ঢাকা ০৬:৫৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে মেয়র সাক্কু

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৮:৫১:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ এপ্রিল ২০১৭
  • ২৫১ বার

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর বিরুদ্ধে সম্পদ গোপনের মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানার চিঠি ডাকযোগে কোতোয়ালি থানায় পৌঁছেছে বলে নিশ্চিত করেছেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পুলিশ কাজ করবে বলে তিনি জানান।

এদিকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরই আত্মগোপনে রয়েছেন সাক্কু। তার দুটি মোবাইল ফোন এবং স্ত্রীর মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া কুমিল্লার নানুয়া দীঘির পাড়ের বাড়িতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে এই মামলায় সাক্কু আগামী ২৩ এপ্রিলের মধ্যে হাইকোর্ট থেকে জামিন নেওয়ার চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত সহকারী কবির।

কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘তিন দিন ধরে মেয়র সাক্কুর সঙ্গে আমার যোগাযোগ নেই। তবে আমি জেনেছি, আগামী দুই-এক দিনের মধ্যেই তিনি উচ্চ আদালতে রিট করবেন।’

এদিকে জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা টিপু বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সাক্কু ভাইয়ের বাসভবনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনও সদস্য আসেনি, তাকে কোনও ধরনের হয়রানি করা হয়নি। মামলাটি আইনজীবীদের মাধ্যমে আগামী ২৩ এপ্রিল আদালতে পেশ করা হবে।’

এদিকে সদ্য নির্বাচিত মেয়র সাক্কুকে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় ঢাকার সিনিয়র বিশেষ জজ আদালত থেকেই জামিন নিতে হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা জেলা জজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি তাপস কুমার পাল। তিনি বলেন, ‘এর আগে এই মামলায় হাইকোর্ট থেকে সাক্কু জামিন নিয়েছেন, এ বিষয়ক একটি ফটোকপি মামলার নথিতে আছে। কিন্তু যে প্রক্রিয়ায় থাকার কথা সেভাবে নেই। তাছাড়া জামিন পেলে আদালতে আর আসতে হবে না এমন নির্দেশনা নেই।’

ঢাকা জেলা জজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি আরও বলেন, ‘সাক্কু জামিনের সঠিক ব্যবহার করতে পারেননি। তাকে এখন ঢাকার সিনিয়র বিশেষ জজ আদালত থেকেই জামিন নিতে হবে। আদালত যদি জামিন না দেন তাহলে উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ থাকবে।’

এছাড়া কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের সময় জমা দেওয়া হলফনামায় তথ্য গোপন করেছেন বলে সরকারি অতিরিক্ত পিপি তাপস কুমার পাল যে অভিযোগ করেছেন সেই প্রসঙ্গে সাক্কুর ভাই আইনজীবী কাইমুল হক রিংকু বলেন, ‘হলফনামায় ওই মামলার তথ্য ও ফলাফল দেওয়া আছে। নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটেও আছে হলফনামা। চাইলে যে কেউ দেখতে পারে। এখানে তথ্য গোপনের অভিযোগ সঠিক নয়।’

এদিকে সাক্কুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে কুমিল্লার জনসাধারণের মধ্যে। অনেকেই মনে করেন এর পেছনে আছে রাজনৈতিক কারণ। সাক্কু সিটি করপোরেশনে থাকলে তার উন্নয়নমূলক কাজগুলো সমান গতিতে চলার সম্ভাবনা ছিল, তবে তা এখন অনেকাংশে বাধাগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ। নির্বাচনের আগে সাক্কুও মিডিয়াকে দেওয়া বক্তব্যে উল্লেখ করেন, তাকে যেন মামলা দিয়ে হয়রানি না করা হয়।

মেয়র সাক্কুর মামলা ও গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রসঙ্গে শহর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ জসিম উদ্দিন বলেন, ‘সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে পরাজিত করে মেয়র সাক্কু বিএনপি সমর্থিত হয়েও বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। এজন্য সরকার ষড়যন্ত্র করে তাকে মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।’
এ ঘটনায় জেলা বিএনপি কোনও পদক্ষেপ নেবে কিনা জানতে চাইলে আলহাজ জসিম উদ্দিন আরও বলেন, ‘জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতা রাবেয়া চৌধুরী ও আমিনুর রশীদ ইয়াসিনসহ সব নেতাকর্মীর আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

প্রসঙ্গত, ৪ কোটি ৫৭ লাখ ৭১ হাজার ৯৩৩ টাকার আয় বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ১ কোটি ১২ লাখ ৪০ হাজার ১২০ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগ ওঠে মনিরুল হক সাক্কুর বিরুদ্ধে। এ কারণে ২০০৮ সালের ৭ জানুয়ারি ঢাকার রমনা থানায় দুদকের কুমিল্লা শাখার সহকারী পরিচালক শাহীন আরা মমতাজ বাদী হয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের ২০০৪ সালের ২৬ (২) ও ২৭ (১) আইনে এবং দণ্ডবিধির ১০৯ জরুরি বিধিমালার ২০০৭-এর ১৫ (ঘ) ৫ ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। ওই মামলায় অভিযোগপত্র গ্রহণ করে গত ১৮ এপ্রিল সাক্কুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ও সম্পদ জব্দের আদেশ দিয়েছেন ঢাকার সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতের বিচারক কামরুল হোসেন মোল্লা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে মেয়র সাক্কু

