ড নেই, প্রতিবছর এক-দুবার করে বাড়তে বাড়তে এখন গরুর মাংস ৫৫০-৬০০ ও খাসির মাংস ৭৫০-৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ব্রয়লার মুরগির দাম কেজি প্রতি ৫-১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকা কেজি। একইসঙ্গে রাজধানীর বাজারে ডিমের দামও কিছুটা বেড়েছে।
কাঁচাবাজার: রাজধানীর কাওরানবাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম প্রতি কেজিতে ৫-১০ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। শসা, জিঙ্গা, ঢেঁড়স, টমোটো, বেগুন, করলা, দুন্ধল, চিচিঙ্গার কেজি প্রতি বেড়েছে ৫ টাকা। শসা ৪০ টাকা, জিঙ্গা ৬০ টাকা, টমেটো ৪০, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, বেগুন ৫০-৫৫ টাকা, কাঁকরোল ৬০ টাকা, বরবটি ৫০ টাকা, কচুর লতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ১০০ টাকা, আলু ১৫ থেকে ২০ টাকা, পটোল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, পেঁপে ২০ থেকে ৩০ টাকা, গাজর ৪০ থেকে ৪৫ টাকা; কাঁচামরিচ ৮০ থেকে ৮৫ টাকা; মিষ্টিকুমড়া প্রতিটি ২০ টাকা; লাউ ৪০-৬০ টাকা, জালি কুমড়া ২৫ টাকা; লেবু হালিতে ৫ টাকা বেড়ে ২০ টাকা, কাঁচকলা ২০-৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। রমজান মাস শুরুর আগে লেবু, বেগুন, শসা, গাজরের দাম আরেক দফা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
তবে বাজারের এসব পণ্যের দাম টিসিবির নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যতালিকার সঙ্গে আকাশ-পাতাল ব্যবধান।
কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ব্যবসায়ীরা কৌশল পাল্টাচ্ছে। বেছে নিয়েছে নতুন ফর্মুলা। তারা দাম বাড়াচ্ছে ঠিকই, শুধু সময়টাকে আগে নিয়ে আসা হয়েছে। তিনি বলেন, আগেভাগেই সব পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এতে করে সুবিধা হবে রমজানে হয়তো দাম বাড়বে না, কিন্তু চলমান বাজার দর কমবে না। তিনি বলেন, সরকার এখানে কতটা মনিটরিং করেছে সেটি দেখার বিষয়।
সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। কেননা সব ধরনের প্রয়োজনীয় পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। পণ্যের দাম নিয়ে কোনো ধরনের কারসাজি করলে, কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

দ্রব্যমূল্য যেন পাগলা ঘোড়া

আপডেট টাইম : ১২:১০:০৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ মে ২০১৭

লাগামহীন দ্রব্যমূল্য। কোনো ভাবেই টেনে ধরা যাচ্ছে না। খাদ্য পণ্যের দাম বেড়েছে তা স্বীকার করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। তাদের তালিকায় চাল, মাছ, মাংস, শাক-সবজি, ভোজ্যতেল ও দুধের দাম বেড়েছে। তবে বাস্তবে এর তালিকা আরো বেশি।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বিশেষ করে রমজাননির্ভর পণ্যের দাম গত কয়েক সপ্তাহে দফায় দফায় বেড়েছে। এর মধ্যে প্রতিকেজি চিনি, ডাল ও ছোলার দাম বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। সব ধরনের চালে কেজিপ্রতি বেড়েছে ৮ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত। পেঁয়াজ, রসুন ও আদার দামও ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। পণ্যমূল্যের লাগামহীন বৃদ্ধিতে নাভিশ্বাস উঠেছে ভোক্তাদের। এ ছাড়া রমজান আসতে আরও এক সপ্তাহ বাকি। এভাবে ক্রমাগত দাম বাড়তে থাকলে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম রমজান আসার আগেই ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। এ ছাড়া বাজার ব্যবস্থাপনায় নিয়মিত মনিটরিং না থাকায় সুযোগ নিচ্ছে মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা। ভোক্তারা বলছেন, অসাধু এ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি সবাই।
