হাওর অঞ্চলকে দুর্গত ঘোষণার দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ঢাকাস্থ ইটনা,অষ্টগ্রাম,মিঠামইন সমিতির

মোহাম্মদ জাকির হোসাইন : জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ঢাকাস্থ ইটনা,অষ্টগ্রাম,মিঠামইন উপজেলার উন্নয়ন ও কল্যাণ সমিতি উদ্যোগে কিশোরগঞ্জ জেলার হাওর এলাকাসহ প্লাবিত সকল হাওর অঞ্চলকে দূর্গত ঘোষণার দাবিতে আয়োজিত নাগরিক মানববন্ধন ।সুনামগঞ্জ-কিশোরগঞ্জ-নেত্রকোনা-হবিগঞ্জসহ যে সমস্ত হাওর এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত।কিশোরগঞ্জজেলার ছোট বড় ৩৫ টি হাওরের ৩৩ হাজার হেক্টর জমির ধান তলিয়ে গেছে। পুরো হাওরে ফসল হারানো কৃষকের কান্নায় এলাকার আকাশ বাতাস ভারি হয়ে ওঠেছে।জেলার হাওর অঞ্চলের মোট ১ লাখ ২৯ হাজার ৩২৬ হেক্টর আবাদী জমির মধ্যে ৫৭ হাজার ২৭ হেক্টর জমির বোরো ধান আগাম বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।ক্ষতিগ্রস্ত জমি থেকে ২ লাখ ১ হাজার ৩০৫ মেট্রিক টন চাল উৎপাদিত হতো যার আর্থিক মূল্য ৮০৫ কোটি ২২ লাখ টাকা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৭৫ জন কৃষক।তাদের কৃষি ঋণ মওকুফ করে নতুন করে আবার আবাদ করতে পারে সেই ব্যবস্থা কৃষি মন্ত্রণালয় যদি করে তাহলে দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা খুশী হবো। কিশোরগঞ্জ,সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা জেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় প্লাবিত হয়ে কৃষকদের স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। হাওর অঞ্চলের দুর্গত মানুষরা জীবন যুদ্ধে হিমশিম খাচ্ছে। অথচ এখনো তাদের পাশে কেউ নেই।এছাড়াও অবিলম্বে শস্যবীমা চালু, কর্মহীন ক্ষেতমজুরসহ গ্রামের গরিব মানুষের জন্য সারা বছর কাজ ও খাদ্যের নিশ্চয়তার । গত ২৭শে মার্চ থেকে আগাম বন্যায় প্লাবিত হতে থাকে দেশের হাওর অঞ্চল। পানির তোড়ে ভেঙে যায় একের পর এক বাঁধ। এর ফলে তলিয়ে গেছে ১৪২টি ফসলি হাওরের সব ফসল। গত সপ্তাহে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।একদিকে পাহাড়ি ঢলে ফসল তলিয়ে যাওয়া, আর অন্যদিকে ব্যাংক ঋণ, এনজিও ঋণ, মহাজনি ঋণসহ সকল প্রকার ঋণের বোঝা নিয়ে এলাকার মানুষ শরনার্থীর মতো পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তিনটি উপজেলার কৃষকের ঘরে কোনো ফসল নেই। অকাল বন্যায় গো-খাদ্যেরও সংকট দেখা দিয়েছে।ঢাকাস্থ ইটনা, অষ্টগ্রাম,মিঠামইন উপজেলা উন্নয়ন ও কল্যাণ সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব মোঃ সুলাইমান জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন বলেন,হাওরবাসীর দুর্যোগ নিয়ে তামাশা করবেন না , হাওরগুলোর পাকা ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এমন অবস্থার মধ্যেই গত ১৮ই এপ্রিল কানাডা সফরে গেছেন বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের চার শীর্ষ কর্মকর্তা। তাদের সঙ্গে কানাডা গেছেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং পরিকল্পনা কমিশনের আরো পাঁচ কর্মকর্তা। হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরে সিদ্ধান্ত নেয়ার মতো কোনো কর্মকর্তা না থাকায় হাওরের বিপর্যয়ে কার্যত কোনো ভূমিকাই রাখতে পারছে না সরকারের এই অধিদপ্তর। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মজিবুর রহমান, পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মো. নূরুল আমিন, পরিচালক (জলাভূমি) ড. মো. রুহুল আমীন এবং উপ-পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ নাজমুল আহসান ১৮ই এপ্রিল কানাডা সফরে গেছেন। তাদের সঙ্গে কানাডা গেছেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তিন জন এবং পরিকল্পনা কমিশনের দুই জনসহ মোট পাঁচ জন কর্মকর্তা। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের তালিকায় রয়েছেন অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা। বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের শীর্ষ চার কর্মকর্তা বিদেশ সফরে থাকায় নামমাত্র দায়িত্ব পালন করছেন উপ- পরিচালক (কৃষি ও মৎস্য) ড. মো. নূরুল আলম। