বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হাওরের কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে সার-বীজ দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ফসল না ওঠা পর্যন্ত কৃষকদের মাঝে খাদ্য সরবরাহের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।
রবিবার সকাল সাড়ে ১১টায় শাল্লা উপজেলায় এক সুধী সমাবেশে এই ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত হাওরাঞ্চলে ইউনিয়ন পর্যায়ে ওএমএস কার্যক্রম চলবে। ১০ টাকা দরে চাল বিক্রি করা হবে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত প্রতি পরিবারকে মাসে ৫০০ টাকা করে দেয়া হবে।’
এর আগে সকাল ১০টার পর একটি হেলিকপ্টারে করে শাল্লায় পৌঁছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। শাল্লায় পৌঁছার পর শেখ হাসিনা ক্ষতিগ্রস্ত হাওর এলাকা পরিদর্শন ও দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্যোগ আসতেই পারে। দুর্যোগের সঙ্গে যুদ্ধ করেই আমাদের বাঁচতে হবে। যেকোনো ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলায় সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে। সেজন্য আমাদের যা যা করা দরকার আমরা করে যাব।
‘খাবার নিয়ে চিন্তা করবেন না। আমাদের খাদ্য মজুদ আছে। মজুদ কম হলে আমরা আরো খাবার আমদানি করব। কিন্তু কেউ না খেয়ে কষ্ট পাবে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্গতদের নগদ সহায়তার পাশাপাশি আগামী মৌসুমের জন্য বিনামূল্যে সার ও বীজ দেওয়া হবে। ভবিষ্যতে এই এলাকায় আবাসিক স্কুল নির্মাণ করা হবে। জেলে ও কৃষকদের মাঝে চাল বিতরণের জন্য ভিজিএফ কার্ডের পরিমাণ আরো বাড়ানো হবে। কৃষিঋণ আদায় স্থগিত করা হয়েছে, এসব ঋণের সুদের হার অর্ধেকে কমিয়ে আনা হবে।
পাশাপাশি এনজিওগুলো যেন তাদের ঋণের কিস্তি আদায়ে কোনো চাপ তৈরি না করে সেই নির্দেশনাও দেন প্রধানমন্ত্রী। হাওরাঞ্চলে বাঁধ নির্মাণে গাফিলতি প্রমাণ হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
হাওরে মন্দার সুযোগ নিয়ে জিনিসপত্রের দাম বাড়ালে তা বরদাশত করবে না সরকার, কোনো ধরনের অন্যায়-দুর্নীতি ও অপচয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
হাওরবাসীর উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আপনাদের জীবন জীবিকার জন্য শুধুমাত্র একটি ফসলের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে ফসলকে বহুমুখী করতে হবে, উৎপাদন বাড়াতে হবে। আপনাদের জীবনযাত্রাকে আরও উন্নত করতে হবে। তিনি বলেন, এ অঞ্চলের যদি কেউ গৃহহারা থাকে তাদেরকে বিনে পয়সায় আমরা ঘর তৈরি করে দেব।
জেলা জিপি, বিভাগীয় কমিশনারকে নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এই জেলায় যেন একজন মানুষও গৃহহারা না থাকে। প্রত্যেকটা মানুষকে আমরা বিনে পয়সায় ঘর করে দেব। কোনো মানুষ ভিক্ষা করে জীবন যাপন করবে না। যারা ভিক্ষাবৃত্তির সঙ্গে জড়িত তাদের ফিরিয়ে এনে কাজের ব্যবস্থা করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক এলাকায় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা নিজেদের একদিনের বেতন দিয়ে ভিক্ষুকমুক্ত করেছেন। আমরা চাই কোনো জেলায় ভিক্ষুক থাকবে না। এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা থাকবে। কেউ হাত পেতে চলবে না। সবাই যেন সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে পারে আমরা সেই ব্যবস্থাটাই হাতে নেব।
ইতোমধ্যে আমরা ৬টি জেলা ৬২ উপজেলা ও ৫১৮টি ইউনিয়নে আট লাখ ৫০ হাজার ৮৮টি পরিবার যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের জন্য ব্যবস্থা নিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু ফসলের ওপর নির্ভরশীল না থেকে মাছের উৎপাদন বাড়াতে হবে। মাছ উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গে মাছের সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাত ও বাজারজাতের ব্যবস্থা যেন নেওয়া হয়, সে ব্যবস্থা করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের হাওর বাঁচিয়ে রাখতে হবে। কারণ হাওরে যে পানি জমা হয়, এই পানিই সারা বছর নদীতে যায়। এই পানি এই এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে সম্পৃক্ত।’
হাওর অঞ্চলের উন্নয়নে সরকারের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘হাওর এলাকার নদীগুলো যেন ভরাট না হয়ে যায়, সেজন্য নদীগুলো ড্রেজিং করা হবে। হাওর এলাকায় খাল কাটা হবে এবং এসব খাল যেন বেশি পানি ধারণ করতে পারে, সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হাওর উন্নয়ন বোর্ড সরকারের এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে।’
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলামের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল হক, খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান ও স্থানীয় সংসদ সদস্য জয়া সেনগুপ্তা।