ভোজ্য তেল: চাহিদার অতিরিক্ত আমদানি ও মজুদের পরও হঠাৎ করে ভোজ্য তেলের দাম মণে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা বেড়ে গেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশে ভোজ্য তেলের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ১৪ লাখ টন। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসেই আমদানি হয়েছে প্রায় ১৫ লাখ টন। বাজারে প্রতি মণ সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৫৪০ টাকা দরে। এর পর পণ্যটির দাম উঠে যায় ২ হাজার ৫৮০ টাকায়। সর্বশেষ এর দাম গিয়ে ঠেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত। দেশে ভোজ্য তেলের বড় আমদানিকারকের তালিকায় রয়েছে সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, টিকে গ্রুপ, এস আলম ও এসএ গ্রুপ। তাদের দাবি, বাজারে কোনো সংকট তৈরি হবে না। টিসিবির তথ্য মতে, প্রতি লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১০৬ টাকায়। গত বছরের একই সময়ে তা ছিল সর্বোচ্চ ৯৫ টাকা। অর্থাৎ এক বছরে দুই দফায় ১১.৩৫ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়েছে। আর পাঁচ লিটারের ক্যানে এক বছরে দাম বেড়েছে ১৪.১২ শতাংশ।
ছোলা: আন্তর্জাতিক বাজারে ভালো মানের ছোলা প্রতি টন বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ ডলারে। এই দর দীর্ঘদিন ধরে খুব একটা ওঠানামা করেনি। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বর্তমান সময়ে ছোলা বিক্রি হচ্ছে অনেকটা বেশি দামে। টিসিবির তথ্যমতে, কেজিতে এই বৃদ্ধির পরিমাণ ৮ শতাংশ। ট্যারিফ কমিশনের তথ্যানুযায়ী, রমজান মাসে সারা দেশে প্রায় ৮০ হাজার টন ছোলার চাহিদা রয়েছে। আর সারা বছর এই চাহিদার পরিমাণটা প্রায় দেড় লাখ টন। বাজারে ছোলার দাম ছিল মানভেদে ৭৪ থেকে ৮৪ টাকা, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৫ থেকে ১১০ টাকায়। ইফতারির অন্যতম খাবার ছোলার দাম বাড়ার জন্য খুচরা বিক্রেতারা দুষছেন পাইকারদের। পাইকারি বিক্রেতারা দুষছেন আন্তর্জাতিক বাজারকে। কাওরান বাজারের বিক্রেতা লিটন বলেন, কিছুদিন আগে তারা ৫০ কেজি ছোলার প্রতি বস্তা কিনতেন ৩ হাজার ৭৫০ টাকায়। খুচরা বাজারে বিক্রি করতেন ৭৮ থেকে ৮০ টাকা। কিন্তু সেই বস্তা এখন কিনতে হচ্ছে ৩ হাজার ৯০০ টাকায়। জানা গেছে, ছোলা আমদানি হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার টন। রমজানে এই পণ্যের চাহিদা ১ লাখ টনের মতো।
হাতিরপুলের বাসিন্দা সোহেল অভিযোগ করেন, রোজা আসার আগেই ছোলার দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা। তিনি বলেন, অন্য দেশে দেখেছি উৎসবে পণ্যের দাম কমে আর আমাদের দেশে এর উল্টো। উৎসব এলেই এখানে নির্লজ্জভাবে দাম বাড়িয়ে দেন বিক্রেতারা। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
চাল: চলতি বছরের শুরু থেকেই চালের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ার বিষয়টি বেশ আলোচনায় ছিল। দাম বেড়েছে কয়েক দফায়। এখনো তা বেড়েই চলেছে। টিসিবির তথ্য মতে, মানভেদে এই চাল বিক্রি হচ্ছে ৪২ থেকে ৪৫ টাকা কেজি, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৩২ থেকে ৩৪ টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে মোটা চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ১১ টাকা বা ৩১.৮২ শতাংশ। অন্য চালের দামও গত বছরের এই সময়ের তুলনায় অনেকটা বেড়ে গেছে বলে টিসিবির তথ্যে দেখা গেছে।