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সবাই বিদেশে থাকায় শিক্ষা ক্যাডারের এ কর্মকর্তা নামেমাত্র দায়িত্ব পালন করছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপ- পরিচালক (কৃষি ও মৎস্য) ড. মো. নূরুল আলম বলেন, আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সরকারি প্রোগ্রামে বিদেশে গেছেন। কাজের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। এদিকে হাওর নিয়ে সারা দেশে যখন তোলপাড় চলছে তখন দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। নেতারা বলেন, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসেই হাওরাঞ্চলের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু ঠিকাদাররা কাজ শেষ না করেই সরকারি কর্মকর্তাদের যোগসাজশে টাকা উঠিয়ে নিচ্ছে। এসব ফসলরক্ষা বাঁধে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করায় তা ভেঙে কৃষকের ফসল তলিয়ে যাচ্ছে।দুর্বল বাঁধ নির্মাণের সঙ্গে জড়িত পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা, ঠিকাদারসহ দায়ীদের শাস্তি দাবি জানিয়েতিনিবলেন, এসব অসৎ কর্মকর্তা ও লোকরা প্রতিবছরই হাওরের সাধারণ মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। এদের বিচারের আওতায় না আনলে হাওরবাসীরাই এদের প্রতিহত করবে।
ইটনা,অষ্টগ্রাম,মিঠামইন উপজেলা উন্নয়ন ও কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি মোঃ নাসির উদ্দিন ভুইয়া মানববন্ধন বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে অত্যন্ত লজ্জাবোধ করছি। শাহ কামাল উনি একজন সচিব সরকারের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ে। কদিন আগে উনি সুনামগঞ্জে গিয়েছিলেন। একা নন, সঙ্গে ওনার মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রীও ছিলেন। ছিলেন আরও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা। গিয়েছিলেন ওনারা সেখানকার হাওর এলাকার ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা উপলব্ধি করতে, মানুষের কষ্ট-দুর্ভোগ নিজ চোখে দেখতে। সন্দেহ নেই, এটি একটি অতি উত্তম কর্ম।সুনামগঞ্জে গিয়ে তারা কতটুকু কি দেখেছেন, সেটা তারাই ভালো বলতে পারবেন। কিন্তু দেখাদেখি শেষে যে ব্রিফিংটা করলেন, সেটাই হলো সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। ব্রিফিংয়ে মন্ত্রী ছিলেন। তবে সচিবই যেন মূল বক্তা, তিনি যা কিছু বললেন তার কোনো তুলনা হয় না। তার সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ যেন ছিল ওই ‘দুর্গত এলাকা’ ঘোষণার দাবি নিয়ে। এই সচিব সাহেবের কথাই বলতে শুরু করেছিলাম লেখার একেবারে শুরুতে। ওনার নামই শাহ কামাল।শাহ কামাল সাহেব বললেন, ‘আমাদের দেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নামে একটা আইন আছে। এই আইনের ২২ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো এলাকাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করা যাবে, যদি সেই এলাকায় খাদ্যাভাব দেখা দেয় এবং জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি মরে যায়, এবং দেশে খাদ্য নেই বলে যদি ইউনিসেফ এবং ইউএন ডিক্লেয়ার করে, তাহলে সেই এলাকার প্রশাসন মন্ত্রণালয়কে জানাবে, ইনকোয়ারি করবে, করে জানাবে, তারপর মহামান্য রাষ্ট্রপতি সেই এলাকাকে দুর্গত এলাকা বলে ঘোষণা করবেন।’ আসলে এই অহেতুক কতগুলো সস্তা কথা বলা, যারা এসব বলে তারা না জেনে বলে, তাদের এ বিষয়ে কোনো জ্ঞানই নেই। শাহ কামাল সাহেব প্রমাণ করে দিলেন বন্যাউপদ্রুত হাওর অঞ্চলকে কোনোভাবেই ‘দুর্গত এলাকা’ বলার কোনো সুযোগ নেই। ভদ্রলোক আরও কিছু সময় পেলে হয়ত এটাও প্রমাণ করে দিতে পারতেন যে, বন্যা হলেও হাওরের মানুষের কোনো ক্ষতিই হয়নি! তবে সে সুযোগ তিনি পাননি। পাননি আসলে তারই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর কারণে। উনি যখন ওইসব জ্ঞানগর্ভ বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখন তার পাশেই বসে ছিলেন ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। তিনি যেন নতুন একটা পয়েন্ট মনে করিয়ে দিচ্ছেন, এমন ভঙ্গিতে বললেন, ‘ছাগল মরে নাই!’