আপডেট টাইম : ০৮:৫১:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ এপ্রিল ২০১৭

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর বিরুদ্ধে সম্পদ গোপনের মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানার চিঠি ডাকযোগে কোতোয়ালি থানায় পৌঁছেছে বলে নিশ্চিত করেছেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পুলিশ কাজ করবে বলে তিনি জানান।

এদিকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরই আত্মগোপনে রয়েছেন সাক্কু। তার দুটি মোবাইল ফোন এবং স্ত্রীর মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া কুমিল্লার নানুয়া দীঘির পাড়ের বাড়িতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে এই মামলায় সাক্কু আগামী ২৩ এপ্রিলের মধ্যে হাইকোর্ট থেকে জামিন নেওয়ার চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত সহকারী কবির।

কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘তিন দিন ধরে মেয়র সাক্কুর সঙ্গে আমার যোগাযোগ নেই। তবে আমি জেনেছি, আগামী দুই-এক দিনের মধ্যেই তিনি উচ্চ আদালতে রিট করবেন।’

এদিকে জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা টিপু বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সাক্কু ভাইয়ের বাসভবনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনও সদস্য আসেনি, তাকে কোনও ধরনের হয়রানি করা হয়নি। মামলাটি আইনজীবীদের মাধ্যমে আগামী ২৩ এপ্রিল আদালতে পেশ করা হবে।’

এদিকে সদ্য নির্বাচিত মেয়র সাক্কুকে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় ঢাকার সিনিয়র বিশেষ জজ আদালত থেকেই জামিন নিতে হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা জেলা জজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি তাপস কুমার পাল। তিনি বলেন, ‘এর আগে এই মামলায় হাইকোর্ট থেকে সাক্কু জামিন নিয়েছেন, এ বিষয়ক একটি ফটোকপি মামলার নথিতে আছে। কিন্তু যে প্রক্রিয়ায় থাকার কথা সেভাবে নেই। তাছাড়া জামিন পেলে আদালতে আর আসতে হবে না এমন নির্দেশনা নেই।’

ঢাকা জেলা জজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি আরও বলেন, ‘সাক্কু জামিনের সঠিক ব্যবহার করতে পারেননি। তাকে এখন ঢাকার সিনিয়র বিশেষ জজ আদালত থেকেই জামিন নিতে হবে। আদালত যদি জামিন না দেন তাহলে উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ থাকবে।’

এছাড়া কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের সময় জমা দেওয়া হলফনামায় তথ্য গোপন করেছেন বলে সরকারি অতিরিক্ত পিপি তাপস কুমার পাল যে অভিযোগ করেছেন সেই প্রসঙ্গে সাক্কুর ভাই আইনজীবী কাইমুল হক রিংকু বলেন, ‘হলফনামায় ওই মামলার তথ্য ও ফলাফল দেওয়া আছে। নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটেও আছে হলফনামা। চাইলে যে কেউ দেখতে পারে। এখানে তথ্য গোপনের অভিযোগ সঠিক নয়।’

এদিকে সাক্কুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে কুমিল্লার জনসাধারণের মধ্যে। অনেকেই মনে করেন এর পেছনে আছে রাজনৈতিক কারণ। সাক্কু সিটি করপোরেশনে থাকলে তার উন্নয়নমূলক কাজগুলো সমান গতিতে চলার সম্ভাবনা ছিল, তবে তা এখন অনেকাংশে বাধাগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ। নির্বাচনের আগে সাক্কুও মিডিয়াকে দেওয়া বক্তব্যে উল্লেখ করেন, তাকে যেন মামলা দিয়ে হয়রানি না করা হয়।

মেয়র সাক্কুর মামলা ও গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রসঙ্গে শহর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ জসিম উদ্দিন বলেন, ‘সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে পরাজিত করে মেয়র সাক্কু বিএনপি সমর্থিত হয়েও বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। এজন্য সরকার ষড়যন্ত্র করে তাকে মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।’
এ ঘটনায় জেলা বিএনপি কোনও পদক্ষেপ নেবে কিনা জানতে চাইলে আলহাজ জসিম উদ্দিন আরও বলেন, ‘জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতা রাবেয়া চৌধুরী ও আমিনুর রশীদ ইয়াসিনসহ সব নেতাকর্মীর আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

প্রসঙ্গত, ৪ কোটি ৫৭ লাখ ৭১ হাজার ৯৩৩ টাকার আয় বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ১ কোটি ১২ লাখ ৪০ হাজার ১২০ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগ ওঠে মনিরুল হক সাক্কুর বিরুদ্ধে। এ কারণে ২০০৮ সালের ৭ জানুয়ারি ঢাকার রমনা থানায় দুদকের কুমিল্লা শাখার সহকারী পরিচালক শাহীন আরা মমতাজ বাদী হয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের ২০০৪ সালের ২৬ (২) ও ২৭ (১) আইনে এবং দণ্ডবিধির ১০৯ জরুরি বিধিমালার ২০০৭-এর ১৫ (ঘ) ৫ ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। ওই মামলায় অভিযোগপত্র গ্রহণ করে গত ১৮ এপ্রিল সাক্কুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ও সম্পদ জব্দের আদেশ দিয়েছেন ঢাকার সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতের বিচারক কামরুল হোসেন মোল্লা।