ডাল, খেজুর, চিনি ও রসুন: গত কয়েক সপ্তাহের বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, মানভেদে মসুর ডালের কেজিপ্রতি দাম ছিল ৭৫ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে। রমজান সামনে রেখে এখন তার দাম বেড়ে ১০৫ টাকা থেকে ১৪০ টাকার কাছাকাছি। এ ছাড়া ৬২ থেকে ৬৫ টাকার চিনি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। ১০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকার খেজুর চলতি মাসে ১৬০ টাকা থেকে ৩২০ টাকা ছাড়িয়েছে। ২০-২৫ টাকার পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৩-৩৮ টাকার মধ্যে। রসুন আগে ছিল (দেশি) ৮০-১০০ টাকা এবং (বিদেশি) ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে (দেশি) ১৩০-১৫০ টাকা এবং (বিদেশি) ২২০-২৪০ টাকা।
মাংস: গরুর মাংস গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৮.২৯ শতাংশ এবং খাসির মাংস ২২.৭৩ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। দেশের বাজারে মাংসের দাম কমার কোনো রেকর্ড নেই, প্রতিবছর এক-দুবার করে বাড়তে বাড়তে এখন গরুর মাংস ৫৫০-৬০০ ও খাসির মাংস ৭৫০-৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ব্রয়লার মুরগির দাম কেজি প্রতি ৫-১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকা কেজি। একইসঙ্গে রাজধানীর বাজারে ডিমের দামও কিছুটা বেড়েছে।
কাঁচাবাজার: রাজধানীর কাওরানবাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম প্রতি কেজিতে ৫-১০ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। শসা, জিঙ্গা, ঢেঁড়স, টমোটো, বেগুন, করলা, দুন্ধল, চিচিঙ্গার কেজি প্রতি বেড়েছে ৫ টাকা। শসা ৪০ টাকা, জিঙ্গা ৬০ টাকা, টমেটো ৪০, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, বেগুন ৫০-৫৫ টাকা, কাঁকরোল ৬০ টাকা, বরবটি ৫০ টাকা, কচুর লতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ১০০ টাকা, আলু ১৫ থেকে ২০ টাকা, পটোল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, পেঁপে ২০ থেকে ৩০ টাকা, গাজর ৪০ থেকে ৪৫ টাকা; কাঁচামরিচ ৮০ থেকে ৮৫ টাকা; মিষ্টিকুমড়া প্রতিটি ২০ টাকা; লাউ ৪০-৬০ টাকা, জালি কুমড়া ২৫ টাকা; লেবু হালিতে ৫ টাকা বেড়ে ২০ টাকা, কাঁচকলা ২০-৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। রমজান মাস শুরুর আগে লেবু, বেগুন, শসা, গাজরের দাম আরেক দফা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
তবে বাজারের এসব পণ্যের দাম টিসিবির নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যতালিকার সঙ্গে আকাশ-পাতাল ব্যবধান।
কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ব্যবসায়ীরা কৌশল পাল্টাচ্ছে। বেছে নিয়েছে নতুন ফর্মুলা। তারা দাম বাড়াচ্ছে ঠিকই, শুধু সময়টাকে আগে নিয়ে আসা হয়েছে। তিনি বলেন, আগেভাগেই সব পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এতে করে সুবিধা হবে রমজানে হয়তো দাম বাড়বে না, কিন্তু চলমান বাজার দর কমবে না। তিনি বলেন, সরকার এখানে কতটা মনিটরিং করেছে সেটি দেখার বিষয়।
সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। কেননা সব ধরনের প্রয়োজনীয় পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। পণ্যের দাম নিয়ে কোনো ধরনের কারসাজি করলে, কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।