এরপর আর কি লাগে। দ্বিগুণ উৎসাহে সচিব সাহেব বলতে লাগবেন, ‘এ পর্যন্ত আমাদের কাছে কোনো গরু মারা গেছে বা ছাগল মারা গেছে এমন তথ্যও আসে নাই!’অর্ধেক মানুষ মারা যায় নাই, ছাগল মারা যায় নাই, তাহলে দুর্গত এলাকা কি করে হলো? এর চেয়ে লাগসই প্রশ্ন কেউ কখনো শুনেছেন?
পাদটীকা সেদিন ফেসবুকে একজনের একটা স্ট্যাটাস দেখলাম। সচিব শাহ কামালের ছাগল-সংক্রান্ত এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তিনি জানতে চেয়েছেন, ‘কেন কোনো মৃত ছাগল পাওয়া গেল না?’জবাবটাও উনি নিজেই দিয়েছেন। ‘আসলে বন্যা শুরুর আগেই সব ছাগল ঢাকায় চলে গিয়েছিল সচিব হওয়ার জন্য, সে কারণেই কোনো মরা ছাগল পাওয়া যায়নি!আগাম বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে।
সহ-সভাপতি মোঃআজিজুল হক বক্তব্য দাবি করেন, ধান তলিয়ে যাওয়ায় এবার এক মুঠো ধানও কৃষক ঘরে তুলতে পারবে না উল্লেখ করে কৃষক-ক্ষেতমজুর নেতারা বলেন, আগামী কয়েকদিনে পানি কমলেও তলিয়ে যাওয়া ধান কৃষক ঘরে তুলতে পারবে না। কারণ এবার অপরিপক্ক অবস্থায় সমস্ত ফসল তলিয়ে গেছে। ফলে কৃষকরা সর্বশান্ত হয়ে পরেছে। তাই অবিলম্বে এসব হাওরাঞ্চলকে দুর্গত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে কৃষকসহ ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে।
কম দামে খাদ্য সরবরাহসহ ঋণের কিস্তির সব কার্যক্রম বন্ধ, সুদছাড়া নতুন ঋণের ব্যবস্থা, স্কুল-কলেজের বেতন মওকুফ, স্বাস্থ্য রক্ষায় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের নানামুখী কর্মসূচি নেওয়ার এ অবস্থায় হাওর অঞ্চলকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি , নতুন করে ঋণের ব্যবস্থা, পূর্বের ঋণের সুদ মওকুফ করা এবং পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রি, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার সাহায্য এবং কৃষি ভর্তুকি দিয়ে গ্রামের মানুষের মনে আশার সঞ্চার করতে হবে।
কর্মকর্তারা এসি রুমে জরিপ না করে সরেজমিনে গিয়ে জরিপ পরিচালনার জন্য আহবান জানান। জরুরী ত্রাণ সহায়তা হিসেবে পর্যাপ্ত চাল ও নগদ অর্থ বরাদ্দ দেয়া, বিশেষ ভিজিএফ/ভিজিডি কর্মসূচি চালু করা, ওএমএস চালু করা, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ১০ টাকা কেজি দরের চাল বিক্রয় কার্যক্রমে উপকারভোগী পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি করা, গৃহপালিত প্রাণীর জন্য বিনামূল্যে গোখাদ্য এবং ঔষধ সরবরাহ করা, আগামী বোরো মৌসুমের আগে কৃষি উপকরণ, সার, বীজ ও নগদ অর্থ সহায়তা করা, বিশেষ কাবিটা/কাবিখা কর্মসূচী চালু করা, কৃষি ঋণের সুদ মওকুফসহ আপদকালীন ঋণ আদায় কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা, এনজিও ঋণ আদায় কার্যক্রম আপদকালীন সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করাও দাবি জানান ।
সংগঠনের সভাপতি ঢাকাস্থ অষ্টগ্রাম,মিঠামইন উপজেলা উন্নয়ন ও কল্যাণ সমিতি আলহাজ্ব মোঃ সুলাইমান সভাপতিত্বে হিসাবে বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক এড, বিমল চন্দ্র রায়, সহ-সভাপতি মোঃ নাসির উদ্দিন ভুইয়া, সাংবাদিক রাজেন্দ্র চন্দ্র দেব মনটু, মোঃ আজিজুল হক মোঃ বিললাল হোসেন মোঃ কামরুল হাসান বাবু, ইটনা সমিতির সভাপতি শফিকুল ইসলাম মাননান,মিঠামইন সমিতির সভাপতি মশিউর রহমান চৌধুরী (মেজবাহ) অষ্টগ্রাম সমিতির সভাপতি আতাউর রহমান আরো অন্যরা দাবি জানান। মোহাম্মদ জাকির হোসাইন মোঃ বিললাল হোসেনএই মানবগোষ্ঠীর জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান ।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর